তাপস দাস: একই জেলার দুই কেন্দ্রে স্থির হবে দুই মন্ত্রীর ভাগ্য, একই দিনে। ষষ্ঠ দফায় দুই কেন্দ্রে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ছেন দমদম উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং হাবড়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। চন্দ্রিমা ও জ্যোতিপ্রিয়, দুজনেরই বয়স ষাটের কোঠায়। জ্যোতিপ্রিয় সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি, চন্দ্রিমা রাজ্য মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী।
দলে ও মন্ত্রিত্বে নিশ্চিতভাবেই চন্দ্রিমা অনেকটাই ভারী। তৃতীয় তৃণমূল সরকার রাজ্যে গঠিত হলে, নিঃসন্দেহে তাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ দফতর যে তিনি পাবেন, সে ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাঁর উপর ভরসা কতটা তা বোঝা গিয়েছিল, চন্দ্রিমা ২০১৬ সালের নির্বাচনে হেরে যাবার পর। দিব্যেন্দু অধিকারী সাংসদ হয়ে যাবার পর, কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা উপনির্বাচন থেকে চন্দ্রিমাকে জিতিয়ে আনা হয়। এখন চন্দ্রিমা রাজ্য মন্ত্রিসভায় যে যে দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন, সেগুলি হল - আবাসন (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত), ভূমি ও ভূমিসংস্কার এবং ত্রাণ ও পুনর্বণ্টন, এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন। এর আগে মমতা মন্ত্রিসভায় তিনি আইন ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কংগ্রেসে ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস শুধু নয়, এআইসিসি-রও সদস্য। ২০০৮ সালে তিনি কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৯ সালে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের লোক হয়ে ওঠেন চন্দ্রিমা। বর্তমানে তিনি মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রিত্ব ছাড়াও দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে রয়েছেন, আছেন কোর কমিটিতেও। ১৯৭৮ সাল থেকে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করেছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা।
আরও পড়ুন-আসানসোলের অগ্নিমিত্রা কি ঘরের মেয়ে হিসেবে দখল নেবেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার?...
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুও পেশায় আইনজীবী। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের খাদ্যমন্ত্রী। চন্দ্রিমার সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়র পেশাগত মিল ছাড়াও রাজনৈতিক কেরিয়ারেও মিল রয়েছে। নিজের বিধানসভায় জ্যোতিপ্রিয় জিতেছিলেন বটে, কিন্তু দু বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০ হাজার ভোটের লিড নিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। জেলার দুটি লোকসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হবার দায়ও তাঁর ঘাড়েই পড়বে, কারণ বালু তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতিও বটে। মার্চের শেষেই বালু ঘোষণা করেছিলেন, সম্ভবত চাপ কাটাতেই, জেলার সব কটি আসনই পাবে তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ চোখ ধাঁধানো। এ ব্যাপারে চন্দ্রিমার সঙ্গে তাঁর অমিল অনেক দূর হলফনামায় যেখানে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁর মোট সম্পত্তির অর্থমূল্য ৬০ লক্ষ টাকা, সেখানে জ্যোতিপ্রিয়র সম্পত্তি ৬ কোটি টাকার। এবারের বিধানসভা ভোট, এই দুই মন্ত্রীরই অগ্নিপরীক্ষা, যে পরীক্ষাগ্রহণের দিন ২২ এপ্রিল ধার্য করেছে নির্বাচন কমিশন।