৫৪৩ আসনের লোকসভায় বিজেপি একাই ৩০৩ আসন দখল করেছে, এনডিএ ৩৫২। এরপর মোদী বিরোধীরা সবাই প্রায় চুপ হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, মোদীর কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এরপরেও দমছেন না। সম্প্রতি 'নিউইয়র্ক টাইমস'-এ ভারতের লোকসভা নির্বাচন ২০১৯-এর ফলাফল নিয়ে তিনি একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তাতে তিনি দাবি করেছেন, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতা জিতেছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর মতাদর্শ জেতেনি।
বদলে গিয়েছে ভারত
অমর্ত্য সেন লিখেছেন, ভোটের ফলাফলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, যে মহাত্মা গান্ধী , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জহরলাল নেহরু মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতো কংগ্রেস বা ভারতবর্ষের মহান নেতারা যে বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দেশ গড়েছিলেন, তা বর্তমান ভারতে অচল।
সত্যি কি তাই?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ কিন্তু এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁর মতে এটা ঠিকই গত পাঁচ বছরে বিজেপির শাসনে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ বেড়েছে। ভোটের ফল দেখেও মনে হতে পারে বহুত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতার মতাদর্শের পরাজয় হয়েছে। কিন্তু, আদতে তা নয়। বিষয়টা বোঝানোর জন্য তিনি ভোপাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজয়ী সাংসদ স্বাধ্বী প্রজ্ঞার উদাহরণ দিয়েছেন। প্রজ্ঞা ভোটে জিতেছেন। কিন্তু তাঁর জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্য়াকারী নাথুরাম গডসে দেশপ্রেমীক বলা ভারতের মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। এমনকী বিজেপি দলকেও অস্বস্তিতে পড়তে হয়। তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিতে হয়।
তাহলে কী ভাবে জিতলেন মোদী?
মতাদর্শের লড়াইতে তো জিততে পারেনইনি, প্রতিশ্রুতি রক্ষাতেও নরেন্দ্র মোদী ব্যর্থ হয়েছেন বলেই মনে করেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতা এসেছিলেন দুর্নীতিমুক্ত বাজার অর্থনীতি, প্রচুর কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক বিস্তার ও তার সুষম বন্টন, সহজলোভ্য প্রাথমিক স্বাস্থ ও শিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। যদি তা রাখতেই পারতেন, তাহলে মোদীর প্রচারে সেইসবের কথা থাকত। তার বদলে তার বদলে এইবার মোদীর প্রচার জুড়ে ছিল পাকিস্তানের অন্তর্ঘাত, অভ্যন্তরীন শত্রু- এক কথায় দেশবাসীর উদ্বেগকে ফসকে দিয়েছেন। তাঁর মতে মোদী 'আগুনে বক্তা', বক্তৃতার গুণে তিনি মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে সফল হয়েছেন। এছাড়া প্রচুর অর্থ ব্য়াহার করেছে বিজেপি। সেই সঙ্গে উপরি পাওনা অন্য়ান্য দলের থেকে অনেক বেশি প্রচারমাধ্যমের আলো পাওয়া। সেইসঙ্গে পুলওয়ামার ঘটনাকে সামনে রেখে ভারতবাসীর মনে আতঙ্ক তৈরি করেছিলেন মোদী। আর বিমান হামলার নির্দেশ দিয়ে তৈরি করেছিলেন জাতীয়বাদের আবেগ, যার ক্ষির খেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ঠিক যেভাবে ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ডের যুদ্ধ নাটকীয় ভাবে মার্গারেট থ্যাচারের পক্ষে সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছিল।