পুরাকাল থেকেই মাকে প্রকৃতি রূপে কল্পনা করেছে মানুষ। আমাদের ধারণা, মা অযত্নে থাকলে আদতে ক্ষতি হয় সন্তানের। এ বছর সেই প্রকৃতি মা-কে যত্নে রাখার পাঠ শেখাচ্ছে সিকদার বাগান সাধারণ দুর্গোৎসব কমিটি। এবার দুর্গাপুজোয় তাদের ভাবনা 'যত্নে রাখো রত্ন পাবে'।
১০৭ বছরে পা দিয়েছে পুজো। এমনিতেই অভিজ্ঞতার নিরিখে বেড়ে গিয়েছে পুজোর ওজন। তবে শুধু ওজনেই থিমের দৌড়ে সামিল হয়নি কমিটি। রীতিমতো মাথা ঘামিয়ে বানিয়েছে পরিবেশ রক্ষার পাঠ। প্রকৃতিকে বাঁচাতে জলের অপচয় রোখাই সিকদার বাগানের মূল 'মোটো'। সেই ভাবনারই বাস্তবায়ন ঘটাতে ময়দানে নেমেছেন শ্লিপী অভিজিৎ নন্দী ও সঞ্জীব। নিজস্ব আঙ্গিকে সাজিয়ে তুলেছেন মণ্ডপ, প্রতিমা। এ বছর তাদের বাজেট ২০ লক্ষ টাকা। বাঁশ,কাঠ,প্লাই দিয়েই তৈরি হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী মণ্ডপ। তবে থিমের চমকে কোথাও হারিয়ে যায়নি পুজোর সাবেকিয়ানা। মায়ের মুখের আদল বদলাতে রাজি নয় পুজো কমিটি। তাঁদের মতে, উত্তর কলকাতার সাবেকিয়ানাই এই পুজোর রসদ। তাই থিমের মাঝে কোথাও নিজস্বতা হারাবে না ঐতিহ্যবাহী এই পুজো।
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, জলের অভাবে মারাত্মক অবস্থা হয়েছে দক্ষিণে। কিছুদিন আগেও বেঙ্গালুরুর শহরাঞ্চলে জল পেতে কালঘাম ছুটেছে শহরবাসীর। পরিবেশবিদরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে দেশের। এখন থেকেই জলের অপচয় রুখতে না পারলে জলশূন্য ভবিষ্য়তের মুখে পড়তে হবে দেশকে। রাজ্য়ে ইতিমধ্যেই 'জল ধরো জল ভরো' প্রকল্পের সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজ্ঞাপনের মাধ্য়মে শেখানো হচ্ছে জল অপচয় রোধের পাঠ।
পুজো কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, থিমের সঙ্গে সাবেকিয়ানার মিশেল থাকছে এবারের সিকদার বাগানের পুজোয়। কমিটিতে একাধিক ওজনদার নেতা থাকায় তাঁরাও সবুজ সংকেত দিয়েছেনে এই ভাবনাতেই। কমিটি পরিচিতি বলছে, সিকদার বাগানের পুজো কমিটিতে রয়েছেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ ছাড়াও ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডে। কমিটির চেয়ারম্য়ান পদে রয়েছেন অতীন ঘোষ, প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাধন পান্ডে। ক্লাবের পুজো নিয়ে সাধারণ সম্পাদক গৌরী শংকর রায়চৌধুরী বলেন, 'আমাদের মণ্ডপ এবং প্রতিমা প্রত্যেক বছরই দর্শনার্থীদের মন কাড়ে। এ বছর আমরা যে থিম নিয়ে এগোচ্ছি ,তা প্রচুর লোক দেখবেন। আশা করছি, থিমের দ্বারা মানুষঅবশ্যই উপকৃত হবেন।'
কলকাতার দুর্গাপুজোর চালচিত্র বলছে, দক্ষিণকে টক্কর দিতে এখন উত্তরেও থিমের রমরমা। যদিও সিকদার বাগানের দাবি, তাদের পুজো উত্তরের ঐতিহ্য। তাই ভাবনার আদলে পুজো রূপ পেলেও সাবেকিয়ানা ছাড়বেন না তাঁরা। কারণ তাঁরাও জানেন,'মা-কে যত্নে রাখলেই সন্তান রত্ন পাবে।'