প্রথম গিটার হারিয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন, প্রেম, প্রকৃতি, ভালবাসা, প্রতিবাদ নিয়েই গান বেঁধেছিলেন

  • ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৩ সালে জন্ম ডেনভারের
  • নিজেকে তিনি পরম সৌভাগ্যবান বলেমনে করেন যে
  • হারিয়ে যাওয়া গিটার ৫ বছর পরে খুঁজে পেয়েছিলেন 
  • মার্কিন গায়ক যথেষ্ঠ জনপ্রিয় ছিলেন 

‘কান্ট্রি রোডস টেক মি হোম, টু দ্য প্লেস আই বিলং’ গানিটি বেজে উঠলেই মনে হয় ভার্জিনিয়া এলাকার রুক্ষ শুষ্ক পাথুরে পথ চলে গিয়েছে এঁকেবেঁকে আর সেই পথে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে গানটা গাইছে এক নগর বাউল। তাঁর গানের সুর ঝংকারে উচু গাছের মাথা থেকে খসে পড়ছে শুকনো পাতা। পথের ধারের ঘাসপাতায় রোদ এসে থেমে গিয়েছে। কাছের নদীটার নাম শেঁনাডোয়া, একটু দূরে নীল পাহাড়, খনিতে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটছে শ্রমিক আর হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে গান...আরেকটি গান ‘ইউ ফিল আপ মাই সেন্সেস, লাইক আ নাইট ইন দ্য ফরেস্ট/লাইক দ্য মাউন্টেন ইন স্প্রিং টাইম, লাইক এ ওয়াক ইন দ্য রেইন’। কেবল কান্ট্রি রোডস কিংবা অ্যানি’স সং-ই তো নয়, ‘লাভিং অন আ জেট প্লেন’, ‘পারহ্যাপস লাভ’, ‘রকি মাউন্টেন হাই’, ‘পোয়েমস, প্রেয়ারস অ্যান্ড প্রমিজেস’, ‘হোয়াটস অন ইউর মাইন্ড’, “গ্র্যান্ডমা’স ফেদার বেড”, ‘সানসাইন অন মাই শোল্ডারস’, ‘ইফ এভার’, ‘ফলো মি’, ‘টু দ্য ওয়াইল্ড কান্ট্রি’, ‘ফ্লাই অ্যাওয়ে’, ‘সিজনস অব দ্য হার্ট’, ‘ইজ ইট লাভ’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গানগুলি একসময়ে আপামর মানুষের হৃদয় দুলিয়ে দিয়েছিল। যার কথা, সুর ও কন্ঠে তিনি জন ডেনভার। 
প্রেম, প্রকৃতি, ভালবাসা, প্রতিবাদ ঘুরেফিরে এসে পড়ত ডেনভারের গানে। প্রতিদের কথায় অনেকেরই আপত্তি থাকবে, তবু সেই প্রতিবাদে থাকত  শিকারি পাখি, দিগন্তহীন আকাশ,  উপর থেকে দেখা রুক্ষ এক টুকরো সবুজ পৃথিবী। তবে হ্যাঁ তার প্রতিবাদে আগুন জ্বলে না উঠে এসে পড়ত মন খারাপ করা বিকেলবেলা। চারণ কবিদের মতো ডেনভারের গানের কথা যেমন সহজ, সুরও চলত সরল পথে। ‘রাইমস অ্যান্ড রিসার্চ’ দিয়ে যাত্রা শুরু হয়ে একের পর এক অ্যালবামের শিরোনাম ‘পোয়েমস্, প্রেয়ারস্ অ্যান্ড প্রমিসেস্’, ‘ফেয়ারওয়েল অ্যান্ড্রোমিডা’, ‘সিজনস্ অফ দ্য হার্ট’, ‘আই ওয়ান্ট টু লিভ’, ‘ক্রিসমাস লাইক আ লুলাবি’, ‘ড্রিমল্যান্ড এক্সপ্রেস’, ‘উইন্ড সং’ কিংবা ‘দ্য ফ্লাওয়ার দ্যাট শ্যাটার্ড দ্য স্টোন’ সেই সারল্যের প্রতিচ্ছবি।


