রাজনীতিতে দল বদল বেনজির বা বিস্ময়কর ঘটনা নয়

  • দল বদলের ঘটনা সেভাবে নতুন কিছু নয়
  • ফিরে দেখা ২০১১ নির্বাচণ
  • বাম শাসনের অবসানে শাসন ক্ষমতায় পালা বদল হয়
  • দল বদলে তৃণমূলে আসার হিড়িক কার্যত আমফানের মতো ছিল

Asianet News Bangla | Published : Dec 18, 2020 7:57 AM IST / Updated: Dec 18 2020, 01:39 PM IST

তপন মল্লিক, কলকাতা-  দল বদলের ঘটনা সেভাবে নতুন কিছু নয়। তাই সদ্য নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে তা বেনজির বা বিস্ময়কর ঘটনা বলে বিবেচিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে দল বদলের ঘটনা যে একটি প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা নিতে পারে সেটা প্রথম দেখা যায় ২০১১ সালে। 

তখন এ রাজ্যে দীর্ঘ বাম শাসনের অবসানে শাসন ক্ষমতায় পালা বদল হয়। নির্বাচনে বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে তৃণমূল কংগ্রেস এ রাজ্যের শাসনভার লাভ করে। রাতারাতি হাজার হাজার বামপন্থী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী সিপিএম ও অন্যান্য বাম দল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে ভিড় জমায়। 

আরও পড়ুনঃ জল্পনাই হল সত্যি, শুভেন্দুর পাশে কেন্দ্র, এবার জেট ক্যাটাগরির সুরক্ষা দেওয়া হল নেতাকে.

ওয়ার্ড কমিটি থেকে জেলা কমিটি; কোথায়ও পঞ্চায়েত সমিতি তো কোথাও জেলা পরিষদ বা কোথাও গ্রাম পঞ্চায়েত বা জেলার শীর্ষ নেতা, বিধায়ক প্রাক্তন বিধায়করাও তখন দল বদলেছিলেন। আর সেইসব নেতা-কর্মীদের তৃণমূল কংগ্রেসে স্বাগত জানিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

রাজনীতির বিশেষঙ্গদের কেউ কেউ বলেন, তৃণমূল নেত্রীই তখন বামফ্রন্ট, কংগ্রেসকে কার্যত টুকরো টুকরো করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। ওই সময়ের মমতার পরে তৃণমূলে সবচেয়ে ক্ষমতাবান নেতা ছিলেন মুকুল রায়। দল ভাঙানোর কাজে সেই কাজে তখন মূল কারিগর ছিলেন মুকুল রায়। পরবর্তীতে তিনি ঘাস ফুল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে গিয়ে সেই কাজটি করেছিলেন।

দল বদলে তৃণমূলে আসার হিড়িক কার্যত আমফানের মতো ছিল ২০১১ সাল থেকে পরের কয়েক বছর। ফের সেই ঝড় ওঠে ২০১৬ সালে। সে বছর ছিল বিধানসভা নির্বাচন। তৃণমূল ফের ক্ষমতায় ফিরবে, সেটা নিশ্চিত জেনেই বামফ্রন্টের বেশ কয়েকজন ভারী নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী তৃণমূলে নাম লেখান। যাদের মধ্যে রাজ্জাক মোল্লা, উদয়ন গুহ অন্যতম। তাদের পথ ধরে দিদির দলে ভিড়ে যান আরও কয়েক হাজার অনুগামী। 

 

ক্ষমতা পাওয়ার আগে পর্যন্ত তৃণমূলের লড়াই ছিল একককভাবে। কিন্তু তৃণমূল জমানার শুরু হতেই পুরনো তৃণমূল ক্রমে কোণঠাসা হয়ে অন্যদল থেকে আসা নেতা কর্মীদের চাপে। নব্য তৃণমূলদের হাতে পুরনো তৃণমূল নেতারা দলে অনেকটা অবাঞ্ছিত হয়ে পড়তে থাকেন। সেকথা ক্ষোভ অনেক সময় প্রকাশ্যে রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়েও তৃণমূলের কোনও কোনও উগড়ে ফেলেছিলেন। তা নিয়ে তোলপাড়ও হয়েছিল।

রাজনীতির বিশেষঙ্গরা বলেন, নব্য তৃণমূলীরা এই অগ্রাধিকার নাকি খোদ কালীঘাট থেকেই পেয়েছিলেন। যে কারণে দলনেত্রী বেশ কয়েকবার বলেছিলেন দলে নতুন-পুরনো সবাইকে নিয়েই চলতে হবে। কোনও বিভেদ তৈরি করা চলবে না। কিছু দিন আগে পর্যন্ত দলটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এই নতুন তৃণমূল কর্মীরাই। 

অন্য দল থেকে তৃণমূলে আসার হিড়িক চরিত্র বদলায় ২০১৬ সালে। সে বছর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এ রাজ্যে তাদের ভোট বাড়াতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি বামফ্রন্ট-কংগ্রেস নিজেদের আরও দুর্বল সাব্যস্ত করলে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী রাজনীতি করা লোকজন তৃণমূল থেকে বেশি সুবিধার লোভে বিজেপির দিকে ঝুঁকে পরেন। বিজেপির পালে হাওয়া লাগছে আঁচ পাওয়া মাত্র লোকসভা নির্বাচনের আগেই ঘাস ফুল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানো শুরু হয়। কার্যত তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএম- এই তিন দলের মধ্যে তুলনায় তৃণমূল থেকেই সব থেকে বেশি নেতা-কর্মীরা মোদির দলে ভিড় জমায়। ফের যে দল বদলের ঝড় তা লোকসভা নির্বাচনের পর। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ।

২০১১ সালে যখন হাজার হাজার মানুষ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ  দিয়েছিলেন তখন যিনি স্বাগত জানিয়েছিলেন এখন তিনিই যারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন, তাদেরকে ‘চোর’ হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। শুধু তাই নয়, দল ভাঙানোর যে কারিগর মুকুল রায় যখন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন তাঁকেও ‘গাদ্দার’ আখ্যায়িত করেন তিনি। কেবল মকুল কেন, দলত্যাগী কাউকেই তিনি চোর বলতে ছাড়েন নি। অথচ ২০১১ সালে তাদের হাত ধরে অন্য দল থেকে হাজার হাজার কর্মী তৃণমূল যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, আট বছর পরেই ঘোল গেল পালটে।

 
রাজনীতির আলোচকরা বলেন, অধিকাংশ নেতা-কর্মীর দল বদলের কার্য-কারণে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থই অনেক বেশি গুরুত্ব পায়, তাই বার বার এই দল বদলের ঘটনা ঘটছে। আর ক্ষমতায় এসে দলনেত্রী তাঁর দলকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দিতে দল বদলকেই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আজ সেই দল বদলের ধারাবাহিক ঘটনায় তিনি নিজে জ্বলছেন বেশি।

Share this article
click me!