কৃত্তিকার আত্মহত্যা লক্ষ শিশুর হয়ে প্রশ্ন, বাবা‌-মা শুনছেন

  • তিন মাস ধরেই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছিল কৃত্তিকা
  • কেন কেউ টের পেল না
  • এই মৃত্যু প্রশ্ন তুলছে অনেক
arka deb | Published : Jun 22, 2019 7:15 AM IST / Updated: Jun 22 2019, 01:21 PM IST

স্কুলের শৌচাগারে আত্মহত্যা করেছে কৃত্তিকা পাল। জিডি বিড়লা স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল কৃত্তিকা। মৃত্যুর আগে সে বাথরুম থেকেই তিন পাতা সুইসাইড নোট লেখে। হাতের শিরা কাটার চেষ্টায় সে ব্যবহার করে নিজের শার্পনার (পেনসিল কাটার ধারালো ছুরি)। গোটা  কাজে কোনও ফাঁক রাখতে চায়নি কৃত্তিকা। মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে সে প্লাস্টিক দিয়ে মুখ বেঁধে নেয়।মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও রিপোর্ট দেননি চিকিৎসকেরা। তবে হ্যাঁ,বেঁচে থাকার অদম্য প্রাণশক্তিকে সে ব্যবহার করেছে মরণকে কাছে ডাকতে। মৃত্তিকার এই হাড় হিম করা মৃত্যু আমাদের বড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রশ্নগুলি রাখা যাক-

১  কৃত্তিকার মৃত্যুতে প্রথম অভিযোগের আঙুল দিয়ে ওঠে জি ডি বিড়লা স্কুলের দিকে। অতীতেও যৌন হেনস্থার মতো ঘটনা এই স্কুলের নাম জড়িয়েছে। আর পাঁচটা ঘর স্কুল এর তুলনায় অনেক বেশি এডমিশন ফি দিয়ে বাবা-মা যখন স্কুলে পাঠাচ্ছেন ছাত্রীদের, বাবা মা কি সন্তানের বাড়তি নিরাপত্তা আশা করবেন না? স্কুলের ভিতর মনস্তত্ত্ববিদ রাখা হয়। তাঁরা কোথায়? কেন ‌তাঁদের পেল অসহায় শিশুটি?

২ প্রশ্ন উঠছে পরিবারের ভূমিকা নিয়েও। শিশুকে লেখাপড়ার চাপে রাখা বাবা মা তার মনের তল পেলেন না এতটুকুও? 

৩ উৎকর্ষ স্পর্শ করার যে শ্রম আর শিশুর সাধ্য, তার ফারাকই কি শিশুদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে?

উত্তর খুঁজতে দারস্থ হলাম মনস্তত্ববিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গোটা ঘটনায় অনুত্তমাদেবীও স্তম্ভিত। তিনি মনে করেন শিশুদের অস্তিত্বও বিস্তার হচ্ছে না। শিশুরা কাউকেই পাশে পাচ্ছে না। স্কুল এবং পরিবারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনি, বলছেন, 'নন জাজমেন্টাল কানগুলিই শিশুদের জন্যে আর নেই।'  



আসলে পরিবার, স্কুল, শিশুর নিজস্ব বন্ধুরা, এই প্রতিটি বর্গকে আলাদা আলাদা প্রশ্ন না করে প্রশ্ন করতে হয় গোটা সিস্টেমকে। এমন একটা ব্যবস্থা যার মধ্যে প্রতিটি বাচ্চাকেই আতঙ্ক নিয়ে বড় হতে হচ্ছে। তাদের বেঁচে থাকার মধ্যে কেরিয়ার ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও ভাল লাগাকে বড় করে দেখার মতো জায়গাই তৈরি হয় না। নিউক্লিয়ার পরিবারে প্রতিটি শিশু ভূতের মত একা। ঠাকুমা-দাদুর সঙ্গে সময় কাটানো, বিকেলে পার্কে বেড়াতে যাওয়া আজ তা‌দের কাছে দূরতম স্বপ্ন। কেরিয়ারের দৌড়ে পাশের বন্ধুটিকেও যে আর শিশু বন্ধু না ভেবে আরেকজন প্রতিযোগী দৌড়বাজই ভাবছে, তার প্রমাণ তিনমাস গুমরে কেঁদে, বিনিদ্র রাত্রি যাপন করে এই চিরঘুমে ঢলে পড়া উজ্জ্বল ছাত্রী কৃত্তিকাই। তার কষ্টের কথা সে কাউকে বলেনি। 

মনোবিদরা বলছেন, এখান থেকে শিশুকে তুলে আনতে গেলে প্রথমেই তাকে বোঝাতে হবে যে তার বেঁচে থাকাটি শুধুই কেরিয়ারসর্বস্ব নয়। আরও অনেকগুলি যাত্রাপথ তার জীবনে রয়েছে।রয়েছে অনেকগুলি সত্তাকে আদরে যত্নে গড়ে তোলার কাজ। অনুত্তমাদেবীই কথার ফাঁকে অভিযোগ করলেন, 'বাবা মায়েরা পাশে থাকার জায়গায় অনেক সময় ডায়েরিটা পড়ে ফেলা, জোর করে চাপ দিয়ে কিছু বলানোর মত গর্হিত কাজগুলিও করেন। কিন্তু শিশুকে কেউ আশ্বাসটুকুই দিতে পারেন না, তোমার দরকারে আমরা আছি।'

মনোবিদরা বলছেন, সাংবাদিকরা খবর তৈরি করছেন, অন্য অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন নিজের সন্তানের কথা ভেবে। কিন্তু এর থেকেও বড় সত্যি 'পরীক্ষা'। পরীক্ষা এগিয়ে এলেই সবাই সব ভুলে যাবে। কৃত্তিকার মতোই তাজা প্রাণ যাওয়ার আগে আমাদের আরও বেশি লজ্জিত করে যাবে। কৃত্তিকা ভাল থেকো, এইটুকু বলারও মুখ নেই আমাদের। কৃত্তিকার মৃত্যু কি আত্মহত্যা নাকি সিস্টেম তাকে খুন করল?

Latest Videos

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari: হিন্দুদের ভোটার আইকার্ড কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র, এ কী বলছেন শুভেন্দু
'Uttar Pradesh-এর মতো সুশাসন আনবো West Bengal-এ' Suvendu Adhikari- র চরম প্রতিশ্রুতি #shorts
পুরো রুট বলেদিলেন! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা! শুভেন্দুর কথায় অশনি সংকেত | Suvendu Adhikari
Daily Horoscope: ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এই ব্যক্তিদের দিনটি ভালো যাবে, জেনে নিন আজকের রাশিফল
Suvendu Adhikari Live : শতবর্ষে অটল বিহারী বাজপেয়ী, শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন শুভেন্দু অধিকারীর