অক্সিমিটারের দাম কত? কেউ বলছেন দেড়হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার। কেউ আবার এর থেকেও বেশি দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেক মানুষের ধারণা অক্সিমিটারের দাম চল্লিশ হাজার টাকার উপরে। আসলে অক্সিমিটার-কে ঘিরে যে ভাবে গত এক বছরের কালোবাজারি চরমে পৌঁছেছে তা কোনওভাবেই রোখা যাচ্ছে না। যে অক্সিমিটার ২০২০-র শুরুতে সাড়ে সাতশো টাকা থেকে পনেরোশো টাকাতেও পাওয়া যেত- সেই অক্সিমিটারের দাম এত কেন? প্রশ্ন রয়েছে, কিন্তু কোনও উত্তর নেই। করোনা অতিমারির এই সঙ্কটকালে প্রতিটি ঘরে ঘরে অক্সিমিটার এখন অতি জরুরি একটা গ্যাজেট। যাকে লাইফ সেভিং গ্যাজেট-এর সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে। অথচ তাকে ঘিরে যে পরিমাণ অসাধু চক্র তৈরি হয়েছে তা রোখার মতো কোনও ব্যবস্থাই এখনও গড়ে তোলা যায়নি। পরিণতি, কেউ কেউ অক্সিমিটার কিনতে পারছেন না, আবার যারা কেনার চেষ্টা করছেন তারাও সহজে যে পেয়ে যাচ্ছেন তেমনটা নয়। এহেন এক পরিস্থিতিতে বাংলার মানুষকে স্বস্তি জোগাতে পারে তিন যুবকের তৈরি প্রযুক্তি। যে প্রযুক্তির মাধ্যমে স্মার্টফোন থেকেই মেপে ফেলা যাবে অক্সিজেন-এর মাত্রা, পালস রেট এবং রেসপটরি রেট।
শুভব্রত পাল, মসিজ সেনগুপ্ত ও অভিষেক সেনগুপ্ত নামে তিন বাঙালি উদ্যোগপতি তৈরি করেছেন একটি অ্যাপ। কেয়ারপ্লিস ভাইটাল নামে এই অ্যাপটি স্মার্টফোনের মাধ্যমেই ৩০ থেকে ৩৫ সেকেন্ডে জানিয়ে দিচ্ছে একজনের শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা, পালস রেট ও রেসপটরি রেট-কে। এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শুভব্রত পাল জানিয়েছেন, অক্সিমিটারের কাজকে স্মার্টফোনের মাধ্যমে করতে তারা যে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছেন তার নাম ফটোপ্লেথিজমোগ্রাফি বা পিপিজি-র কৌশলকে ব্যবহার করেছে। অক্সিমিটারে আঙুল ঢুকিয়ে দিতে হয়। এরপর সেনসরের মাধ্যমে দেহে অক্সিজেনের স্যাচুরেশন থেকে শুরু করে পালস রেট এবং রেসপিরেশন রেট-এর তথ্য দিয়ে দেয় অক্সিমিটার। শুভব্রত, মনসিজ এবং অভিষেক তৈরি করা প্রযুক্তি স্মার্টফোনের ফ্ল্যাশবাল্ব-কে সেনসরের মতো ব্যবহার করে। এই ফ্ল্যাশবাল্বে আঙুল ছুঁয়ে রাখলে সেখান থেকে পেরিফেরাল রক্ত সঞ্চালনে ভলিউমেট্রিক পরিবর্তনকে ধরে নেয় শুভব্রতদের প্রযুক্তি। এরপর সামনে চলে আসে যাবতীয় তথ্য। এই প্রযুক্তির মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সকেও ব্যবহার করেছে শুভব্রত, মনসিজ ও অভিষেক।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুভব্রত জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের এই প্রযুক্তিকে একটি অ্যাপ-এর মধ্যে সঙ্কলিত করেছেন। কেয়ারপ্লিস ভাইটাল নামে এই অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোড করে নিলেই অক্সিজেন মাপার সুবিধা পাওয়া যাবে। ২০১৬ সাল থেকেই অক্সিমিটারের বিকল্প প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন তিন তরুণ উদ্যোগপতি। ২০২০ সালে করোনা অতিমারির মধ্যে তাদের কাজে আরও গতি আসে এবং তাঁরা এক্সপেরিমেন্ট করার মতো একটি স্তরে পৌঁছে যান। ২০২০ সাল থেকেই হেলথ সেক্টরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য-পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা হয়। শেষমেশ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের সহায়তা শুরু হয় কেয়ারপ্লিস ভাইটালের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। ১২০০ রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা মাপার কাজ সফলভাবে করে ফেলেছে কেয়ারপ্লিস ভাইটাল অ্যাপ। প্রাথমিকভাবে একে অক্সিমিটারের মতোই ব্যবহারের অনুমতিও পেয়ে গিয়েছেন শুভব্রত, মনসিজ এবং অভিষেকদের সংস্থা।
কেয়ারপ্লিস ভাইটাল অ্যাপটি এই মুহূর্তে গুগুল প্লে-স্টোরেও পাওয়া যাচ্ছে। তবে, এই মুহূর্তে গুগুল প্লে-স্টোরে এর আইফোনে ডাউনলোড ভার্সান পাওয়া যাচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েড ভার্সান ডাউনলোড খুব শিগগিরি আসতে চলেছে। আপাতত শুভব্রতরা তাঁদের সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সান ডাউনলোডের ফ্রি-অপশন দিয়ে রেখেছেন। শুভব্রত জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে ডাউনলোডের চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে সংস্থার সাইট ক্র্যাশ করে গিয়েছিল। কেয়ারপ্লিস ভাইটাল অ্যাপ-এ আরও কিছু সুবিধা শুভব্রতরা যোগ করেছেন। যেমন এখানে টেলিমেডিসিন কনলাটেন্টেরও সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে। অ্যাপ আপাতত ফ্রি-তেই ডাউনলোড করা যাচ্ছে বলেই জানিয়েছেন শুভব্রত। তাঁদের আশা কেয়ারপ্লিস ভাইটাল অ্যাপ গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে খুবই কার্যকর হবে।