প্রখর দাবদাহে বাইরে বেরনোর আগে দু' বার ভাবছেন সবাই। কিন্তু তাঁর ক্লান্তি নেই. প্রবল গরমের মধ্যেই সকালে মেদিনীপুর তো বিকেলে বাঁকুড়ায় সভা করছেন। পরের দিনই আবার ছুটে আসছেন উত্তর চব্বিশ পরগনায়। দলের তরুণ নেতারা কাহিল হয়ে উঠলেও তিনি অক্লান্ত। ভোটের প্রচারে মাঝেমধ্যে নিজের পরিশ্রমের কথা বলেও ফেলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সঙ্গে অবশ্য একটি কথা বলতে ভুলছেন না তিনি, মানুষের ভালবাসায় তিনি সব ক্লান্তি ভুলে যাচ্ছেন।
এ বারের নির্বাচনে মমতার বহু কাঙ্খিত বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ হবে কি না তা সময় বলবে। কিন্তু মমতার প্রতি আমজনতার, বিশেষত মহিলাদের সমর্থনে যে ভাটা আসেনি, সেই ছবি ফের দেখা গেল দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে পদযাত্রায়।
শুক্রবার দমদম কেন্দ্রের অন্তর্গত কামারহাটি মোড় থেকে নিমতা থানা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পথ মিছিল করেন তৃণমূল নেত্রী। ওই এলাকায় এভাবে এতটা লম্বা পথ অতিক্রম করে এই প্রথম পদযাত্রা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বভাবতই তাঁর এই পদযাত্রা ঘিরে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। তৃণমূল কর্মীরা তো বটেই, মমতাকে চোখের দেখা দেখার জন্য রাস্তার দু' পাশে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু সাধারণ মানুষ। তার মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।
কামারহাটি থেকে পদযাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই একাধিক জায়গায় জনতার আবদারেই বার বার থমকাতে হয় মমতাকে। কেউ ছুঁড়ে দেন ফুল, কেউ কেউ আবার প্রবল আকুতিতে হাত বাড়িয়ে দেন একবার মমতাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য। অভ্যাসমতো মমতাও চেষ্টা করেছেন যথাসম্ভব সাড়া দেওয়ার।
মিছিল যখন প্রায় অর্ধেক পথ পেরিয়ে বেলঘড়িয়ার কালচার মোড়ের কাছে এসে পৌঁছয়, রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একদল মহিলা মমতার দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। মমতা তাঁদের দিকে এগিয়ে যেতেই বিপত্তি। মহিলাদের ভিড় কার্যত মমতাকে তাঁদের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুত এগিয়ে আসেন মমতার দেহরক্ষীরা. মমতাকে সরিয়ে আনেন তাঁরা। কিন্তু অতসক্রিয় হয়ে ওঠেন কয়েকজন পুলিশকর্মী। তাঁদের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যান দু' একজন মহিলা। নিজেকে সামলে নিয়ে এবার হস্তক্ষেপ করেন মমতা। পুলিশকর্মীদের এ হেন গা জোয়ারি আচরণে যে তিনি খুশি নন। তা বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী. মৃদু ধমকও দেন নিরাপত্তারক্ষীদের।
মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজ বুঝে পুলিশকর্মীরাও ততক্ষণে সংযত হয়েছেন। আশ্বাস পেয়ে পুলিশের লাগানো দড়ির নীচ দিয়ে মমতার কাছে এগিয়ে আসেন কয়েকজন মহিলা। হাতের নাগালে পেয়ে তাঁদের মধ্যে একজন মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন, অন্যজন পরিয়ে দেন উত্তরীয়। ভালবাসার ভিড়কে উপেক্ষা করে তখন মমতার এগিয়ে চলাই দায়।
কয়েক মুহূর্তের এই ঘটনাই মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করার পক্ষে যথেষ্ট। এই ভালবাসা যদি ভোট বাক্সেও উপচে পড়ে, তাহলেই নিশ্চিন্ত তৃণমূল নেত্রী। কারণ তৃণমূলের নেতারাও বলে বেড়ান, মমতাই আসল প্রার্থী। এই ছোট্ট ঘটনার মধ্যে দিয়ে দলের নেতাদেরও ভোটের ময়দানে জনসংযোগের পাঠ শিখিয়ে গেলেন তৃণমূল নেত্রী।