Declassified Tape: বাংলাদেশের স্বাধীনতা, প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের রহস্যমোড়া ফোনালাপ

হেনরি কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে ফোন করেন। সেই ফোনেই তিনি প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান। তাতে বলেন আপনি পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন। 

Web Desk - ANB | / Updated: Dec 17 2021, 06:30 AM IST

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন (Bangladesh Independence) হয়। তার ঠিক একদিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে  (US President Nixon) তাঁর কৌশলগত উপদেষ্ট হেনরি কিসিঞ্জার (Henri Kisinger) বলেছিবেন তিনি অর্থাৎ নিক্সন পশ্চিম পাকিস্তানকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রকাশ করা একটি গোপন দলিলে তেমনই দাবি করা হয়েছে। 

১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধের শেষে ৯৩ হাজারেও বেশি পাকিস্তানে সেনা আত্মসমর্পন করেছিল। পরাজিত পাকিস্তানের জেনারেল এএকে নিয়াজি আত্মসমর্পন দলিলে স্বাক্ষর করার প্রায় ১৬ ঘণ্টা  পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিম ফ্রন্ট একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার করেছিল ১৭ ডিসেম্বর। তারপর হেনরি কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে ফোন করেন। সেই ফোনেই তিনি প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান। তাতে বলেন আপনি পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন। 

এই অদ্ভূদ কথোপকথনের ব্যখ্যা দিয়েছেন সেই সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। তাঁর কথায় 'সেই সময় কিসিঞ্জার একটি সন্দেহজনক ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সময় আমেরিকার মূল লক্ষ্যই ছিল যুদ্ধে পাকিস্তানিদের কাজে লাগিয়ে চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা।' তাই কিসিঞ্জারের মন্তব্যকে একটি হতাশাজনক পরিস্থিতির মুখে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাহবা নেওয়া আর একটি কঠিন বসকে খুলি করার চেষ্টা হিসেবে দেখাই শ্রেয়। 

তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রথম থেকেই তেমন গুরুত্ব দেয়নি আমেরিকা। তারা মুক্তিযুদ্ধকে প্রথম থেকেই ভুল বুঝেছিল। কারণ যুদ্ধ শুরুর ঠিক আট মাস আগে অর্থাৎ ২৯ মার্চ ১৯৭১এ কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি ফোন করে বলেছিলেন পাকিস্তান তার পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হবে। কথা প্রসঙ্গে তিনি ভারতে ব্রিটিশ আগ্রাসনের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। 

১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা শুরু করার পরই ২৬ মার্চ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ট নিক্সনকে ফোনে বলেছিলেন, আপাতদৃষ্টিতে ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছেন। সব বিশেষজ্ঞ এত দিন বলেছিলেন ৩০ হাজার সেনা সাড়ে সাত কোটি মানুষেক ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পারবে না। তবে এই মূহুর্তে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে গোটা পরিস্থিতি শান্তই রয়েছে। 
এই ফোনের জবাবে নিক্সন বলেছিলেন একটি ছোট্ট বাহিনী বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সাধারণত থাকে না। একটি একটি বড় ব্যপার। 

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও আশঙ্কা করেছিলেন পাকিস্তান বড় হামলা চালাবে। কিন্তু তার মোকাবিলা করে ভারত এই যুদ্ধে জয়ী হবে। ভারতের পরিকল্পনা তার কাছে পরিষ্কার ছিল বলেও আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন ভারতের পরিকল্পনা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাহিনী সরিয়ে পশ্চিম দিকে নিয়ে যাওয়া। তিনি সেই সময়ই আশঙ্কা করেছিলেন ভারত পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দেবে। এজাতীয় সতর্কতা পেয়ে প্রেসিডেন্ট নিক্সন আমেরিকার সপ্তন নৌবহরকে ভিয়েতনামের জলসীমা থেকে সরিয়ে এনে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে আমেরিকানদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিক্সন খুব দ্রুততার সঙ্গে ৭৫ হাজার পারমাণবিক শক্তি চালিত রণতরী বঙ্গোপসাগরের পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। এটি সেইসময় সব থেকে শক্তিশালী রণতরী হিসেবে গণ্য করা হত। 

তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী কাজি সাজ্জাদ আলি জহির বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহ পাঠানোর আদেশ ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধকে প্রভাবিত করেনি। কারণ আমেরিকার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাশিয়া ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে নিজস্ব নৌবহর পাঠিয়েছিল। 

১৯৭২ সালে অর্থাৎ যুদ্ধের পরের পর কিসিঞ্জার মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ভারত-পকিস্তানেরে আমরা কী করেছি, কীভাবে আমরা রক্তাক্ত রাশিয়ানদের জন্য আমাদের চিনের বিকল্পটি বাঁচিয়েছি তা এখনও কেউ বুঝতে পারেনি। কেন আমেরিকা বাংলাদেশকে অভিশাপ দেবে- সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি। 

Share this article
click me!