কলকাতা থেকে উধাও ৬০-এরও বেশি প্রজাতির পাখি, গত কয়েক বছরে মৃত্য়ু পরিবেশের

Published : Jun 05, 2020, 05:45 PM IST
কলকাতা থেকে উধাও ৬০-এরও বেশি প্রজাতির পাখি, গত কয়েক বছরে মৃত্য়ু পরিবেশের

সংক্ষিপ্ত

টালি-ভাটা আর কুয়ো তৈরির চারি পোড়াতে খেজুর গাছ সাফ পাখিদের খাবার ছিল রসের লোভে আসা কত রকম পোকা মাকড় আম, জাম, বট অশ্বত্থ, পিপুল, ডুমুর গাছ আর ফল ছিল পাখির আশ্রয় ও খাদ্য নগরায়নের কারণে পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় ৬০ প্রজাতির বেশি পাখি কলকাতা থেকে উধাও 

কলকাতা আর তার আশেপাশের আকাশ থেকে ৬০টিরও বেশি প্রজাতির পাখি উধাও হয়ে গিয়েছে। রাক্ষুসে কাক, বড়ো হাড়গিলে, রেড ব্রেস্টেড ম্যারগান সার, রাজহাঁস, কালো ঈগল, ফিয়ার, সাকসাল, বালিহাঁস এসব নাম আর শোনা যায় কি?

নোংরা-আবর্জনা খেয়ে শহর পরিষ্কার রাখাই ছিল যাদের কাজ। কলকাতার ঝাড়ুদার এ নামেই পরিচিত ছিল যারা, কলকাতা পুরসভার প্রথম প্রতীক বড়ো হাড়গিলে কি আর দেখতে পান? আকাশছোঁয়া বাড়িগুলির কারণে ফি বছর কমছে আলিপুর চিড়িয়াখানার অতিথি।  

পাকা খেজুর আর রসের লোভে বছরের বেশ কয়েক মাস ফিঙে, বুলবুলি, বাঁশপাতি, গাংশালিক-সহ আরও কত পাখি ওড়াউড়ি করত। খাবার হিসাবে ওদের পেটে ঢুকত রসের টানে আসা মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল, পিঁপড়ে। কলকাতা-সহ আশপাশ থেকে টালি-ভাটা আর কুয়ো তৈরির চারি পোড়াতে খেজুর গাছ সাফ হয়ে গিয়েছে। টান পড়েছে পাখিদের খাবারে।

খাবার আর আশ্রয় এই দু'য়ের ভরসা বট অশ্বত্থ, পিপুল, ডুমুর। সকাল থেকে সন্ধে, কত রকমের পাখি আনাগোনা করত ওই সব গাছে। কোকিল, ফটিকজল, রামগঙ্গা, কাঠঠোকরা, বসন্তবৌরি, গাংশালিক, দেশি পাওয়ে, কানাকুয়ো, হরিয়াল, ঘুঘু খাবারের জন্যই এসে বসত এই সব গাছে। গাছগুলির সঙ্গে পাখিরাও উধাও।

প্রচুর আম-জাম গাছ ছিল কলকাতাতে। ডালে লাল পিঁপড়ে, কাঠ পিঁপড়ে, পোষকপোকা, শ্যামাপোকা, লেদাপোকা খেতে দিনের বেলা কত রকম পাখি ডালের উপর ওত্‍ পেতে বসে থাকত। কেবল গাছ কাটা নয়, বিষ তেল স্প্রে করায় পোকা নিধনের পাশাপাশি পাখিরাও উধাও।  

গাছের পাকা পেঁপে, পেয়ারা খেতে কত ধরনের পাখি উড়ে আসত মধ্যবিত্তের এক চিলতে বাগানে। এখন মধ্যবিত্ত আর বাগান করে না। আকাশশেওড়া, বুলবুলি, সাহেব বুলবুলি জাতের পাখিদের বড় প্রিয় ছিল ওইসব ফল। এখন সে সব গাছও নেই পাখিরাও নেই।

ব্যাপক হারে কীটনাশকের ব্যবহারে পোকামাকড় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় যেমন খাবার-দাবারের অভাব ঘটেছে, অন্য দিকে কীটনাশকের দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়ায় বহুপাখির ডিমের খোসা এত পাতলা হয়ে গেছে যে তা দিতে গেলেই ডিম ভেঙে যায়। পাখিদের বংশবিস্তারেও ঘটছে ব্যাঘাত।

শহর কলকাতা ও আশপাশের ঝিল-বিল-নালা-নর্দমা অধিকাংশ মজে গিয়েছে। যেগুলো বেঁচে আছে সেগুলোর সংস্কার হয় না। মাছের সংখ্যাও কমে গেছে। বর্ষায় জল জমলে সব মাছ আমরাই ধরে নি। পাখিদের ভাগ্যে কিছু জোটে না। ফলে এ শহরে তাদের বেঁচে থাকা দায়। কোঁচবক, গোবক, ছোট করচে বক, পানকৌড়ি, ডাহুক, মাছরাঙা, জলপিপি, বাটান, কাদাখোঁচা, পানপায়রা প্রভৃতি পাখির জীবনযাপন সংকটের মুখে। কাদাশামুকখোল, গগনবেড়, সারস, কাস্তেচোরা প্রমুখদের আর দেখা মেলে না। যে দু-চার প্রজাতির পাখি চোখে পড়ে সেগুলিও খুব তাড়াতাড়ি উধাও হয়ে যাবে।

প্রোমোটারদের সৌজন্যে কলকাতা ও তার আশাপাশে ভাঙা পাঁচিল, পোড়োবাড়ি, পুরোনো কড়িবরগা-কার্নিশযুক্ত বাড়ি এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর সেই জন্যই গোলপায়রা, আলবিল, পেঁচা, ঘুঘু, ঝুটশালিক, দেশি পাওয়ে, দোয়েল সহজে চোখে পড়ে না। শহরে বাসা তৈরির পছন্দসই জায়গা হারিয়ে যাওয়ায় ওই সব পাখিরা হারিয়ে গেছে।

আগের মতো শালিক-চড়ুই কি আর চোখে পড়ে? যে হারে বনভূমি উচ্ছেদ, জলাভূমি বোঁজানো, গাছকাটা পড়ছে তার চেয়ে ঢের গুণ বেশি বেড়েছে মানুষ, ঘরবাড়ি, হাটবাজার, যানবাহন, আলোর তাণ্ডব, শব্দবিভীষিকা। নির্জনতা, নিরাপত্তা নেই, খাবারের অভাবে প্রথমে সংখ্যায় কমতে থাকে পাখি, তার পর একদিন লোপ পেয়ে যায়। এ ভাবেই কলকাতা ও তার আশপাশ থেকে লুপ্ত হয়ে গিয়েছে কমপক্ষে ৬০ প্রজাতির পাখি।

বছর কুড়ি আগেও এই শহর আর তার আশপাশে ছিল ২০৮টি প্রজাতির পাখি, বিভিন্ন পরিবেশ সংস্থার। পূর্ব কলকাতার লবণ হ্রদ এলাকায় প্রায় ৮০টি প্রজাতির পরিযায়ী সমেত ২৮৪ প্রজাতির পাখির আনাগোনা ছিল তিরিশ বছর আগেও, জানাচ্ছে পরিবেশ প্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'প্রকৃতি সংসদ'। প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি হারিয়ে যাচ্ছে কলকাতা থেকে, অথচ আমরা নির্লিপ্ত, উদাসীন।

 

PREV
click me!

Recommended Stories

বিধায়ক হয়ে আয় একধাক্কায় দ্বিগুণেরও বেশি! জমি-ফ্ল্যাট-গাড়ি নিয়ে মোট কত সম্পত্তি হুমায়ুন কবীরের?
'গীতাপাঠ হয়েছে, এবার কোরান পাঠ করাব' ফের হুঁশিয়ারি দিলেন হুমায়ুন কবীর