জামাইষষ্ঠীতেও করোনা কাঁটা, ঢেড়া পিটিয়ে জামাইয়ের 'ইনকামিং- আউটগোয়িং' বন্ধ করল গ্রাম

  • করোনার কাঁটা এবার জামাইষষ্ঠীতেও
  • ঢেড়া পিটিয়ে জামাইষষ্ঠী পালনে নিষেধাজ্ঞা
  • এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রাম
  • ২৫০ জনের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত 

Asianet News Bangla | Published : May 28, 2020 7:31 PM IST

করোনার কাঁটা এবার জামাইষষ্ঠীতেও। রীতিমতো ঢেড়া পিটিয়ে গ্রামের সমস্ত পরিবারেই এ বছর জামাইষষ্ঠী পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির লছিপুর গ্রামপঞ্চায়েতের ডাডরা গ্রামের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার গ্রামের বারোয়ারি মন্ডপে বসে ২৫০ জনের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে করোনা কালীন পরিস্থিতিতে গ্রামের কোনও পরিবারেরই এবার জামাই ষষ্ঠীর পার্বন পালিত হবে না। 

এ বিষয়ে যে সমস্ত পরিবারে জামাই রয়েছে তাঁরা এ বছর জামাইদের জানিয়ে দেয় যে এবার যেন জামাইরা না আসেন। পাশাপাশি গ্রামের বিবাহিতদেরও একই ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তারাও যেন শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার নামটি না ধরে। এই একই আদেশ জারি হয়েছে ডাডরার পড়শি গ্রাম নম্বরকোলাতেও। সব মিলিয়ে দুটি গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার এবার জামাইষষ্ঠী পালন করছে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে।
  
বুধবারই ডাডরা গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম মুড়া থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল ঘোষককে। পেশাদার  ঘোষক দুটি গ্রামের ৩বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রীতিমত ঢেড়া পিটিয়ে গলা ফুলিয়ে সেই ঘোষনা করে দিয়েছেন। ফলে বৃহস্পতিবার কার্যত আর পাঁচটা দিনের মতই স্বাভাবিকই কেটেছে গ্রামের পরিবেশ। গ্রামের বটতলায় পেল্লাই পেল্লাই খাসি ঝুলিয়ে কাটা হয়নি, আম কাঁঠালের গন্ধ নেই, শালীদের খিলখিল হাসি আর শ্বাশুড়ির শঙ্খ ধ্বনি শোনেনি ডাডরা আর নম্বরকোলা গ্রাম। গ্রামের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য কাঞ্চন ঘোষ জানিয়েছেন, " বর্তমান পরিস্থিতির ওপর দাঁড়িয়ে গ্রামের মান্য গণ্য ব্যক্তিরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে সম্মতি প্রকাশ করেছে পুরো গ্রাম। আমরাও মনে করছি এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। উৎসব আসবে যাবে আপাতত মানুষ নীরোগ থাকুক।"

গ্রামের বর্ষীয়ান মানুষ মন্টু পালুই, রাসবিহারী ঘোষ, হারাধন পালুই, রমনী বেরারা জানিয়েছেন," গ্রামের জামাইদের কেউ কলকাতা, কেউ ঝাড়গ্রাম কেউ পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। ঠিক তেমনই আমাদের গ্রামের ছেলেরাও বিভিন্ন জায়গায় বিয়ে করেছে। কোথায় কে যাবে আর কে আসবে, সে কোথায় কার সংস্পর্ষে এসেছে বা আসবে আমরা কী জানতে পারব বলুন? এবার তাই জামাই ষষ্টিটা বাদই দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করছি এতে শুধু গ্রামের নয়, জামাইদেরও মঙ্গল হবে আর জামাই ষষ্টিতো জামাইদের মঙ্গলেরই জন্য।"

ডাডরা গ্রামের এই ভাবনার পেছনে অবশ্য অন্য একটি ঘটনাও কাজ করেছে। চারদিন আগেই রাতে গ্রামে প্রবেশ করেছেন কলকাতায় কর্মরত গ্রামেরই এক বাসিন্দা। পরের দিন গ্রামের লোকেরা বিষয়টি জানতে পেরে তার বাড়িতে গিয়ে বলে এসেছে যে ওই পরিবারের সদস্যরা যেন বাড়ি থেকে বের না হয়। তাদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় দ্রব্য গ্রামবাসীরাই বাড়িতে পৌঁছে। দেবে। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ জামাই ষষ্টির দিনই মহারাষ্ট্র থেকে ফিরছে। তাঁদের অবশ্য কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে লছিপুর হাই স্কুলে। এই পরিস্থিতে কিছুটা উদ্বেগও রয়েছে গ্রামে। সেই জায়গা থেকেই সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই গ্রাম।

Share this article
click me!