লাল মাটি আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে, চলুন তবে ঝাড়গ্রামে ও বেলপাহাড়ির জঙ্গলে

  • শাল, জারুলের সবুজ জঙ্গল
  • ডুলুং নদী, মহুয়া ফুলের গন্ধ মাখা হাওয়া
  •  দুদিনের চরকি পাকে ডেস্টিনেশন ঝাড়গ্রাম ও বেলপাহাড়ি
  • সঙ্গে উপরি পাওনা হতেই পারে ঢাঙিকুসুম

অনন্ত সবুজ পথ, যে পথ শেষ না হলে কিছু যায় আসে না,বরং মন শান্ত হয়। যে পথে ক্লান্তি নেই বরং ক্লান্তির ওপর ঝরে পড়বে মহুয়া ফুল। শাল মহুয়ার মাঝখান দিয়ে পথের ধার ঘেঁষে জানা-অজানা বনফুল মনে করাবে গ্রাম বাংলার চিরন্তন সৌন্দর্য যতটুকু আছে এখনও ততটুকুই বা কম কি? ঝাড়গ্রামে, বেলপাহাড়িতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে এ কথাই মনে হবে বারবার। 
কলকাতা থেকে তিন ঘন্টার পথ। সপ্তাহান্তের ছুটির জন্য আদর্শ জায়গা ঝাড়গ্রাম ও তার চারপাশের জায়গাগুলো। জঙ্গল, নদী, ছোটো পাহাড়, ঝরনা, লাল মাটি ঘিরে ঝাড়গ্রামের প্রতিটি জায়গা এক একটি মণি মুক্তো, ঝাড়গ্রামে আপনার কাঙ্খিত অবসর উড়ান দেবে ডানা মেলে।

রাজবাড়ি, চিড়িয়াখানা, ডুলুং নদীর ধার, কনকদুর্গার মন্দির, ঘাঘরা জলপ্রপাত, চিল্কিগড়, আর অপূর্ব সুন্দর মনোমোহিনী বেলপাহাড়ি। জামবনির পরিযায়ী পাখির গ্রাম কেন্দুয়াও পাখি প্রেমীদের আকর্ষিত করবে। বেলপাহাড়ির গাডরাসিনি পাহাড়ে ছোট্ট ট্রেকের অভিজ্ঞতা অনন্য কারণ এর নির্জন জঙ্গলের পথ।  নানা রকমের গাছ, আর পাহাড়ের মাথা থেকে নীচের সবুজ দৃশ্য ভোলার নয়। ট্রেকিং যারা করতে অপারাগ তারা ঘুরে দেখুন আশেপাশের নিরিবিলি রাস্তা, পাহাড়ের নীচে নির্জন আশ্রম,  যেতে পারেন খান্ডারিনি ঝিলে , পরিযায়ী পাখি আসে সেখানে দল বেঁধে, খানিক দূরেই আছে লালজল পাহাড় আর পাহাড়ের মধ্যে আদিম গুহা। ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ির রাস্তায় যেতে যেতে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের কথা, আরণ্যক উপন্যাসের কথা, আদিবাসী জীবনের কথা মনে পড়াবেই।  কাঁকরাঝোর জঙ্গল যারা এখনো দেখেননি, যারা শহুরে একঘেয়েমির মধ্যে জঙ্গলকে মিস করেন মাঝে মধ্যেই, তাদের কোনও এক সপ্তাহান্তের ছুটিতে গন্তব্য হোক ঝাড়গ্রাম এবং বেলপাহাড়ি। আর সেখান থেকেই ঘুরে  আসুন ঝাড়খন্ড সীমানায় অবস্থিত কাঁকরাঝোর জঙ্গল। তারাফেনি ড্যাম, কানাইসর হিল,কেটকি লেক দেখে নিতে পারেন সেদিনেই যেদিন বেলপাহাড়ি যাচ্ছেন।

Latest Videos

 যদি দু দিনের বেশি সময় হাতে থাকে তাহলে চলে যেতে পারেন গোপিবল্লভপুরে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে হাতিবাড়ি জঙ্গল ও ঝিল্লি পখিরালয়। প্যাকেজ ট্যুরগুলোয় আরও কিছু অতিরিক্ত ব্যবস্থাও থাকে যা একক সফরে মিলবে না, যেমন, ক্যাম্প ফায়ার, আদিবাসী নৃত্য, কংসাবতী নদীর তীরে রায়বেঁশে ও রণপা নাচ অথবা মোরগ লড়াই দেখার সুযোগ। এক একটা জায়গায় এক একরকমের মুহূর্তরা জন্ম নেবে। সূর্য ওঠার পর পরই ডুলুঙ নদীর পাড়ে সোনালি জরির মতো আলোর সঙ্গে সূর্য ঢলে পড়ার প্রাক মুহূর্তে ঘাঘরা জলপ্রপাতের কালচে পাথরের ওপর ক্লান্ত দিনের মুহূর্ত আলাদা হবে। চিল্কিগড়ের প্রাচীন মন্দিরে ইতিহাসের ফিসফিসানি কানে আসবেই। বিরাট প্রান্তর জুড়ে চিল্কিগড় প্রাসাদ, আর মন্দির দুটি পুরনো দিনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবার কনকদুর্গা নতুন মন্দিরের পাশেই জরাজীর্ণ মন্দিরের ফাটলজুড়ে বটের চারা প্রাচীন ও নবীনের  চির সত্য সহাবস্থানের চিত্র তুলে ধরে। অষ্টধাতুর মূর্তি ঘিরেই জমে ওঠে দুর্গাপুজো কনক দুর্গা মন্দিরে। শহুরে কোলাহল থেকে বহু দূরে কনক দুর্গার অবস্থান।। প্রাচীন রীতিতে ব্যতিক্রমী আড়ম্বরহীন ,বাহুল্যহীন সনাতনী পুজো হয়ে থাকে এখানে। ঝাড়গ্রামে মাঝারি মাপের চিড়িয়াখানা ছোটোদের বেশ ভালো লাগবে। আর ভেষজ উদ্যান অবশ্যই যাবেন ছোটদের নিয়ে,  নানা ভেষজ গাছ  বড়োরা ছোটোদের চিনিয়ে দিতে পারবেন। অনেক রকমের উপকারি গাছ চিনতে শিখে যাবে ছোটো-বড়ো সবাই। ঝাড়গ্রাম শহরের অন্যতম আকর্ষণ ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি। রাজ পরিবারের প্রথম পুরুষ সর্বেশ্বর ছিলেন রাজপুতানার ক্ষত্রিয়। মল্লদেব রাজবংশের পত্তন করেন তিনি। তবে বর্তমান রাজবাড়িটি ১৯৩১ সালে ৭০ বিঘে জমির উপর মুসলিম গথিক শিল্পরীতি অনুসরণ করে তৈরি করিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের সর্বশেষ রাজা নরসিংহ মল্লদেব। এই রাজবাড়ি বহুবার সেলুলয়েডে দেখেছেন বাঙালি দর্শক।

ছুটি যদি তিন চারদিনের বেশি থাকে তাহলে রওনা দিন আবার। ঝাড়গ্রাম থেকে যেতে হবে সীমান্তের দিকে, বেলপাহাড়ি থেকে ১৫ কিমি দূরে রয়েছে ঝাড়খন্ড লাগোয়া গ্রাম ঢাঙিকুসুম।  পাহাড়ের কোলে, ছোট্ট সবুজ এই গ্রামে আছে জঙ্গল, জঙ্গলের ভেতর ডুঙরি প্রপাত।  এখানে থাকার জায়গা এখনও নেই, থাকতে হবে ঝাড়গ্রামেই। কিছুদিন আগে অবধি এখানে আসার কোনও সুযোগ সুবিধে ছিলনা, হালেই এমন সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা। তাই ঘুরে দেখে নিতে পারেন আদিবাসী গ্রাম ঢাঙিকুসুম।


কীভাবে যাবেন- কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে।  সড়কপথে  কলকাতা থেকে ঝাড়্গ্রামের দূরত্ব ১৬৯ কিমি। বা গাড়ি করেও যেতে পারেন হাওড়া থেকে কোলাঘাট খড়গপুর হয়ে ঝাড়্গ্রামে পৌঁছতে সাড়ে তিন ঘন্টার মতো সময় লাগে।

কোথায় থাকবেন- কম ভালো, বেশি ভালো ও মাঝারি মানের হোটেল আছে, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতেও 'দ্যা প্যালেস ট্যুরিস্ট রিসর্ট' আছে। রাজ পরিবার ও রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম যৌথভাবে এই রিসর্ট চালায়। যেখানেই থাকুন আগে থেকে বুক করে নেবেন।

এখানে দু’রাত তিন দিনের প্যাকেজে জনপ্রতি মোটামুটি তিন হাজার টাকায় হোটেলে থাকা, খাওয়া, ঘোরা হয়ে যায়। গাইড নিয়ে গাড়িতে করে বেড়ানোর ব্যবস্থাও আছে। বিভিন্ন সংস্থা এই পরিষেবা দিয়ে থাকে।

Share this article
click me!

Latest Videos

Viral Video! আবাসের টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাইছেন TMC কর্মী | Murshidabad Latest News
প্রেমের আড়ালে লক্ষাধিক টাকা লুঠ! প্রতারণার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনি | South 24 Parganas News Today
‘প্রণামের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে বাঙালি’ বিস্ফোরক মন্তব্য Dilip Ghosh-এর, দেখুন কী বলছেন | Dilip Ghosh
'কুমিল্লা ছেড়ে চলে যা' কুমিল্লায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা! | Bangladesh News |
শীতের রাতে যমুনার আতঙ্ক! একের পর এক জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঘিনী | Bandwan Tiger News