২৪ ঘণ্টার ভারত বনধে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে। রাজ্যকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিল মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ আগামী শুক্রবার এ নিয়ে রাজ্যকে রিপোর্ট পেশেরও নির্দেশ দিয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, বেসরকারিকরণ সহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিবাদে বুধবার গোটা দেশে ২৪ ঘন্টার সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে শ্রমিক, কৃষক সংগঠন, বাম, কংগ্রেস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল। কলকাতা হাইকোর্ট ছাড়া বনধের বিরোধিতা করে এর আগেও সুপ্রিম কোর্ট সহ দেশের অন্যান্য হাইকোর্টেও একাধিক জনস্বার্থ মামলা হয়েছে৷ প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বনধকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলেছে আদালত।
আগামীকাল ভারত বনধের প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এদিন বিষয়টি উল্লেখ করেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার৷ বনধ নিয়ে এর আগে তাঁরই করা মামলার কথা এদিন কোর্টে তুলে ধরেন তিনি। রমাপ্রসাদবাবু বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী বনধ অসাংবিধানিক। তা সত্ত্বেও দেশজুড়ে বনধ ডাকা হয়েছে। জয়েন্ট এন্ট্রান্স সহ একাধিক পরীক্ষা রয়েছে। ফলে আগামীকালের বনধের জেরে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হতে পারে। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রকেও বিষয়টি দেখতে বলেছে৷
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ-সহ একাধিক ইস্যুতে ৮ জানুয়ারি দেশজুড়ে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিটু-ইনটাক-সহ কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। বাম দলগুলির সঙ্গে রাজ্যে এই ধর্মঘটকে সমর্থন করছে প্রদেশ কংগ্রেস। সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী বিভিন্ন সংগঠন এই ধর্মঘটকে সমর্থন করছে। জেএনইউ ইস্য়ুতে বামপন্থী ছাত্রদের পাশে দাঁড়ালেও বনধকে সমর্থন করলেন না মুখ্যমন্ত্রী।
অতীতে বাম আমলে বনধকেই সংস্কৃতি বানিয়ে নিয়েছিল বামেরা। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে রাজ্য়ে বহুবার বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু প্রতিবারই কর্মদিবস নষ্টের বিরোধিতা করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী। এবারও সেই একই পথে হাঁটলেন তিনি। ইতিমধ্য়েই মোট ১২ দফা দাবিতে বাম-ডান একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারশনগুলি সারা দেশে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কিন্তু বাংলায় সেই বনধ বা ধর্মঘট হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
ইতিমধ্য়েই বনধকে কেন্দ্র করে সমস্ত সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে নবান্ন থেকে। কাজে যোগ না দিলে বেতন কাটা যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে নবান্ন। ইস্যু সমর্থন করলেও, ধর্মঘট কোনওভাবে মানা যাবে না বলেই গঙ্গাসাগর থেকে সাফ জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার গঙ্গাসাগর পরিদর্শনে যান মমতা। সেখানেই তিনি বলেন, বাংলায় কোনও বনধ হচ্ছে না। পাশাপাশি নবান্ন থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে,যে সমস্ত কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না, তাঁদের একদিনের বেতন কাটা হবে । সেইসঙ্গে কর্মজীবন থেকে একদিন ছেদ পড়বে। এছাড়াও কর্মচারীরা বনধের আগের বা পরের দিন ক্যাজুয়াল লিভ নিতে পারবেন না।