আজ তাঁর জন্মদিনে মনে পড়ছে তারই বলা কিছু কথা। ডেনভার মাঝে মাঝেই বলতেন, তিনি গান গেয়ে মানুষকে কেবল বিনোদিত করতে চান না। তিনি তাঁদের ছুঁতেও চান। তিনি এও বলেছিলেন, তিনি কখনো হিট গান লিখতে চাননি। সব সময় ভালো গান লিখতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন সেখান থেকে কিছু বার্তা যাতে উঠে আসে। তবে নিজেকে তিনি পরম সৌভাগ্যবান বলেমনে করেন যে,  তিনি জনপ্রিয় হয়েছেন।
তাহলে তিনি কেন গান গাইতেন? এর উত্তরে ডেনভার বলেছিলেন, তাঁর গান গাওয়ার উদ্দেশ্য হল বাঁচতে গিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখা। তিনি বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীতে  আমরা সবাই একে অপরের জন্য। একে অপরের বিরোধিতা করার জন্য নয়। ‘আপনি আমার জীবনে একটি উপহার-সবকিছুই আসে এমন একটি বোধ থেকে। সে আপনি যেই হোন না কেন কিংবা যাই হোক আপনার ভিন্নতা’।
১২ বছর বয়সে যখন জন ডেনভার প্রথম গিটার নিয়ে গান গাইতে শুরু করেছিলেন, সেই গিটারটি ছিল গিবসন ব্র্যান্ডের অ্যাকোস্টিক গিটার। এটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন তাঁর ঠাকুমা। সেই যে শুরু হল; তারপর থেকে গান তাঁর আজীবনের সঙ্গী হয়ে গেল। আজীবনের সঙ্গী হয়ে থেকেছে সেই গিটারটিও। যখন যেখানে গিয়েছেন সঙ্গে গিবসন। আমেরিকার শহর নগরের যে প্রান্তে তিনি গিয়েছেন সঙ্গে সেই গিবসন। একবার গিটার দিয়ে একতি লোকের মাথায় মেরেও ছিলেন।  সাক্ষী রয়েছে গিটারের গায়ের একটা চড়া দাগ। 
কিন্তু ডেনভারের প্রথম সেই গিবসন ব্র্যান্ডের অ্যাকোস্টিক গিটারটি একবার হারিয়ে যায়। অনেক খুঁজেও গিটারটির কোনো হদিস পাওয়া যায় না। জীবনের সব থেকে প্রিয় গিটারটি হারিয়ে ডেনভার খুব মুষড়ে পড়েছিলেন। তকজন তাঁকে দেখে মনে হত, যেন তিনি তাঁর সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছেন। সেটাই তো স্বাভাবিক;  গিটারটি তার জীবনের প্রথম গিটার, সেই গিটার দিয়েই তিনি গান বাজানা শিখেছিলেন, গিটারটা তাঁর ঠাকুমার উপহার দেওয়া গিটার, তার থেকেও বড় কথা,  তিনি গিটার বাজানো শুরু করার পর থেকেই গিটারটা তার সঙ্গী, তার বন্ধু।
এইভাবে কেটে গেল প্রায় পাঁচ বছর। ধীরে ধীরে সেই গিটার হারানোর শোক সামলে উঠলেন ডেনভার। সে বছর জানুয়ারি মাসে লস এঞ্জেলসে একটি স্পেশাল টিভি শো-র কাজ করছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই পেয়ে গেলেন হারিয়ে ফেলা তাঁর জীবনের প্রথম গিটারটি। যেন ম্যাজিকের মতো কোথা থেকে উড়ে এসে তাঁর সামনে হাজির হয়ে হল সেটি!
গিটার ফিরে পেয়ে তো ডেনভারের খুশি আর ধরে না। টিভি শো-র দিকে তাঁর যত না মনোযোগ তার থেকে অনেক বেশি তখন ফিরে পাওয়া সন্তান নিয়ে। কোনোমতে সেই টিভি শোয়ের কাজ সেরে ফিরে এলেন হোটেলে। এসেই বসে গেলেন গিটারটি নিয়ে। তখন তিনি তো আর গিটার বাজাচ্ছিলেন,  যেন ফিরে পাওয়া সন্তানের সঙ্গে আদর সোহাগ করছিলেন। 
ঠিক সেই সময়ে তাঁর অনুভূতির কথা লিখেছিলেন ‘দিস ওল্ড গিটার’ গানে। গানটি পরে তার ‘ব্যাক হোম এগেইন’ অ্যালবামে জায়গা পায়।
কয়েক বছর পর আমেরিকার অ্যারিজোনা-র ফোনিক্সে স্থাপিত হয় মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট মিউজিয়াম। ডেনভারের সেই গিটারটি এখন সেই জাদুঘরে রাখা আছে। 

Latest Videos

Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury