গাছ কি তার ডাল পালায় এসে বসা পোকা মাকড়, ছোট খাটো প্রাণীদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলে

  • মানুষ ধরে টেনে খেয়ে ফেলত গাছ
  • কিন্তু বিজ্ঞান সেকথা বলে না
  • বিশাল আকৃতির মাংসাশী উদ্ভিদ
  • উভচর প্রানী শিকার করতে পারে

ছোটবেলায় মানুষখেকো গাছের গল্প পড়েছিলাম। সেই সব গাছ মানুষ শিকার করত বা মানুষ ধরে টেনে খেয়ে ফেলত। কিন্তু বিজ্ঞান সেকথা বলে না।  কারণ এখন পর্যন্ত সে রকম গাছের  খোঁজ মেলেনি।  মালয়েশিয়ার জঙ্গলে এক ধরনের বিশাল আকৃতির মাংসাশী উদ্ভিদের কথা বলা হয়। যে গাছ সেই অঞ্চলে  ডেভিলস টাং বা শয়তানের জিব বলে পরিচিত। কচু জাতীয় উদ্ভিদ। এর ফুলের দৈর্ঘ প্রায় ১২ ফুট এবং ওজন হয় ৪৬ কেজি। তবে এই বিশালাকার মাংশাসী উদ্ভিদটিও মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়। ছোট ছোট পোকামাকড়, বড়জোর ছোট আকৃতির কিছু উভচর প্রানী শিকার করতে পারে।

বড়বেলায় এসেও আমরা সবাই কলসি গাছ বা পিচার প্ল্যান্ট-এর কথা পড়েছি। এদের দেহের বড় অংশটাই পিচার বা কলসির মতো। ওই ধরণের আকৃতিটাই হল ফাঁদ। যার ভিতরে জমে থাকা বৃষ্টির জল পোকা মাকড় খেতে আসে বলে এর আরেকটি নাম মাংকি কাপ। গাছের কলসির ওপরের অংশটি খুব পিচ্ছিল হয়। জল খেতে আসা যেকোনো পোকা মাকড় পিচ্ছিল অংশটির সংস্পর্শে এলেই শেষ! ফাঁদের নিচের অংশে থাকে কয়েকটি গ্রন্থি। ওই সব গ্রন্থি দিয়ে শিকারের দেহ থেকে পুষ্টি শুষে নেয় গাছ। 

"

আমরা জানি সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গাছ শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। এই ক্ষমতাই উদ্ভিদকে প্রানী থেকে আলাদা করেছে। তবু কিছু কিছু উদ্ভিদ পোকামাকড় শিকার করে। পৃথিবীতে এমন প্রায় ৬০০ প্রজাতির গাছ আছে, যা আর সব গাছের মতো সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে খাদ্য উৎপন্ন করে না, বরং মাংসাশী প্রাণীর মতো পোকা মাকড় বা ছোটখাট প্রানীকে ফাঁদ পেতে না হয় বিষাক্ত রসের সাহায্যে শিকার করে। 

তবে কি ওইসব পোকা মাকড় বা বা ছোটখাট প্রানীই ওই সব গাছের খাদ্য? সাধারণত গাছ আলো হাওয়া  থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন গ্রহন করে। কিন্তু ওইসব গাছ তা করতে পারে না। আবার কিছু কিছু অঞ্চলের মাটি এবং জল এত অ্যাসিডিক হয় যে, সেখানকার নাইট্রিয়ারিং ব্যাকটেরিয়াগুলো গাছের জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন যোগান দিতে পারে না। ওই পরিবেশে বেঁচে থাকার কারণে ওই ধরণের গাছ হাজার বছর আগে থেকেই এই রকম হয়ে উঠেছে,  বেঁচে থাকার জন্য সব গাছকেই মাটি থেকে জল এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করতে হয়। সূর্যের আলোয় ওই সব উপাদানের সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইড মিলে তৈরি হয় গাছের খাবার। তাছাড়া গাছের বেড়ে ওঠার জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হল নাইট্রোজেন। যে কারণে নাইট্রোজেন বহুল মাটিতে অধিকাংশ গাছ ভালো জন্মায় এবং বেড়ে ওঠে।  কিন্তু যাদের আমরা মাংসাশী গাছ বলি তারা জন্মায় ভেজা আর স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জলাভূমিতে। সেখানকার আর্দ্র মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ থাকে নামমাত্র।  তাই নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করতেই ওই গাছ গুলি ফাঁদ পেতে রাখে। পোকা মাকড় মরে গেলে তাদের শরীর ঠেকে নাইট্রোজেন চুষে নেয়। 

Latest Videos

"

পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে চার লাখ প্রজাতির গাছের মধ্যে একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা বাদে সমস্ত মহাদেশ জুড়ে প্রায় ৬০০ প্রজাতির এই ধরণের গাছ রয়েছে। মাংশাসী বলতে এরা যে সরাসরি জীবন্ত প্রাণী ধরে খায় তা নয়। এদের শরীরে কিছু বিশেষ ফাঁদ ব্যবস্থা আছে, যেগুলো বিভিন্ন পোকা-মাকড় ও জীবন্ত প্রাণী আটকা পড়তে সাহায্য করে। ওই সব গাছের দেহ থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন হজম সহায়ক এনজাইমে আটকা পড়ে পোকা মাকড় এবং ছোটখাট প্রাণী।  

কেবল মাত্র পিচার প্ল্যান্ট বা কলসি গাছ নয় সানডিউ বা সূর্যশিশির, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ বা মাছি ধরা এরকম বহু নামের গাছ রয়েছে। ২০০৭ সালে আমেরিকার স্টুয়ার্ট ম্যাকফারসন্ত, অ্যালাস্টেয়ার রবিনসন এবং ফিলিপাইনের ভলকার হেনরিচ নামে তিন বিজ্ঞানী ফিলিপাইনের মাউন্ট ভিক্টোরিয়ায় অভিযান চালিয়ে খুঁজে পেয়েছেন মাংসাশী গাছের নতুন নতুন প্রজাতির। কোনও গাছের গন্ধ এবং রঙ কীট-পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। কীট-পতঙ্গরা পাতায় এসে বসার পরে পিচ্ছিল গাত্র আর সূক্ষ্ম রোমের কারণে আর উড়ে যেতে পারে না। শুধু পোকা মাকড় কেন ওই সব গাছের শিকার হয় বড় বড় ইদুরও।

Share this article
click me!

Latest Videos

ফিরহাদকে কড়া ডোজ দিলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari #shortsfeed
PM Modi Live : কুয়েতে Gulf Spic-এর ভারতীয় কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা মোদীর, দেখুন সরাসরি
‘West Bengal-এ জঙ্গিদের সরকারের মুখোশ Mamata Banerjee’ Suvendu Adhikari-র ঝাঁঝালো তোপ মমতাকে
অনলাইনে পুজোর দেওয়ার নামে প্রতারণা! ঘাড় ধরে নিয়ে গেল পুলিশ | Hooghly News Today
কেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছিল? আসল কারন ফাঁস করলেন Suvendu Adhikari, শুনলে চমকে উঠবেন