জর্জ বুশের পুনরাবৃত্তি চেয়েছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু কখনও কখনও ইতিহাসের পরিবর্তনও ঘটে

মার্কিন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুমকি

২০০০ সালে এইভাবেই জিতেছিলেন আরেক রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ

কিন্তু সবসময় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে না, পরিবর্তনও হয়

রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, জর্জিয়া ও মিশিগান রাজ্যে ভোট গণনা বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। কোনও প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প শিবির থেকে ভোটে  জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। ওই অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছিল তাহলে কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মীমাংসা হবে আদালতে? নির্বাচনে এরকম একটা পরিস্থিতির আশঙ্কা অনেকেই করেছিলেন, তবে সেটা বাস্তবায়িত যে হবে না সেটাও বুঝেছিলেন তারা।  

আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী দুই প্রার্থীর যে কেউ যে কোনও ব্যালটকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। ব্যালটের ফলাফল নিয়ে সংশয় থাকলে নির্বাচন প্রশাসনের কাছে ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানানো যায় বা তাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায়। রাজ্য আদালত মনে করলে মামলা সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে পারেন। আবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের কাছে মামলা নিয়ে যাওয়া যায়। সর্বোচ্চ আইনি আদালত হওয়ায় এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায়ই চূড়ান্ত।

Latest Videos

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জর্জ ডব্লিউ বুশ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে জয়ী হয়েছিলেন। ট্রাম্প ভেবেছিলেন তিনিও সেটা ঘটাতে পারবেন। সে কারণেই অনেকেরই মনে হয়েছিল, এক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে? কিন্তু ইতিহাসে পরিবর্তন ঘটে। আদালত যদি মামলা গ্রহণ করে এবং রায় যদি রিপাবলিকানদের পক্ষেও যায়,  তাহলেও পেনসিলভেনিয়ায় ভোট গণনার মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে চূড়ান্ত ফলাফল। কারণ মামলায় শুধুমাত্র ৩ নভেম্বরের পর পাওয়া পোস্টাল ব্যালট নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে ন'জন বিচারপতি। এর মধ্যে ছ'জনই রিপাবলিকান। এদের মধ্যে তিনজনকে নিয়োগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা এবং মিশিগান সবগুলোতেই রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত আইনসভা। তবে গভর্ণর ডেমোক্র্যাট পার্টির।

নির্বাচনের পর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি, কিন্তু সেটাই হওয়ার কথা। সাধারণত বিভিন্ন রাজ্যের ফলের ভিত্তিতে যখন একজন প্রার্থী জয়ী হন তখন সেটি প্রচারিত হয়। ২৭০ বা তার বেশি ইলেক্টোরাল ভোট পাওয়া প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন তা ভোটের পরদিন সকালেই জানা যায়।

প্রসঙ্গত, আমেরিকার ইতিহাসে এবার প্রথম প্রায় ১০ কোটি আগাম ভোট পড়ে। প্রচুর পরিমাণ পোস্টাল ভোট পড়ায় ডাকযোগে এগুলো পৌঁছানোর পর সেগুলো গুনতে একটু বেশি সময় দরকার।

কয়েকটি রাজ্যে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে পোস্টাল ভোট গণনা হয়নি। স্বভাবতই বছাই করে ভোট গোনার পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতেও বেশি সময় লাগবে। কিন্তু ৩ নভেম্বর ভোটের আগেই ট্রাম্প শিবির থেকে পোস্টাল ও আগাম ভোট নিয়ে ৪৪টি রাজ্যে তিনশোরও বেশি মামলা করা হল। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলির বক্তব্য,  ভোটারদের জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর নীতির দরকার ছিল। আসল ঘটনা সেটা নয়,  রিপাবলিকানরা আমেরিকার জনণগকে তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চালিয়েছিল।

যেহেতু এটি প্রেসিডেন্টের পদ তাই এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। সাংবিধানিকভাবে তা সমাধানের নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোন প্রার্থী জিতেছেন তা নির্ধারণ করার জন্য রাজ্যগুলির হাতে ৩ নভেম্বর থেকে কম বেশি পাঁচ সপ্তাহ সময়। যাকে '‌সেফ হারবার' ডেডলাইন বলা হয়। এ বছর এই ডেডলাইন আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাজ্যগুলি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলে পপুলার ভোটের বদলে ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বাছাই করা হবে।

সিনেট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। প্রতিনিধি পরিষদে স্টেট ডেলিগেটরা একটি করে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে ২৬ জন ডেলিগেটের সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। যাই ঘটুক না কেন; ২০ জানুয়ারির মধ্যে অবশ্যই নতুন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শুরু হবে।

যে কারণে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে হয়েছে তেমন নজির খুব বেশি নেই। তবে দু’পক্ষই জানিয়েছিল,  নির্বাচনের পর আইনি লড়াইয়ের জন্য তারা প্রস্তুত। দু’দলই আইনজীবীদের বড় দল তৈরি রেখেছিল ভোট গণনা নিয়ে চ্যালেঞ্জ লড়ার জন্য। যেমনটা হয়েছিল ২০০০ সালে। তখন রিপাবলিকান প্রার্থী ছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ছিলেন আল গোর। সেবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এবার ট্রাম্প সে পর্যন্ত পৌঁছোতে পারবেন না সেটাও জানা ছিল। ইতিহাসে পরিবর্তন ঘটে। একদিন তুঘলকি রাজত্বেরও সময় সীমা ফুরোয়।

 

Share this article
click me!

Latest Videos

'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
Suvendu Adhikari Live: এগরায় জনসভা শুভেন্দুর, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘Bangladesh-কে মারতে হবে না চোখ দেখালেই যথেষ্ঠ’ বাংলাদেশকে ধুয়ে দিলেন Dilip Ghosh | Bangladesh News
'উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব', এগরার জনসভায় এসে কাকে বললেন Suvendu Adhikari ?
Dev Adhikari : এবার কী আসছে খাদান ২? খাদান সাফল্য পেতেই বড়সড় ঘোষণা দেব-যীশুদের