৫,১২৯ কোটির আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ, জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর স্ত্রী-মেয়ের বিরুদ্ধে সরব বিজেপি

  • জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন 
  • প্রশ্ন তুলে সরব বিজেপি, বিশার অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ
  • জ্যোতিপ্রির স্ত্রী এবং কন্যার আয়েরও উপরে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি
  • গোটা বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়ার দাবিতে সরব বিজেপি

ফের বিজেপি-র নিশানায় খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই সঙ্গে এবার বিজেপি-র আক্রমণের সামনে জ্যোতিপ্রিয়-র স্ত্রী মণিদীপা এবং কন্যা প্রিয়দর্শিনী। বিজেপি-র অভিযোগ, জ্যোতিপ্রিয় ক্ষমতার অপব্যাবহার করে ৫হাজার ১২৯ কোটি টাকার আর্থিক তচ্ছরূপ করেছেন। এই মর্মে রবিবার সন্ধ্যায় একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বে। যেখানে মূল বক্তা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহকারী পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য, দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য, রাজ্যে বিজেপি-র নেতা সব্যসাচী দত্ত এবং বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। সেখানে রীতিমত ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য এবং বেশকিছু আয়কর রিটার্ন-এর কাগজপত্র পেশ করা হয় বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে। 

 

Latest Videos

কৈলাস বিজয়বর্গীয় অভিযোগ করেন, এর আগেই তাঁরা করোনাভাইরাসের লকডাউনে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো চাল নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছিলেন। লকডাউনে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প থেকে গরিবদের যে চাল স্বল্পমূল্যে পাঠানো হয়েছিল তা নিম্নবিত্ত রাজ্যবাসীর হাতে পৌঁছয়নি বলেও এদিন ফের একবার অভিযো়গ করেন কৈলাস। তিনি আরও অভিযোগ করে জানান, খাদ্য দফতরের মন্ত্রী যেভাবে আর্থিক তচ্ছরূপ করেছেন তা অবাক করার মতো। কৈলাসের অভিযোগ, যে দরে চাষীদের থেকে শস্য কেনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ পাঠিয়েছিল তার একটা অংশ ঢুকে গিয়েছে খাদ্যমন্ত্রীর পকেটে। প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো শস্য কেবার সহায়ক মূল্য আদতে যায়নি গরিব কৃষকদের হাতে। সেখানে এখনও দালালদের মাধ্যমেই সরকার ফসল কেনার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। আর সরকার এবং দালালদের যোগসাজোশে ঘটে গিয়েছে এক বিশাল আর্থিক দুর্নীতি। এক এক বছরেই এই আর্থিক তচ্ছরূপের অঙ্ক প্রায় হাজার কোটি টাকা বলেও দাবি করেছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁর এবং বিজেপি নেতৃত্বের দেওয়া হিসাবে দাবি করা হয়েছে অন্তত ৫হাজার ১২৯ কোটি টাকার আর্থিক তচ্ছরূপ হয়েছে।  

এই আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আনার সময় বিজেপি নেতৃত্ব বেশকিছু তথ্যও তুলে ধরেছে। সেখানে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক থেকে শুরু করে তাঁর স্ত্রী মণিদীপা মল্লিক, কন্যা প্রিয়দর্শিনী মল্লিকের ব্যাঙ্কে জমা অর্থের হিসাবও পেশ করেছে তারা। সেই সঙ্গে আয়কর রিটার্নের প্রতিলিপিও তারা পেশ করেছে। এই আয়কর রিটার্ন জ্যোতিপ্রিয়-র স্ত্রী মণিদীপা এবং কন্যা প্রিয়দর্শিনীর বলেও দাবি করেছে বিজেপি। 

