কীভাবে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় চাপ দিতেন বেআইনি নিয়োগে সই করতে, পর্দা ফাঁস করেছিলেন চিত্তরঞ্জন মণ্ডল

তৃণমূলে থাকাকালীনই এসএসসির চেয়ারম্যান পদে তাঁকে চাপ দেওয়া হত বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। তিনি বিজেপি-ঘেঁষা হয়েছেন বলেই মিথ্যে অভিযোগ তুলছেন, দাবি কুণাল ঘোষের। 

Sahely Sen | / Updated: Jul 25 2022, 12:18 PM IST

স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে হাইকোর্ট ও ইডি থেকে শুরু করে বঙ্গ রাজনীতির আনাচে কানাচে তোলপাড়। এরই মধ্যে শাসক দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে ফেলেছেন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল।

রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর SSC’র প্রথম চেয়ারম্যান হয়েছিলেন এই চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। চাকরি করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁর ওপর চাপ আসছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি, এই চাপ এতটাই প্রবল হয়ে পড়ে যে, শেষমেশ তাঁকে ইস্তফা দিয়েই ক্ষান্ত দিতে হয়। শাসক দলের বিরুদ্ধে এ এক বিস্ফোরক দোষারোপ। 

কিন্তু প্রশ্ন হল, এসএসসি তো সরকারের অধীনে থাকা একটি স্বশাসিত সংস্থা। তার চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষমতার বলে শিক্ষামন্ত্রীও চাপ সৃষ্টি করতে পারেন না। তাহলে তাঁর ওপর চাপ এসেছিল কোথা থেকে? এর উত্তরে চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের বক্তব্য, সম্পূর্ণ স্বশাসিত এটিকে বলা যায় না, কারণ এর অন্দরের নিয়ম-নীতি তৈরি করে রাজ্য সরকারই, কার্যকলাপে বরাদ্দ অর্থও খরচ করে রাজ্য সরকার। স্বাধীনতা থাকে শুধুমাত্র নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়েই ।  বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল, অনেকেই মনে করে এই চেয়ারম্যানের পদটি একটি রাজনৈতিক নিয়োগ, কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে এটি একটি মনোনীত পদ। তাই, দৃষ্টিকটু হলেও এখানে সরকারের ইচ্ছেমতো কিছুটা হলেও করা হয়ে থাকে। কলেজের ভিসি নিয়োগের মতো এই কাজটি নয়। তাই, সরকারের মনোনীত পদ বলে যে দল সরকার গঠন করেছে সেই দলেরও খানিকটা আদেশ মানতে হয়। যে সময়ে আমি এসএসসির চেয়ারম্যান ছিলাম, সেসময়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব। 

তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত তিনি তৃণমূলেই ছিলেন, তার পরে তিনি এসএসসির চেয়ারম্যান হন। মনোনীত হয়ে পদে আসার কারণে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, যিনি রাজ্যের একজন মন্ত্রীও ছিলেন, তাঁর নির্দেশ মেনে কাজ করা ছাড়া আর অন্য কোনও পথ থাকে কি? 

কিন্তু তাহলে তিনি কোন নেতা-মন্ত্রীদের কথা বলতে চেয়েছিলেন যারা তাঁর ওপরে চাপ সৃষ্টি করত? এর উত্তরে তিনি বলেন, যিনি চেয়ারম্যান থাকেন, তাঁর দায়িত্ব হল সেলফ চেকিং। অর্থাৎ, ভয়, ভীতি, অথবা লোভ, কোনও অবস্থাতেই নতি স্বীকার না করা। পরীক্ষা, নম্বর চেকিং, নম্বরের স্বচ্ছতা, পক্ষপাতদুষ্টতা বিহীন ইন্টারভিউ, ইত্যাদি সমস্ত পরিচ্ছন্নতা মেনে একটা সম্পূর্ণ নিয়োগ পদ্ধতি। এই পরিচ্চন্নতা মানার পরেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বড় মন্ত্রীরা সদর্পে বলতেন, “আমিই মন্ত্রী, আইন আবার কী? আমিই আইন।” পার্থবাবু আমাকে নির্দেশ দিতেই পারেন, আমি নাও মানতে পারতাম, কিন্তু আমি দুর্বল ছিলাম, এই কারণে যে, আমি এই শাসকদলেরই মনোনীত প্রার্থী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও চেষ্টা করেছিলাম কথা বলার, কিন্তু তিনি ব্যস্ত ছিলেন। 

তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সুখ্যাতি করে চিত্তরঞ্জন মণ্ডল বলেন যে, তিনি বলেছিলেন, আপনি একেবারে ছেড়ে চলে যাবেন না, আমি চেষ্টা করছি আপনাকে অন্য কোনও পদে নিয়োগ করার। তবে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম নিতেই তাঁর গলায় আক্ষেপের সুর, ‘‘দিন দিন চাপ বাড়তে লাগল। সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করিনি। এক দিন মাননীয় শ্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ডাকলেন। বললেন যে, আপনি ছেড়ে দিন। তখন তিনি তৃণমূলের মহাসচিব ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন, প্রচুর দোর্দণ্ডপ্রতাপ। সহজ ভাবেই বলতে পারতেন। তা হয়নি। তিনি অত্যন্ত দুর্বব্যবহার করেন। আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। দুঃখ নিয়েই আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’ 

Read more Articles on
Share this article
click me!