থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর প্রাণ বাঁচালেন মুসলিম যুবক
রক্ত দিতে ভাঙলেন রোজাট
নদিয়ার পলাশিপাড়ার ঘটনা
কদিন পরেই খুশির ইদ। পরিবার আর নিজের জন্য তো বটেই, পরিচিতদের উপহারও দিতে হবে। তাই শনিবার পরিবারের সঙ্গেই কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিলেন নদিয়ার পলাশির বাসিন্দা ওসমান গনি শেখ। কিন্তু ইদের আগেই দশ বছরের অচেনা এক মেয়েকে সবথেকে বড় উপহারটা দিলেন ওসমান। গোটা দেশে যখন ধর্মের নামে হিংসার রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন দশ বছরের রাখি দাসের প্রাণ বাঁচিয়ে আশার আলো দেখালে ওসমান গনি শেখ নামে ওই যুবক।
নদিয়ার পলাশিপাড়ার বাসিন্দা দশ বছরের রাখি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই রাখির জন্য মরিয়া হয়ে রক্তদাতা খুঁজছিল তার পরিবার। বর্তমানে শক্তিনগর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে রাখি। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে জানানো হয়েছিল, রক্ত পেতে গেলে ডোনার নিয়ে আসতে হবে। তার পর থেকেই রক্তদাতার খোঁজ শুরু করেন রাখির মা তাপসী দেবী। শেষ পর্যন্ত এক পরিচিতের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন ওসমান।
কিন্তু রোজা চলায় সকাল থেকেই কিছু না খেয়েছিলেন ওই যুবক। নিয়ম মতো সূর্যাস্তের পরই নমাজ পাঠ করে উপবাস ভাঙার কথা। কিন্তু রাখির সমস্যার কথা শুনে রোজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন ওসমান। কারণ খালি পেটে রক্তদান করা যাবে না। রোজা ভেঙেই তাই দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে এমএ-র ছাত্র ওসমান। তাঁকে দেখেই হাসি ফোঁটে রাখির মায়ের মুখে। শেষ পর্যন্ত ওসমান রক্ত দেওয়ার পরেই রাখির জন্য ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত মেলে।
ওসমানের জন্য যেমন রাখি এবং তার মায়ের মুখ হাসি ফুটেছে, তেমনই ওই যুবকের মুখেও রক্তদানের পরে হাসি লেগেছিল। ওসমান বলছেন, "আমার রক্ত দিয়ে যদি কারও প্রাণ বেঁচে থাকে, তার জন্য আমি গর্বিত। যখন শুনলাম রক্ত দিতে হবে, তখনই রাখির মাকে আশ্বস্ত করে কোনও চিন্তা করতে বারণ করেছিলাম।"
ওসমানরা আছে বলেই এখনও হাসতে পারে রাখিরা। নিশ্চিন্ত হন তাদের মায়েরাও। ধর্মের নামে প্রাণ না কেড়ে ওসমানের মতো প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে এলে যে আসল সুখ, সহজ এই কথাটাই হয়তো ভুলে যান অনেকে।