পুরুষ বর্জিত এক লেসবিয়ান সমাজ গড়ার স্বপ্ন, ৫০ বছর আগের এক অসামান্য কাহিনি

  • ৫০ বছর আগে একদল লেসবিয়ান মেয়ে স্বপ্ন দেখল যৌথ জীবনের 
  • পুরুষদের বাদ দিয়ে শুরু করল জীবন-যাপনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা
  • বিরাট বিতর্কের সৃষ্টি হল তখনকার আমেরিকায় 
  • তাঁরা সেই আন্দোলন বা জীবন চর্যার নাম দিয়েছিল দ্য ফিউরিজ  

গেল শতকের সাতের দশকের একেবারে গোড়ায় আমেরিকায় কয়েকজন লেসবিয়ান একত্রিত হয়ে জীবন-যাপনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করা মাত্রই বিরাট বিতর্কের সৃষ্টি হল। তাঁরা পুরুষদের থেকে একেবারে আলাদা হয়ে যৌথ জীবনে বাঁচার চেষ্টা শুরু করাতেই সমাজ আঙুল তুলল তাঁদের দিকে। ওই মেয়েরা সেই জীবন চর্যার নাম দিয়েছিলেন দ্য ফিউরিজ।  
ওদের একজন শার্লোট বাঞ্চ। স্বামী-সংসার সবই ছিল তাঁর। তবু নিজেকে তিনি হেটারোসেক্সুয়াল বা বিপরীত লিঙ্গে আকৃষ্ট বলেই জানতেন। তবে পরবর্তী বিখ্যাত নারীবাদী নেত্রী শার্লোট বাঞ্চের সঙ্গে সেই সময়ের শার্লোট বাঞ্চের তফাৎ ছিল। কিন্তু খুব দ্রুতই শার্লোট বদলে গেলেন। লেসবিয়ান অধিকার সম্পর্কে চিন্তাভাবনা শুরু করে নিজেকে লেসবিয়ানই মনে করলেন।
শার্লোট-এর এই মনোভাব বা নিজেকে লেসবিয়ান হিসেবে ঘোষণা নারীবাদী লেখিকা লেসবিয়ান রীটা মে ব্রাউনের সঙ্গে পরিচয়ের পর। লেসবিয়ান লেখিকা রিটা মে ব্রাউন ইতিমধ্যে বহু খ্যাতি বা কুখ্যাতি কুড়িয়েছেন তার প্রথাবিরোধী জীবন-যাপন এবং চিন্তাভাবনার কারণে। পরবর্তীতে তাঁরা  দু’জনে হলেন সেই আন্দোলনের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই সংগঠক। বিয়ে-সংসার ভেঙে শার্লোট চলে এলেন রিটার কাছে। এরপর রিটা ও শার্লোট অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে একটি লেসবিয়ান নারীবাদী গ্রুপ গঠন করলেন।


তাঁরা সেই সময় যেসব ধ্যান-ধারণার প্রকাশ ঘটাচ্ছিলেন, তা তখনকার সমাজের চিন্তাভাবনায় আলোড়ন সৃষ্টি করলো। তাঁরা বললেন,  যৌনতার জন্যও আর পুরুষের দরকার নেই। আমেরিকার সমাজ-রাজনীতিতে তখন নানা ধরণের আন্দোলন আলোড়ন তুলেছে। কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা বিচ্ছিন্নতাবাদের কথা বলছেন। তাদের এই রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রভাব গিয়ে পড়ল লেসবিয়ান নারীবাদীদের আন্দোলনেও। তারাও পুরুষদের কাছ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য ধরণের সমাজ গড়ার কথা বললেন।
ওই আন্দোলন পুরুষদের সমাজের উৎপীড়ক মনে করল। পুরুষদের বাদ দিয়ে আলাদা সমাজের কথা বলল। তাঁদের এই জঙ্গী নারীবাদকে অন্য নারীবাদীরা ভালোভাবে নিলেন না। এদিকে লেসবিয়ান বেজবল টিম, গাড়ির টায়ার বদলানো থেকে শুরু করে শার্লোট, রীটা এবং তাদের নারীবাদী গোষ্ঠীর ১২ জন সদস্য যৌথগৃহ স্থাপন করে সেখানে থাকা শুরু করলেন। ওদের মধ্যে যারা চাকরি করতেন, তারা সবাই তাদের বেতনের টাকাও দিলেন। একটি প্রিন্টিং প্রেস চালু হল। এমনকি পত্রিকাও। অনেকটা কমিউনের মতো জীবন-যাপন। কিন্তু অনেক কিছু ভাগাভাগি করলেও একই টুথব্রাশ ব্যবহার করতে রাজী নয় অনেকেই। একসঙ্গে থাকারও যে একটা সীমারেখা আছে- শুরু হল আলোচনা-তর্ক-বিতর্ক। লেসবিয়ানিজম নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু করলো দ্য ফিউরিজ। তারা মেনে নিলে যে, কেউ চাইলেই লেসবিয়ান হতে পারে না, এটা কারও প্রকৃতির মধ্যেই থাকতে হয়। 
এক সঙ্গে থেকেও অনেকে নিজের পছন্দের সঙ্গীর সঙ্গে জুটি বাঁধছিলেন। ঘনিষ্ঠভাবে অত কাছাকাছি থেকেও  তখন কিন্তু তাদের মধ্যে কেবল একটা মানুষকে চাওয়ার আকাঙ্খা তৈরি হযচ্ছিল। একজন মানুষের সঙ্গেই তখন সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছিল কেউ কেউ। 
এক বছরের মধ্যেই সেই যৌথ সংসারে ফাটল ধরলো। লেসবিয়ান নারীবাদীদের সেই গ্রুপ ভেঙ্গে গেল। সংবাদপত্রটি আরও কিছুদিন চালু ছিল। যে উদ্দীপনা নিয়ে দ্য ফিউরিজ যাত্রা শুরু করেছিল, সেই উদ্দীপনা  নানা খাতে বয়ে গেল। শার্লোট বাঞ্চের মনে হল তাঁরা যে আন্দোলন করেছেন, সেটি ভুল ছিল। 
তবে ওয়াশিংটন ডিসির সাউথ ইস্টের ইলেভেনথ স্ট্রিটের সেই বাড়িটি এখন একটি ঐতিহাসিক বাড়ি হিসেবে সংরক্ষিত। কিছুদিন আগে পর্যন্ত শার্লোট বাঞ্চ রাটগার্স ইউনিভার্সিটিতে উইমেন স্টাডিজের অধ্যাপক ছিলেন এবং একজন নারীবাদী হিসেবে আন্দোলনও চালাতেন।  

Latest Videos

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari Live: এগরায় জনসভা শুভেন্দুর, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
'কুমিল্লা ছেড়ে চলে যা' কুমিল্লায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা! | Bangladesh News |
'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
Viral Video! আবাসের টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাইছেন TMC কর্মী | Murshidabad Latest News
‘Bangladesh-কে মারতে হবে না চোখ দেখালেই যথেষ্ঠ’ বাংলাদেশকে ধুয়ে দিলেন Dilip Ghosh | Bangladesh News