কীভাবে ঘরে ঘরে শুরু হল নীল ষষ্ঠীর পুজো? এর পিছনে রয়েছে এক অদ্ভুত কাহিনি
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে, এবছর, ১২ এপ্রিল শুক্রবার পালিত হবে নীলষষ্ঠী। এদিন সন্ধ্যালগ্নে পুজো দেওয়া হয়। ষষ্ঠীর উপবাস ও ব্রত রেখে শিবের মাথায় জল ঢালেন মায়েরা। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে, বছরের শেষ ষষ্ঠী পালিত হয় নীলের পুজো বা নীলষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে।
বিবাহিত মহিলারা কন্যা ও পুত্রসন্তানের মঙ্গলকামনায়, নীরোগ ও সুস্থ জীবন কামনায় নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করে থাকেন। নীল ষষ্ঠীর পরের দিনই চৈত্র মাসের শেষ দিন হিসেবে পালিত হয়। সেদিন চৈত্র সংক্রান্তিও পালন করা হয়। নীলের পুজোর পরের দিন বাংলা ক্যালেন্ডার মতে একটি নতুন বছরের সূচনা হয়। পয়লা বৈশাখের আগেই পালিত হয় গ্রামবাংলার এই লৌকিক ব্রত ও উত্সব।
এই নীল ষষ্ঠীর পুজো শুরুর পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক গল্প। যাকে বিশ্বাস করেই ঘরে ঘরে মায়েরা নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করেন। এবার জেনে নিন কী সেই কাহিনি।
এক বামুন ও বামুনী সমস্ত দেব দেবীর বার-ব্রত নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন। কিন্তু কোন এক ভাগ্য দোষে তাঁদের কোন সন্তান জন্মানোর পর বেশিদিন বেঁচে থাকতোনা না। এই দুঃখে এক সন্তান মারা যাবার পর একদিন কাশীতে গঙ্গাস্নান করে ঘাটে বসে কাঁদতে থাকেন সেই বামন বামনি।
এই দেখে মা ষষ্ঠীর করুনা হয়। তিনি তখন এক বৃদ্ধা বামনীর বেশ ধরে আবির্ভূত হন। জিজ্ঞেস করেন, 'তোরা কাঁদছিস কেন?' কি হয়েছে তোদের? তখন সেই বামন বামনী দু'জনে কাঁদতে কাঁদতে নিজেদের দুঃখের কথা প্রকাশ করেন। মা ষষ্ঠী তাদের জিজ্ঞাসা করেন , 'তোরা কি কোনদিন নীল ষষ্ঠী করেছিস?'
বামনী জিজ্ঞেস করেন, 'এটি কোন ব্রত?' আমরা তো অনেক ব্রতই করেছি। তখনই মা ষষ্ঠী বলেন, সমস্ত চৈত্র মাস সন্ন্যাস ধর্ম পালন করে শিব পুজো করতে হবে। এরপর সংক্রান্তির আগের দিন উপোস থেকে সন্ধেয় নীলাবতীর পুজো দিয়ে নীলকণ্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বালাতে হবে। এবং সবার শেষে মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করার পর উপোস ভঙ্গ করতে হবে। সন্তানের দীর্ঘ জীবনের জন্যই নীল ষষ্ঠী করতে হয়।
এরপর তারা বাড়ী ফিরে এসে অপেক্ষা করে চৈত্র মাসের। যথা সময়ে এই মাস এলে মা ষষ্ঠীর কথা মতো নীল ষষ্ঠী করে ভাগ্য ফেরে বামুন-বামনীর। তাঁরা এক সন্তানের জন্ম দেয়। সন্তানও দীর্ঘ জীবন পায়। আর এর পর বামন বামনীকে দেখে গ্রামে গ্রামে এই পুজোর প্রচলন শুরু।
নীল ষষ্ঠীর দিন দিনের যে কোন সময়, শিবের মাথায় জল ঢালার পর বেলপাতা, ফুল ও একটি ফল ছুঁয়ে রাখতে হয়। এরপর আকন্দ বা অপরাজিতার ফুল ভগবান শিবকে অর্পণ করতে হবে।
পুজোর সময় সন্তানের নামে অবশ্যই মোমবাতি জ্বালাতে হবে। উপোস ভাঙার পর ভাত কিংবা আটার তৈরি খাবার খেতে নেই। ফল, সাবু বা ময়দার তৈরি খাবার, বা ছানা খান। অনেকে এদিন সন্দক লবণ খেয়ে থাকেন। এই দিন এই লবন খাওয়া অত্যন্ত শুভ।