ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত হতে বারণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন তিনি। তবে এই মুহূর্তে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে কী দৃষ্টিভঙ্গি ধরা পড়ল আমাদের সংবাদ মাধ্য়মের কাছে,এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-
'গুরুনানক ইন্সটিউট অফ ডেন্টাল সাইন্স এন্ড রিসার্স'-এর চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সোহম বন্দ্যোপাধ্যায় মন খুলে জানালেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে তার কিছু কথা আমাদের সংবাদ মাধ্য়মকে। 'ভীষণ বৃষ্টি, অনাসৃষ্টি। যাচ্ছেতাই পুরো। বারোটা বাজলো কলেজ যাওয়াটার। ঘরবন্দি সারাটা দিন। নিউজ চ্যানেল গুলোয় অহরহ চোখ ঘুরছে। বাবা-মা চিন্তা করছে এই বৃষ্টিতে কাজের মাসি আসবে তো! এমন আবহাওয়া, শরীরটাও হালকা ম্যাজম্যাজ করছে, মন বসছে না পড়ায়। সবমিলিয়ে ওয়েদারটা খিচুরির হলেও, কিছুরই যেন ঠিক ইচ্ছে নেই।'
'ইন্টারন্য়াশনাল ইন্সটিউট অফ হোটেল ম্য়ানেজমেন্ট'-র প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুদিতি সাহা, জানালো ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে তার দৃ্ষ্টিভঙ্গি। 'আমার মনে হয়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আগেরবারের ফণী-র মতই পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। যতটা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, মন বলছে ততটা হবেনা। ভারী বৃষ্টি হয়েই দূরে সরে যাবে। '
চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ জানালেন, 'আমরা আসলে এক বিশেষ ভৌগলিক অবস্থানে বসবাস করি। একদিকে বঙ্গোপসাগর অপরদিকে আরব সাগর, নিচে ভারত মহাসাগর। আর আমাদের এই ইস্ট্রান জোনে এই দুর্যোগ বহু যুগ ধরে একটা কমন ফ্য়াক্টর। এটা নতুন কিছু নয়, তাই মানুষ বহু যুগ ধরেই এটা ফেস করছে। এই ঘূর্ণিঝড় ভীষণই অনিশ্চিত। কখন যে এর বেগ বাড়বে বা কমবে তা বলা দুষ্কর। আমি চাই যে কারো কোনও ক্ষতি না হয়, কোনও জিনিসপত্রের ক্ষতি না হয়। ইতিমধ্য়েই কোষ্টাল এরিয়া থেকে সবাইকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে টেনশন থাকে খুবই, কিন্তু মানুষ চিরকালই ফেস করেছে নেচারের এই থিওরিকে। তাই আবারও তারা ফেস করতে পারবে।'
উলুবেরিয়ার 'ওম দয়াল কলেজ অফ আর্কিটেকচার'-র পিওন ভাস্কর মল্লিক জানালেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে তার বক্তব্য় আমাদের সংবাদ মাধ্য়মকে। 'আমাদের এদিকে শুক্রবার সন্ধে থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্য়া একদমই কম ছিল। রাস্তাঘাটে জনসংখ্য়া একেবারেই কমে গিয়েছে। সকাল থেকে কারেন্ট অফ। ঝড়ে গাছপালা ভেঙেছে, বিদ্য়ুতের তারও ছিড়ে গেছে। আমি সন্ধ্য়েবেলা ফোন করেছিলাম সুন্দরবনের ওখানে। প্রশাসনের তরফে ওখানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে সর্তকতামূলক ঘোষনা করছে মাটির ঘরে একা থাকতে বারণ করেছে,পাকা ঘরে থাকার ব্য়বস্থা করে দিয়েছে। আমাদের এখানে সেই ব্য়বস্থাটাও নেই। প্রশাসনের তরফে কেউ কিছুই করেনি। রাতের দিকে ঘূর্ণিঝড় আসবে ,তাই আমাদের এখানে বুলবুলের আতঙ্কে সবাই চুপচাপ আছে। এই মুহূর্তে ঝোড়ো বৃষ্টি তার সঙ্গে দমকা হাওয়া দিচ্ছে। জানিনা এর পর কী হবে।'
ডিজাইনিং পোশাক ব্য়বসায়ী গৌতমী সাহা জানালেন ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে তার মনের কথা আমাদের সংবাদ মাধ্য়মকে। 'ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আসছে শুনেছি, তাই সকাল-সকাল দোকান খুলেছি। কিন্তু সারাদিন বেরিয়ে গেল, অথচ কোনও কাস্টমারের দেখা পেলাম না। তাই তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরছি, যাতে দূর্যোগের কবলে না পড়ি।'
মার্শাল আর্টের শিক্ষক নিলাদ্রী চক্রবর্তী জানালেন যে ,'আজকে সকাল বেলা থেকেই কম-বেশী বৃষ্টি হওয়ার জন্য় আমার ক্লাসে খুব কম সংখ্য়ক ছাত্র-ছাত্রীই উপস্থিত ছিল। আমি চাইব, যারা এই মুহূর্তে বাইরে আছে, তারা সকলেই নিরাপদে বাড়ি ফিরুক।'
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, রাত ২ টোর পরেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দূরে সরে যাবে। রবিবার বিকেলের পরেই আবহাওয়ার উন্নতি হবে।