বেআইনিভাবে জলাশয় ভরাটের অভিযোগ। এবার অভিযোগ খোদ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। মুকুন্দপুরের পূর্বালোকের পাখি সরোবর ভরাট চলছে। নোংরা জলের ট্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে।
এবার খোদ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই বেআইনিভাবে জলাশয় ভরাটের অভিযোগ। স্থান- মুকুন্দপুরের পূর্বালোকের পাখি সরোবর। অভিযোগ জলাশয়ের পাশেই রয়েছে বিস্তৃত জমি। সেখানে প্রকল্প না করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা এবং জীব বৈচিত্রে ভরা এই জলাশয়-কে কেন ভরাট করতে হচ্ছে। অভিযোগ, প্রায় আড়াই বিঘা এই জলাশয়ের একদম পাশেই যে কয়েক বিঘা জমি রয়েছে তার সিংহভাগ রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ যোগেন চৌধুরীর নামে। ১৫ বছর আগে দুদফায় এই জমি নেয় যোগেন চৌধুরীর ফাউন্ডেশন। ২০১৭ সালে রাতারাতি খেলার মাঠকে উচ্ছেদ করে তার দখলও নেওয়া হয়। কিন্তু, যোগেন চৌধুরীর প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিকমানের আর্ট কলেজ আজও সেখানে গড়ে উঠতে পারেনি। ২০১১ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রথমবার আসিন হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন সরকারের কাছ থেকে জমি নিয়ে ফেলে রাখা যাবে না। ৩ বছরের মধ্যে কাজ শুরু না হলে জমি সরকার ফেরত নেবে। তাহলে এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত প্রকল্প গড়তে যোগেন চৌধুরীকে দেওয়া জমি কেন ফেরত নেওয়া হল না, এমন প্রশ্নও উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই ইএমবাইপাসে গড়িয়ামুখী বাদিকের এলাকায় জমা জলের সমস্যা নিবারণে তৎপর হয়েছিল সরকার। কিন্তু জমা জলের সমস্যা নিবারণে সরকার যেভাবে একাধিক নোংরা জলের পীট কাম পাম্পিং স্টেশনের পরিকল্পনা করে, তার বিরোধিতা করেন পরিবেশবিদরা। কারণ, সরকারের এই প্রকল্প কোনওভাবেই বাস্তবসম্মত ছিল না বলে অভিযোগ। সবচেয়ে বড় কথা পরিবেশ নষ্ট করে নোংরা জলের এই পিটগুলো বানানো হলেও তা আদৌ কতটা জমা জলকে বের করতে সমর্থ হবে তার বাস্তবসম্মত কোনও ভিত্তিও ছিল না বলে অভিযোগ করেছিলেন পরিবেশবিদদের। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরেই এই জলাশয়ের সৌন্দর্যায়নের বৃদ্ধি এবং সংলগ্ন জমিতে পার্ক তৈরির করার আবেদন রেখেছিল রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিদের সামনে। কারণ পূর্বালোক এলাকায় সেভাবে কোথাও ফাঁকা মাঠ বা জলাশয় আস্ত নেই। এই একটি জলাশয় রয়েছে। অভিযোগ কোনও জনপ্রতিনিধি তাতে কান দেননি। সম্প্রতি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা থেকে ওয়ার্ডের নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার ভারপ্রাপ্ত তথা প্রাক্তন কাউন্সিলার অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলা হয়। তিনি নিজেও এই প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছিলেন। অথচ, ভোট আসতেই তিনি জলাশয় বুজিয়ে নোংরা জলের ট্যাঙ্ক বানানোতে এলাকাবাসীর সমর্থন চেয়ে পোস্টারিং করেছেন। জমি থাকতে সেখানে প্রকল্প না করে জলাশয় বোজানোর অর্থ কী তা নিয়ে অনন্যকে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন অনেকেই। কেইআইআইপি পরিবেশ রক্ষা করে নগরায়ের কথা বলে। কিন্তু আস্ত জলাশয়কে বুজিয়ে দিয়ে এ কেমন উন্নয়ন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি নিজেও পরিবেশ রক্ষার উপরে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ক্লাইমেট চেঞ্জের বিপদ নিয়ে মোদী সরকারের সদিচ্ছার সমালোচনাও করেছেন। কিন্তু, তার সরকারের একটি সংস্থা এবং তাঁর রাজনৈতিক দলের এক নেত্রীর মিলিত যোগসাজোশে যখন আস্ত একটা জলাশয় উধাও হতে বসেছে- তখন মুখ্যমন্ত্রী কী বলবেন? উত্তরের অপেক্ষায় সকলে।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা