ঢেউ খেলানো প্রান্তর আর অবিন্যস্ত জঙ্গল, চলুন ব্রিটিশ কলোনি ম্যাকলাস্কিগঞ্জে

  • ম্যাকলাস্কিগঞ্জ নামটা শুনলেই ঢেউখেলানো মালভূমি, সাহেব কলোনি, জঙ্গলের ছবি ভেসে আসে চোখে
  • 'আ ডেথ ইন দি গঞ্জ' ছবিতে, বুদ্ধদেব গুহর অনেক গল্পে এই জায়গার সঙ্গে পরিচিতি আছে বাঙালিদের
  • পাশের রাজ্য ঝাড়খন্ডে এইরকম অনেক জায়গা আছে যা ভালো লাগতে বাধ্য ভ্রমণ পিপাসুদের

পরীক্ষার মরসুম শেষ হতে চলল। এইসময়ই ছাপোষা বাঙালির মন পালাই পালাই করে। অনেকেই বেড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকেই ছকে রেখেছেন। আবার অনেকেই পরীক্ষাগুলো শেষ হওয়ার পরে করবেন। যারা ভাবছেন বড়ো ট্যুর পরে হবে টুক করে ঘুরে আসি কোথাও তাদের জন্য ম্যাকলাস্কিগঞ্জ মন্দ বিকল্প হবে না মোটেও।  পরীক্ষার টেনশন, রাতজাগা, প্রবল চাপ কাটানোর জন্য সামনের যেকোনও সপ্তাহান্তে চলে যান এই জঙ্গলে। সব কাজ, চিন্তা ছেড়ে ফেলে সবুজ বনানীর মাঝে আয়েস করে আসুন দুই চারদিন। 

এ হল অ্যাংলো সাহেবদের কলোনি। ম্যাকলাস্কি সাহেবের নামে জায়গার নামকরণ। জঙ্গলের মধ্যে এই জায়গাটি বেশ ভালো লেগে যায় সাহেবদের। এখানে ব্রিটিশদের আনাগোনা শুরু হয়েছিল রেল লাইন পাতার কাজের প্রেক্ষিতে। এখানে শিকার করতেও আসত সাহেবরা।এই মাল্ভূমি যেন অনেকটা তাদের দেশের ছোটো শহরগুলোর মতো- নির্জন, ঢেউ খেলানো প্রান্তর, মনোরম জঙ্গল, তিরতিরে নদী। অ্যাংলো সাহেব যারা ব্রিটিশ শাসনের শেষে ফিরতে পারলনা নিজের দেশে তারা থাকতে শুরু করল এখানে। গড়ে উঠল বাংলো, বাংলো ঘিরে তৈরি হল ফুল ফলের বাগান। 

