'তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দেব না', শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটিতে বাউল শিল্পী বাসুদেব দাসের বাড়িতে গান শুনে এবং মধ্যাহ্নভোজের পর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে গেলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সঙ্গে কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে এসে তিনি 'ধন্য' বলে মন্তব্য করেন।
রবিবার নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় এক ঘন্টা পর অর্থাৎ বেলা ১১.৩৭ মিনিটে বোলপুর কুমিরডাঙার মাঠে নামে অমিত শাহর কপ্টার। সঙ্গে ছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষ। হেলিপ্যাডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। সেখান থেকে অমিত শাহ প্রথমে চলে যান রবীন্দ্রভবনে। সেখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন। এরপর উপাচার্য রবীন্দ্রভবন ঘুরে দেখান। কবিগুরু কোথায় থাকতেন। গান্ধীজি তিনবার এসে কোথায় ছিলেন সব দেখানো হয়। সেখান থেকে চলে যান উপাসনা গৃহ। এরপর সঙ্গীত ভবনে ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশিত পাঁচ রবীন্দ্র সঙ্গীত নৃত্য দেখেন। মিলিত হন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। সেখান থেকে বাংলাদেশ ভবনে চলে যান। সেখানে বিশ্বভারতীর আধিকারিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় করেন।
বাংলাদেশ ভবন থেকে বেরিয়ে এসে অমিত শাহ বলেন, 'আজ আমি সেই মহামানবকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাই নিজেকে ভাগ্যশালী বলে মনে করি। যিনি সারা বিশ্বে ভারতীয় জ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য কলার গুরুত্ব আরও মজবুত করেছেন। গুরুদেব ঠাকুর এমন একজন যাঁর কাছ থেকে তখনকার দিনে রাষ্ট্রবাদের দুটি ধারার দুই নেতা মহাত্মা গান্ধী ও সুভাষবাবু দুজনই এক জায়গা থেকে প্রেরণা পেতেন। গুরুদেব বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন থেকে দর্শন, কলাকে যেমন এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তেমন দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে ভারতীয় সংস্কৃতি ভাষার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার প্রয়াস করেছেন শান্তিনিকেতনের মাধ্যমে।'
অমিত শাহ আরও বলেন, 'এখানকার স্বাস্থ্য, কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অর্থজগতের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ শ্রীনিকেতনের মাধ্যমে করেছিলেন গুরুদেব। দুনিয়াতে হয়তো তিনিই একজন ছিলেন যাঁর রচনা দুই রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত উপহার দেয়। তিনি নোবেল পাওয়া নিয়ে আমি পড়েছিলাম যে, গুরুদেবের জ্ঞান, সাহিত্য কবিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে নোবেল প্রাইজ। কিন্তু আমি মন থেকে মানি যে গুরুদেবকে নোবেল সম্মান দিয়ে নিজেদের স্বীকৃতি দিয়েছে নোবেল। গুরুদেবের বিচার এটাই বলে যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হল সংকীর্ণতাকে ভেঙে ফেলা। এই মহান সংস্থার ১০০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। তাঁর সেই বার্তা আমি আরও একবার মনে করিয়ে দিতে চাই সবাইকে। গুরুদেবের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ভারতীয় দর্শন, জ্ঞান, কলা, সাহিত্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাক সেটাই চাই।'
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সোজা চলে যান শ্যামবাটিতে বাসুদেব দাস বাউলের বাড়িতে। সেখানে গান শোনানো হয়, 'তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দেব না।' এই গান সোনার পর সোজা চলে যান খাবারের ঘরে। খাবারের মেনুতে ছিল ভাত, রুটি, মুগের ডাল, আলু, বেগুন, পটল ভাজা, পালং শাকের সবজি, আলু পোস্ত, পায়েস, নলেন গুড়ের মিষ্টি। খেয়ে বেরিয়ে আসার সময় বাউল পরিবারকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে যান। বাসুদেববাবুর স্ত্রী ঊর্মিলা দাস বলেন, 'খুব তৃপ্তি করে খেয়েছেন। রান্নার সুনাম করেছেন। আর গান শুনে ছেড়ে না গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।' এরপরেই তিনি পদ যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।