কোন ভিটামিনের অভাবে কোন রোগ হতে পারে তা মানুষ জানে না। তাই আজকের এই প্রবন্ধে আমরা ভিটামিনের অভাবে সৃষ্ট রোগের তালিকা এবং কীভাবে সেগুলোর ঘাটতি দূর করা যায় সে সম্পর্কে জানব। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত
গাড়ি সঠিকভাবে চালাতে যেভাবে জ্বালানির প্রয়োজন হয়। একই ভাবে শরীরে সঠিক ভাবে কাজের জন্য ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। শরীরকে সাবলীলভাবে চলার জন্য অনেক ভিটামিন রয়েছে। যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ ইত্যাদি... এই ভিটামিনের যে কোনও একটির যদি শরীরে ঘাটতি হয়, তাহলে আপনাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে। তবে কোন ভিটামিনের অভাবে কোন রোগ হতে পারে তা মানুষ জানে না। তাই আজকের এই প্রবন্ধে আমরা ভিটামিনের অভাবে সৃষ্ট রোগের তালিকা এবং কীভাবে সেগুলোর ঘাটতি দূর করা যায় সে সম্পর্কে জানব। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত...
ভিটামিন বি-
ভিটামিন বি আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন বি-তে অনেক কমপ্লেক্স রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি ওয়ান, বিটু, বিথ্রি, বি ফাইভ, বি সিক্স, বি সেভেন এবং বি টুয়েলভ। এই সমস্ত কমপ্লেক্স আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে ভিটামিন বি ওয়ান ও ভিটামিন বিটু- এর অভাব হলে স্নায়ুতন্ত্র, ত্বক, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেখানে ভিটামিন বিথ্রি ক্লান্তি, বমি, দুর্বল হজমের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ভিটামিন বি সিক্স এর অভাবের কারণে , আপনাকে বিষণ্নতা, বিভ্রান্তি, বমি বমি ভাব, রক্তাল্পতা এবং ঘন ঘন সংক্রমণের সম্মুখীন হতে হতে পারে। ভিটামিন বি টুয়েলভ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে ক্ষুধামন্দা, খিঁচুনি, গ্যাস তৈরি, শ্বাসকষ্ট, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা প্রভাবিত হতে পারে। বি ভিটামিন আমাদের শরীরে জিন এবং ডিএনএ গঠনের জন্য দায়ী। ভিটামিন বি-এর সাহায্যে শরীরে লোহিত কণিকাও তৈরি হয়। ভিটামিন বি-এর অভাব দূর করতে ডিম, মাংস, মাছ, সব ধরনের দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে।
ভিটামিন কে-
ভিটামিন কে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব আপনাকে অনেক গুরুতর রোগের ঝুঁকিতেও ফেলতে পারে। শরীরে এই ভিটামিনের সুষম পরিমাণ থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন কে-এর অভাবে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে যায়। রক্তপাতের সমস্যা আছে, হার্ট সংক্রান্ত রোগের আশঙ্কা থেকে যায়। ভিটামিন কে এর অভাবে রক্তনালী শক্ত হয়ে যায়। পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। বেশি ব্যথা এবং রক্তপাতের মতো। প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ হতে পারে। শারীরিক দুর্বলতা, নীল বিবর্ণতা বা ত্বকের খোসা ছাড়ানো অন্তর্ভুক্ত। ভিটামিন কে-এর ঘাটতি হিমোফিলিয়ার মতো রোগের জন্য দায়ী। এর ঘাটতি মেটাতে আপনি খেতে পারেন গম, সরিষা, পালং শাক, সবুজ শাক, অঙ্কুরিত দানা, কলা রসালো ফল, কিউই। , আঙ্গুর, অলিভ অয়েল, লাল মরিচ, মুলা, বিটরুট, ব্রকলি খাওয়া যেতে পারে।
ভিটামিন এ-
অন্যান্য ভিটামিনের মতো ভিটামিন এও শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি দুর্দান্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। শরীরের সঠিক বিকাশেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন এ-এর অভাব চোখের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। এর ঘাটতির কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। আপনি ঘন ঘন সংক্রমণ পেতে পারেন। ভিটামিন এ-এর অভাব আপনাকে রক্তস্বল্পতার শিকার করতে পারে। মূত্রনালীর সংক্রমণ ছাড়া শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। ভিটামিন এ এর অভাবে লিভারের রোগ হয়। আমাদের শরীরের অনেক অংশ যেমন ত্বক, চুল, দাঁত এবং মাড়ির জন্যও এটি প্রয়োজনীয়। ভিটামিন এ ত্বকের কোষ গঠন ও মেরামতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা হয়। ভিটামিন এ-এর অভাব নারী ও পুরুষ উভয়ের উর্বরতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া এটি আমাদের রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা আমাদের হাড়কে মজবুত করে।এর ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক-সবজি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। সয়াবিন, দুধ, গাজর, পেয়ারা, পেঁপে, মাছের তেল, ডিম ভিটামিন এ-এর চমৎকার উৎস।
