শাল-পিয়ালের বন, ইতিহাস ও রূপকথার গল্প আছে ভালকিমাচানে

  • ভালকি জঙ্গল মানেই শাল-পিয়ালের জঙ্গল আর যমুনাদিঘি
  • মাছ ধরা ও বোটিং করার ব্যবস্থা আছে এখানে
  • ভালকি জঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে বনবাংলো- অরণ্যসুন্দরী
  • ইঁটের ওয়াচটাওয়ার ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে আজও দাঁড়িয়ে আছে এখানে 
  • পিকনিক করার আলাদা বন্দোবস্ত আছে ভালকিমাচানে

samarpita ghatak | Published : Jan 22, 2020 11:27 AM IST

সপ্তাহান্তের ছুটি যাতে বিফলে না যায় তার চেষ্টায় লিপ্ত প্রায় সমস্ত বাঙালি ভ্রমণ পিপাসু মন। গরম পড়ার আগে কলকাতার অদূরে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে পৌঁছতে তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয় না। তেমনি একটা জায়গা হল পূর্ব বর্ধমানের ভালকি মাচান।  বর্ধমান জেলার অন্তর্গত গুসকরা বনাঞ্চলের একটি বিরাট অংশ জুড়েই রয়েছে ভালকি জঙ্গল। ভালকি জঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে বনবাংলো- অরণ্যসুন্দরী।  

এই বাংলো আর জঙ্গলের মধ্যে কোনও প্রাচীর নেই, তাই জঙ্গলের থাকার, সবুজের মাঝে রাত কাটানোর পরম ইচ্ছে পূর্ণ হয় খুব সহজেই। কাছেই আছে দিঘি, যমুনা দিঘি। এই দিঘিকে ঘিরে রয়েছে গোলাকৃতি বাগান।  কংক্রিটের বসার জায়গা, মাথার ওপর ছাওনি দেওয়া । পর্যটকরা চাইলে দিঘিতে মাছ ধরতে পারেন আবার চাইলে বোটিংও করতে পারেন মনের আনন্দে। আর পাখির ছবি তুলতে চাইলে নিরিবিলি জঙ্গলের দিকে চলে যেতে হবে চুপি চুপি। দেবদারু, আমলকী, হরিতকী, শাল, সেগুন, শিমূল গাছের জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থাকলে আরাম পাবে চোখ , মনও শান্ত হবে।

যমুনাদিঘির উত্তরদিকে প্রাচীন কিছু থাম নজরে পড়বে, কথিত আছে এগুলি জমিদাররাই তৈরি করেছিলেন এবং এগুলো আসলে অনেক পুরনো ওয়াচটাওয়ার, যার ওপরে উঠে শিকারিরা নজর রাখতেন শিকারের ওপর, আবার অনেকে বলে, শত্রুদের ওপর নজর রাখা হত। শোনা যায় এর নীচে একটি সুড়ঙ্গ আছে যা নাকি ২৫ কিমি দূরের বর্ধমান রাজবাড়ি অবধি চলে গেছে, আবার এও শোনা যায় এ সুড়ঙ্গ দুর্গাপুর অবধি বিস্তৃত। ৫টি স্তম্ভের মাঝখানে খানিকটা জায়গা নিয়ে লোহার জালে ঢাকা একটি কুয়োর মতো রয়েছে।

অনেকের মতে এটিই নাকি সুড়ঙ্গ পথ। স্তম্ভের আশপাশে কোনও সিঁড়ি দেখতে পাওয়া যায় না। এই পথ নাকি বিপ্লবীরা ব্যবহার করতেন এমন কথাও প্রচলিত আছে। ভালকি মাচানের নাম নিয়েও অনেক জনশ্রুতি আছে; তাতে যেমন ইতিহাসের ছোঁয়া আছে তেমন আছে মিথ।  যে মিথটি বেশি জনপ্রিয় তা হল অনেক আগে এই জঙ্গলে ভালুক ছিল, রাজারা ভালুক শিকার করার জন্য মাচান তৈরি ছিলেন তাই এই জায়গার নাম ভালকি মাচান।

জঙ্গলের কাছে গেলে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে তাকে। তাই বাংলোয় খাওয়া, বিশ্রাম আর আড্ডা ছাড়া ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন শুকনো পাতা বিছনো মেঠো পথ, বসন্তের উদাসী বিকেলে পড়ন্ত রোদ এসে পড়ে গাছের গায়ে, আলো ছায়ায় তৈরি হয় মায়া, এসবের পরশ পেতে, জঙ্গলের গন্ধ গায়ে মাখতে এমন নিরীহ জঙ্গলের জুড়ি নেই। হিংস্র জন্তু নেই, বন বিড়াল, শেয়াল, বাঁদর  ও নানা রকমের সাপ আছে তাই বেশি অন্ধকারে গহীন জঙ্গলে না যাওয়াই শ্রেয়।  তবে দলমা পাহাড়ে হাতিরা কিন্তু জঙ্গলের পথ ধরে  প্রায়ই চলে আসে এখানে সদলবলে।

আধাঁরে জঙ্গলের রূপ ভিন্ন। ঝিঁঝিঁর ডাক, শুকনো পাতার মর্মর শব্দ, পাখির ঘরে ফেরার ডাক সব মিলিয়ে অন্য রোমাঞ্চ তৈরি করে।  অখন্ড নীরবতাকে যদি ভালোবাসেন তাহলে ভালকিমাচান ভালো লাগবে আপনার।  এই জঙ্গলের মধ্যে পিকনিকও করার পৃথক জায়গা আছে তবে জঙ্গল নোংরা হলে মন খারাপ হয় পর্যটকদের। পিকনিক হোক কিন্তু কড়া হোক নিয়ম কানুন যাতে পরিবেশের উপর দূষণের প্রভাব না পড়ে।

কীভাবে যাবেন- হাওড়া থেকে সকাল ৬টার ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে চেপে মানকড় স্টেশনে নেমে, সেখান থেকে সড়কপথে  ১৩ কিমি গেলেই পৌঁছে যাবেন ভালকিমাচান। এছাড়াও বোলপুরগামী ট্রেনে গুসকরা স্টেশনে নেমেও গাড়িতে যাওয়া যায় ভালকিমাচান। গুসকরা থেকে দূরত্ব ১৮ কিমি।

ভালকিমাচান থেকে  মাত্র ১০কিমি দূরে যমুনাদিঘিতে রয়েছে মৎস্য দপ্তরের মাছ চাষের কেন্দ্র। আর সন্নিকটেই আছে ডোকরা শিল্পের গ্রাম। আর ভালকিমাচান থেকে ৩২ কিমি দূরে রয়েছে শান্তিনিকেতনে। ইচ্ছে হলে ঘুরে আসতে পারেন।
  
থাকার জায়গা- অরণ্য সুন্দরী রিসর্ট – যোগাযোগঃ ৯১৫৩৪২০১৩৩
ভাড়াঃ ডাবল বেড রূমঃ ৮৫০-১২৫০, থ্রি বেড রুমঃ ১০০০-১৪০০ ( শনি-রবির ভাড়া বেশি হয়।)
এছাড়া যমুনাদিঘিতে থাকার জন্য রয়েছে মৎস্য দপ্তরের গেস্ট হাউস।

Share this article
click me!