কৈলাশ বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায়র সময় জ্যোতিপ্রিয় জানিয়েছিলেন তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে সম্পত্তির পরিমাণ ৮১ লক্ষ টাকা বলে দাবি .করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। কৈলাস  বিজয়বর্গীয় এরপর ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে জ্যোতিপ্রিয়-র সম্পত্তির হিসাব সামনে এনেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ২০১৬ সালে জ্যোতিপ্রিয়-র সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। ২০২১ সালে প্রার্থী হিসাবে জ্যোতিপ্রিয় যে এফিডেফিট দাখিল করেছেন তাতে সম্পত্তির হিসাব  ৬ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা দেখিয়েছেন বলে দাবি করেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়।  মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে কোয়ন জাদুবলে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সম্পত্তি এভাবে লক্ষ টাকা থেকে কয়েক কোটি টাকায় পৌঁছল তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত বলেও দাবি করেছেন কৈলাস। এমনকী, তাঁর দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সরকারিভাবে যে সম্পত্তির হিসাব দেখিয়েছেন আদপে তা কিছুই নয়। এর থেকেও অনেক বেশি অর্থ এবং সম্পত্তি তিনি বেআইনিভাবে তৈরি  করেছেন বলেও অভিযোগ বিজেপি-র। সল্টলেকের একাধিক জায়গায় বাড়ি কেনা থেকে শুরু করে বেনামে জমিও কিনেছেন জ্যোতিপ্রিয়। সে সব তথ্যও তাঁরা সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছেন কৈলাস। 

বিজেপি নেতৃত্ব যে তথ্য পেশ করেছে তাতে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন মণিদীপা মল্লিকের ব্যাঙ্কে জমা থাকা ৪ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা হিসাব নিয়েও। মণিদীপা এই বিপুল অর্থ কোথায় থেকে পেলেন তাও এত অল্প সময়ে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত বলেও দাবি করেছেন তারা। এমনকী, একজন শিক্ষিকা হিসাবে জ্যোতিপ্রিয়-র কন্যার অ্যাকাউন্টে ৩কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা থাকতে পারে তাতেও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। তাদের দাবি, একজন শিক্ষিকা এই রাজ্যে কত অর্থ পান যে মাত্র কয়েক বছরে ৩কোটি টাকা জমিয়ে ফেলতে পারেন। 

কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, তাঁরা পুরো বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছেন এবং আরও কী ধরণের প্রমাণ সংগ্রহ করা যায় তার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনও আরটিআই-এর জবাব দেয় না বলেও অভিযোগ করেছেন ,কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি অভিযোগ করেছেন যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের খাদ্য দফতর সম্পর্কে একাধিক তথ্য জানার জন্য তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় তিনি আরটিআই করিয়েছিলেন। কিন্তু তার কোনও উত্তরই তিনি পাননি। একবার নয় দুবার তিনি আরটিআই করেও উত্তর পাননি বলে দাবি করেছেন। 

কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে শস্য কেনার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনও লেজার বা লিস্ট অনুসরণ করে না বলেও অভিযোগ বিজেপি-র। এমনকী কখন কোন কৃষকের কাছ থেকে শস্য কেনা হচ্ছে তার কোনও তালিকাও বানানো হয় না। আর তালিকা না থাকার সুযোগ নিয়েই ভারতবাসীর অর্থ এভাবেই দুর্নীতির রাস্তায় খাদ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সঙ্গীদের পকেটে ঢুকে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এই প্রসঙ্গে বেশকিছু নামও সামনে আনা হয়েছে। এরা হলেন মহেন্দ্র আগরওয়াল, বাকিবুর রহমান, কালীদাস সাহা। এরা সকলেই খাদ্য দফতরের হয়ে কৃষকদের কাছ থেকে শস্য কেনার কাজ করেন। এমন আরও অনেকে রয়েছেন যারা খাদ্যদফতরের দুর্নীতিতে যুক্ত বলেও দাবি করা হয়েছে বিজেপি-র পক্ষ থেকে। ২ মে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা। তারপর রাজ্যে বিজেপি-ই সরকার তৈরি করবে বলে দাবি করেন কৈলাস। আর সরকারে এসেই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন কৈলাস। যদিও, বিজেপি-র এই অভিযোগ সম্পর্কে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। 

Share this article
click me!

Latest Videos

PM Modi Live : প্রধানমন্ত্রী মোদীর বড় ঘোষণা! সরাসরি দেখুন
'TMC একা ৮০ শতাংশ ভোট পায় কি করে!' প্রশ্ন দিলীপ ঘোষের | Dilip Ghosh | BJP News |
'উপনির্বাচনের ফলাফল নিয়ে BJP ভাবেনা' আর কি বললেন শুভেন্দু? দেখুন | Suvendu Adhikari
খেলতে খেলতেই ঘটলো অঘটন! শোকের ছায়া Shantipur-এ, দেখুন | Nadia News Today
গান্ধীমূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে Guyana সংসদে ভাষণ, এক ঝলকে দেখুন প্রধানমন্ত্রীর (Modi) গায়ানা সফর