Latest Videos

এখন ম্যাকলাস্কিগঞ্জে গেলে দেখতে পাবেন সাহেবদের পুরনো বাংলো বাড়ি, নিরিবিলি জঙ্গলের রাস্তা যেমন রাস্তা বা জঙ্গলের বর্ণনা আমরা বুদ্ধদেব গুহর লেখায় পেয়েছি, সেইসব লেখা পড়ে কতবার ইচ্ছে হয়েছে প্রায় সব পাঠকদেরই ঘুরে আসতে। পাশেই রয়েছে চট্টি নদী। সাহেবদের এই জায়গা পছন্দ হওয়ার আর একটি অন্যতম কারণ হল এখানকার মনোরম আবহাওয়া। শীতকালে প্রচন্ড শীত আর গ্রীষ্মকালও বেশ সহনীয়।  এই অঞ্চল মূলত মুন্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি আদিবাসীদের বাসভূমি। জঙ্গল ছাড়াও যদি গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে দেখতে চান আশপাশের অঞ্চল তাহলে ডেগাডেগি নদী ও কুমারপাত্রা নদী দেখে নিতে পারেন। কুমারপাত্রা নদীর কাছে কলোরাডো ভূমিরূপ দেখে চমকে যাবেন। অদ্ভুত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়েছে এখানে যা দেখে চমকে যেতে হয়। এছাড়াও চলে যেতে পারেন হেসালাং ওয়াচ টাওয়ার যেখান থেকে সমগ্র ম্যাকলাস্কিগঞ্জের এরিয়াল ভিউ দেখতে পাওয়া যাবে। এখানকার দুল্লি গ্রামে আছে সর্ব-ধর্ম-স্থল- মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, গির্জা সব রয়েছে এখানে পাশাপাশি। যেমন ভারতবর্ষের ছবি আমরা দেখতে চাই সেই ছবি এখানে না এলে দেখা হত না। ভেদাভেদের এই বিষাক্ত দিনে এই দুল্লি আমাদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠুক। যেসব পর্যটকরা ভালোবাসেন ট্রেক করতে তারা নাট্টা পাহাড়ে ট্রেক করতে পারেন। ঢেউ খেলানো হাইওয়ে পেরিয়ে মায়াপুর জঙ্গল ভেদ করে পৌঁছতে হবে এই পাহাড়ে। বিকেলবেলায় পৌঁছে গেলে ওই পাহাড়ের মাথা থেকে সূর্যাস্ত দেখতে ভালো লাগবে। আর কোত্থাও যেতে না চাইলে ঘুরে বেড়ান ম্যাক্লাস্কিগঞ্জের বনানী পথে- কল্পনা করুন সেইসব দিন যখন এই কলোনি জমজমাট ছিল, সাহেব, মেমসাহেব ঘুরে বেড়াতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে। মনে শিহরণ জাগতে বাধ্য। যারা ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কঙ্কনা সেনশর্মা পরিচালিত প্রথম ছবি 'এ ডেথ ইন দি গঞ্জ' দেখেছেন তারা সত্তর দশকের শেষদিকের ম্যাকলাস্কিগঞ্জের ঝলক দেখতে পেয়েছেন।  পাশের রাজ্য ঝাড়খন্ডে এমন অনেক সুন্দর জায়গা আছে কিন্তু আমরা অনেক দূরের পথে পাড়ি দিতে গিয়ে কাছ-কে দূরছাই করি। 

কীভাবে যাবেন- হাওড়া শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেসে গেলে সোজা ম্যাকলাস্কিগঞ্জে নামবেন। কিন্তু সেই ট্রেন পৌঁছবে রাত ১১/১২ টা নাগাদ।  হোটেল বা গেস্টহাউসে বলা থাকলে তারা গাড়ি পাঠাবে।  রাঁচি থেকেও বাস বা ভাড়া গাড়িতে যাওয়া যায় ম্যাকলাস্কিগঞ্জে। 

কোথায় থাকবেন- উষাঞ্জলি গ্রিন মাউন্টেন হলিডে রিসর্ট (৭৭৩৯০৮৯০৫২)। এছাড়াও আছে হাইল্যান্ড গেস্ট হাউস(০৬৫৩১-২৭৬৫৩৯), গর্ডন গেস্ট হাউস (৯৪৭০৯৩০২৩০)। 

Share this article
click me!

Latest Videos

Live: মথুরাপুরে সদস্যতা অভিযান অগ্নিমিত্রা পালের, দেখুন সরাসরি
টাকা 'হজম' করার আগেই ধরে ফেলে খেলা ঘুরিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari | Awas Yojana
'আমি মারা গেলে আমার যেন স্ট্যাচু না হয়' দলের উদ্দেশ্যে বার্তা মমতার
Mamata Banerjee: 'মোদী কিছু দেয় নি আমি ৫০ লক্ষ বাড়ি দিয়েছি' বিতর্কিত মন্তব্য মমতার
দেরিতে আসায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে কড়া ধমক MLA অসিত মজুমদারের, দেখুন ভিডিও