উর্দু কবি মাহমুদ দরবেশ লিখেছিলেন “...আমার মাতৃভূমিকে কে বিক্রি করেছে, তা আমি জানি না। আমি শুধু দেখেছি, এর দাম কে পরিশোধ করছে।” হামাস আর ইজরায়েলের ভেতরকার লড়াই আসলে ঠিক তেমনই।
উর্দু কবি মাহমুদ দরবেশ লিখেছিলেন “...আমার মাতৃভূমিকে কে বিক্রি করেছে, তা আমি জানি না। আমি শুধু দেখেছি, এর দাম কে পরিশোধ করছে।” হামাস আর ইজরায়েলের ভেতরকার লড়াই আসলে ঠিক তেমনই। দুই সংগঠন, তার দুই বিরাট শক্তি। তারই মাঝে 'উলুখাগড়া'-র মতো অসহায় হয়ে রয়েছে গাজ়া ভূখণ্ড। এই উপত্যকা থেকে ইজরায়েলে ‘অপারেশন আল আকসা বন্যা’ শুরু করেছে হামাস গোষ্ঠী। ২০০৭ সাল থেকে তারা গাজ়া শাসন করছে। এর প্রধান সমর্থক ইরান, কাতার এবং তুরস্ক।
অন্যদিকে, পৃথিবীর মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিকাংশ দেশ (পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, কাতার, তুরস্ক) ইজরায়েলকে একটা স্বতন্ত্র ‘দেশ’ হিসেবে মানতে রাজি নয়। ‘হামাস’-ও ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না, যদিও তারা ইজরায়েলের সাথে পর্যায়ক্রমে চুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি করেছে। ২০০৫ সালে, ইজরায়েল একতরফাভাবে তার সমস্ত বসতি এবং সৈন্যদের প্রত্যাহার করে গাজ়া উপত্যকায় সামরিক স্থাপনাগুলি ভেঙে দিয়েছিল। যদিও, গাজ়ার পশ্চিম তীরে বছরের পর বছর ধরে ইজরায়েলি বসতির সম্প্রসারণ হয়ে এসেছে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের চূড়ান্ত সীমানা নিয়ে এখনও আলোচনা করা হয়নি। ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র হল একটি আইনানুগ সার্বভৌম রাষ্ট্র, বিশ্বের ১৩০টি রাষ্ট্র একে স্বীকৃতি দিয়েছে। গাজ়া স্ট্রিপের পরিমাপ ৩৬৫ বর্গকিমি এবং ২ মিলিয়ন মানুষ এখানে বাস করেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘন স্থানগুলির মধ্যে একটি।
২০০৭ সালে হামাস গাজ়ার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং এর পর থেকে ইজরায়েলের সঙ্গে ৩টি সংঘর্ষ হয়েছে, সর্বশেষটি হয়েছে ২০১৪ সালে। ২০২৩ সালের হামলায় দক্ষিণ ও মধ্য ইজরায়েলে ব্যাপক রকেট হামলা হয়েছে। কয়েক ডজন বন্দুকধারী আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথ দিয়ে ইজরায়েলে অনুপ্রবেশ করেছে এবং ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) সৈন্যদের সঙ্গে ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছে, আইডিএফ হামাসের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সোর্ডস অফ আয়রন’ শুরু করেছে। এই যুদ্ধে অবশ্যই শয়ে শয়ে বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন, বহু ইজরায়েলি সৈন্যও প্রাণ হারিয়েছেন বা বন্দি হয়েছেন। এই বছর এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ২৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আর আগের ফিলিস্তিনি হামলায় প্রায় ৩২ জন ইজরায়েলি এবং বহু বিদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন।
হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের সামরিক ও শাসন ক্ষমতা ধ্বংস করার জন্য প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর সরকারের কাছে আরও বেশি শক্তি দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। ইজরায়েলি বিমান হামলায় ইতিমধ্যেই গাজ়া উপত্যকায় যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আরও অত্যধিক ক্ষয়ক্ষতি হতে চলেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। এই পালটা হামলা সারা বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে উস্কানি দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এরকম ধরনের ভুক্তভোগী, মৃত বা নৃশংসতার বিরক্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যা, সমগ্র বিশ্বের মানুষের হাড় হিম করে দিতে পারে। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হলেও হাজার হাজার সাধারণ ইজরায়েলি ও ফিলিস্তিনি মানুষদেরই হয়তো ‘মাতৃভূমি’-র মূল্য চোকাতে হবে। ঠিক যেমন, উর্দু কবি মাহমুদ দরবেশ লিখেছিলেন “...আমার মাতৃভূমিকে কে বিক্রি করেছে, তা আমি জানি না। আমি শুধু দেখেছি, এর দাম কে পরিশোধ করছে।”