বাংলার মতোই কেরালার মানুষও ফুটবলপ্রেমী। বিশ্বকাপ উপলক্ষে কেরালার ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে অভূতপূর্ব উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে ফুটবল উন্মাদনা নিয়ে আপত্তি জানাল কেরালার মুসলিম সংগঠন।
কাতার বিশ্বকাপে অসাধারণ ফুটবল খেলছে এশিয়ার দলগুলি। প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে ব্রাজিল। সারা বিশ্বের মতোই ভারতের মানুষও বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে মাতোয়ারা। বিশেষ করে বাংলা, কেরল, গোয়ার মতো রাজ্যগুলিতে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে ফুটবল উন্মাদনা নিয়ে কড়া বার্তা দিল কেরালার মুসলিম সংগঠন সমস্ত কেরালা জম-ইয়াতুল খুতবা। কেরালার ফুটবলপ্রেমীরা যেভাবে লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের কাটআউট তৈরি করছেন, বিভিন্ন দেশের জার্সি পরে ম্যাচ দেখছেন, বিভিন্ন দলের পতাকা টাঙিয়েছেন, সেটা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে এই সংগঠন। তাদের দাবি, বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনার জন্য বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে প্রার্থনা। সমস্ত কেরালা জম-ইয়াতুল খুতবার সাধারণ সম্পাদক নাসার ফইজি কুদাথাই বলেছেন, 'ক্রীড়াসুলভ মানসিকতা নিয়েই ফুটবলকে দেখা উচিত আমাদের। কিন্তু এখন বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনার জেরে ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রার্থনা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। বিশ্বকাপ ঘিরে উন্মাদনা এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, আমাদের পতাকার চেয়ে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে বেশি মাতামাতি করছেন বহু মানুষ। যখন বহু মানুষ বাসস্থান, কর্মসংস্থান, বাসস্থান নিয়ে সমস্যায়, তখন তরুণরা যেভাবে ফুটবলারদের কাটআউট তৈরি করার জন্য় টাকা খরচ করছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, মানুষ টেলিভিশন সেটের সামনে বসে থাকছেন। তাঁরা প্রার্থনা করার জন্য মসজিদে আসছেন না।'
কুদাথাই আরও বলেছেন, 'যাঁরা বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে উঠেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই পর্তুগালকে সমর্থন করছেন। ইউরোপের এই দেশটির মানুষই প্রথমবার ভারতে হানা দেন। হানাদারি চালানোর ইতিহাস রয়েছে পর্তুগালের। সিনেমা, খেলা, রাজনীতির ব্যক্তিত্বদের নায়কের মর্যাদা দেওয়া উচিত নয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের অন্য কোনও কিছুর দ্বারাই প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। ফুটবলের প্রতি কারও অতিরিক্ত আসক্তি থাকা উচিত নয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের রাত জেগে খেলা দেখা, খেলা দেখার জন্য প্রার্থনা করতে না যাওয়া বা ইসলাম-বিরোধী দেশগুলিকে সমর্থন করা উচিত নয়। আমাদের উপর কিছু খেলা ও খেলোয়াড়ের মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব যাতে অত্যধিক না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু মদ বা মাদকেরই নেশা হয় না, খেলারও নেশা হয়। সেটাও সবার জন্য ক্ষতিকারক। বিনোদন আমাদের দায়িত্ববোধ খর্ব করে দেয়। আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা উচিত।'
কেরালার শিক্ষামন্ত্রী ভি শিবনকুট্টি অবশ্য বলেছেন, সমস্ত কেরালা জম-ইয়াতুল খুতবা যে নির্দেশ দিয়েছে, সেটা তারা করতেই পারে। কিন্তু মানুষ এই নির্দেশ মানবেন কি না, সেটা তাঁদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। কাউকে জোর করা উচিত নয়।
মুসলিম লিগ বিধায়ক এম কে মুনির বলেছেন, সব বয়সের মানুষই ফুটবল ভালবাসেন। অনেকেই বিভিন্ন দেশকে সমর্থন করেন। তবে ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা যাতে মাত্রাতিরিক্ত না হয়ে যায়, সেটা দেখতে হবে।
আরও পড়ুন-
কাতারে জোগো বোনিতো, প্রথম ম্যাচেই সাম্বা ম্যাজিক, রিচার্লিসনের জোড়া গোলে জয়
ম্যাচের শেষমুহূর্তে পরপর গোল, ১০ জনের ওয়েলশের বিরুদ্ধে ২-০ জয় ইরানের
চোট পেলেও বিশ্বকাপে খেলবেন নেইমার, আশ্বস্ত করলেন ব্রাজিলের কোচ তিতে