ভিটামিন সি-
শরীরের সঠিক বিকাশের জন্যও ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ভিটামিন সি-এর অভাব শুধু ত্বকের সমস্যাই করে না, দাঁত ও মাড়িতেও এর বিশেষ প্রভাব পড়ে। আসলে শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাবের কারণে কোলাজেনের ঘাটতি হয়। এ কারণে মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা হয়।বারবার দাঁত ভাঙার সমস্যাও হয়। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ঘাটতি সপ্তাহে অনাক্রম্যতা সৃষ্টি করতে পারে। আপনি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। আপনি ক্লান্ত, পেশী ব্যথা, দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন। যদি আপনার শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব থাকে, তাহলে আপনার ক্ষত সারাতে অনেক সময় লাগতে পারে। ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণের জন্য আপনি আপনার ডায়েটে সাইট্রাস ফল যেমন মৌসুমী, লেবু, কমলা, কাঁঠাল, আঙ্গুর, পুদিনা, টমেটো এবং ফল ও শাকসবজি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
ভিটামিন ডি
আমাদের শরীরের সঠিক বিকাশের জন্যও ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে আপনি আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস সমস্যায় ভুগতে পারেন। পায়ের হাড় বাঁকা হয়ে যেতে পারে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে শিশুদের রিকেট রোগ হতে পারে, যাতে হাড় নরম হয়ে যায় এবং সহজেই ভেঙে যায়। ভিটামিন ডি-এর অভাবে মানুষ মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। এর ঘাটতি পূরণের জন্য সূর্যের আলোই সর্বোত্তম চিকিৎসা। অন্তত ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে বসে থাকলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ হতে পারে। এ ছাড়া দুধ, দই, মুরগির শেষের মতো খাদ্যদ্রব্য সেবন করে ভিটামিন ডি সরবরাহ করা যায়।
আরও পড়ুন- স্প্রাউট সবার জন্য স্বাস্থ্যকর নয়, এটি এই সমস্যা থাকলে ক্ষতিকরও হতে পারে
আরও পড়ুন- হজম সংক্রান্ত এই ৫ মিথ কী বিশ্বাস করেন, এগুলি ভুল না সত্য জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের মত
আরও পড়ুন- দুর্বল হাড়ে প্রাণ আসবে, মাংসপেশিতে প্রোটিন ভরবে, জেনে নিন সেদ্ধ চিকেন খাওয়ার ৬ উপকারিতা
ভিটামিন ই-
ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে ভিটামিন ই-এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এছাড়া এটি শরীরকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন ই এর ঘাটতি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দিতে পারে। পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে। চোখ সংক্রান্ত অভিযোগ থাকতে পারে। এটি উর্বরতার উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া ভিটামিন এ কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। এটি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ই-এর অভাবে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পাওয়া যায় না, যার কারণে হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক সংক্রান্ত নানা সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন এ হার্ট অ্যাটাকের পরে পেশী ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি অবরুদ্ধ শিরা পুনরায় খুলতে সাহায্য করতে পারে। এর অভাব পূরণ করতে, আপনি আপনার খাদ্যতালিকায় পালংশাক, বাদাম, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, ডিম, আখরোট, সবুজ শাক, ব্রকলি, আম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।