বরাবর চেনা ২২ গজে খেলেই অভ্যস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তবে আজ কেন হঠাৎ নন্দীগ্রাম যাত্রা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়বেন নন্দীগ্রাম থেকে

সোমবার এই নিয়ে শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে

১৯৯১ সালের পর আর দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র ছাড়েননি মমতা

তাহলে এইবার কেন এই কেন্দ্র বদল

 

শুরু হয়ে গিয়েছে চাল দেওয়া। বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে মেদিনীপুরের ডাকসাইটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তুলে নিয়ে বিজেপি ভেবেছিল কিস্তিমাত করবে। পাল্টা চালে হিসাবে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন আসন্ন নির্বাচনে তিনি নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়বেন। এই চাল কতটা ফলপ্রসু হবে, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে। কিন্তু, এই পদক্ষেপে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য রাজনীতিতে একটা তুমুল আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।

কেন হঠাৎ কেন্দ্র বদলের সিদ্ধান্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর? এটাই এখন রাজ্য রাজনীতিতে মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রশ্ন। নির্বাচনী রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিন্তু, কেন্দ্র বদল করতে বিশেষ দেখা যায়নি। বাংলা জুড়ে তাঁর যা জনপ্রিয়তা, তাতে তিনি স্বচ্ছন্দে রাজ্যের যে কোনও কেন্দ্র থেকে লড়তে পারতেন। কিন্তু, তাঁকে বরাবর চেনা ২২ গজেই লড়তে দেখা গিয়েছে। একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসের দিকে চোখ বোলালেই তা পরিষ্কার হবে -

Latest Videos

১৯৮৪ - নির্বাচনী রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের আগমন ১৯৮৪ সালে। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছিল জাতীয় কংগ্রেস। হেভিওয়েট সিপিএম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্য়ায়কে পরাস্ত করে, ভারতের সর্বকালের অন্যতম কনিষ্ঠ সাংসদ হয়েছিলেন।

১৯৮৯ - দ্বিতীয় নির্বাচনেই অবশ্য ব্যর্থতার সম্মুখীন হন মমতা। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকেই কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু, সিপিএম-এর মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে হেরে যান। অবশ্য তার পিছনে অনেকটাই দায়ী ছিল দেশ জোড়া কংগ্রেস বিরোধী হাওয়া।

১৯৯১ - এই বছরের লোকসভা নির্বাচনেই নিজের স্থায়ী কেন্দ্র খুঁজে পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে হারিয়েছিলেন সিপিএম-এর বিপ্লব দাশগুপ্তকে। নরসিমা রাও সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন, ক্রীড়া, যুবকল্যাণ, নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রীও হন।

১৯৯৬ - লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতার আসনটি ধরে রাখেন মমতা। পরাজিত করেছিলেন সিপিএম-এর ভারতী মুখোপাধ্য়ায়-কে। তবে ১৯৯৭ সালেই কংগ্রেস ছেড়ে বেড়িয় এসে মুকুল রায়ের সঙ্গে গঠন করেছিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস-এর।

১৯৯৮ -  দক্ষিণ কলকাতা আসন-এই পরাস্ত করেন সিপি-এম প্রার্থী প্রশান্ত কুমার শূরকে।

১৯৯৯ - তৃণমূল যোগ দিয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে। মমতা ফের জয়ী হন সেই কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্র থেকেই। এবার পরাস্ত সিপিআইএম-এর শুভঙ্কর চক্রবর্তী। বাজপেয়ী সরকারে মমতা হয়েছিলেন রেলমন্ত্রী।

২০০৪ - ২০০১ সালে তেহেলকা কাণ্ডের পর বাজপেয়ী সরকার ছাড়লেও ২০০৩ সালে ফের তৃণমূল ফিরে আসে এনডিএ-তে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি তৃণমূলের। একমাত্র জয়ী হয়েছিলেন মমতা। কেন্দ্র সেই দক্ষিণ কলকাতা। পরাজিত হয়েছিলেন সিপিএম নেতা রবিন দেব।

২০০৯ - লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, মমতা জাতীয় কংগ্রেস-এর নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটে যোগ দিয়েছিলেন। দক্ষিণ কলকাতার কেন্দ্র থেকে ফের সিপিএম-এর রবিন দেব-কে হারিয়ে টানা ষষ্ঠবারের জন্য জয়ী হন তিনি। ইউপিএ-২ মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী হন মমতা।

১৯৯১ সালের পর দক্ষিণ কলকাতা আর ছাড়েননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

২০১১ - পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পায় তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা হন মুখ্যমন্ত্রী। পরে সুব্রত বক্সির জেতা ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয়ী হন তিনি সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়-কে পরাস্ত করে। এটাই প্রথমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জয়। প্রসঙ্গত ভবানীপুর কেন্দ্রটি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের টানা ৬বার জেতা দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রেরই অন্তর্গত।

২০১৬ - পরের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর কেন্দ্র থেকেই জয়ী হয়েছিলেন। এইবার পরাজিত করেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী দীপা দাসমুন্সি-কে।

তাহলে, ২০২১-এ কেন নন্দীগ্রাম? শুধুই কি শুভেন্দু অধিকারীকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য? না এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে? বস্তুত, রাজ্য রাজনীতিতে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল এবার আর পরিচিত মাঠে খেলতে চাইছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের দাবি, কলকাতার অধিকাংশ জায়গাতেই এবার তৃণমূলের ভোটে টান পড়তে চলেছে। গত লোকসভা ভোটের সময় ভবানীপুর কেন্দ্রের একটি ওয়ার্ডে ৫০০-র কাছাকাছি ভোটে পিছিয়ে ছিলেন মমতা। বিরোধীদের দাবি, তাই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না মমতা। শোনা যাচ্ছিল কাছাকাছির মধ্য়ে ক্যানিং বা দক্ষিণ ২৪ পরগণার কোনও কেন্দ্র থেকে লড়তে পারেন তিনি। এর মধ্য়েই এল এই ঘোষণা। আসলে, দক্ষিণ কলকাতা বদলে অন্য কোথাও থেকে লড়ার হলে, নন্দীগ্রামের থেকে ভাল অন্য কোনও বিধানসভা কেন্দ্র হত না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, এক শটেই মমতা বেশ কয়েকটি গোল দিতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রথমত, যদি সত্যিই বিরোধীদের দাবি মতো ভবানিপুর কেন্দ্রে মমতার পরাজিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, এতে করে তা এড়ানো গেল। দ্বিতীয়ত, শুভেন্দু অধিকারীকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলল তৃণমূল। জনপ্রিয়তার সরাসরি টক্করে মমতার মতো পোড় খাওয়া হেভিওয়েট প্রার্থী, শুভেন্দু ম্যাজিক ভোঁতা করে দিতে পারেন। তৃতীয়ত, মমতার অগ্নিকন্যা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হতে পারে। যে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে তাঁর আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার কাহিনি আবার মান্যতা পেতে পারে। চতুর্থত, গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক নেতা দল ছাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই মনোবল হারাচ্ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। দিদির এই সাহসী পদক্ষেপ তাদের ভোটের আগে চাঙ্গা করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। পঞ্চমত, এক দশক পর ফের নন্দীগ্রামের সেই আন্দোলনের দিনগুলি মানুষের মনে আরও একবার তাজা করে তুলতে পারবে তৃণমূল। তুলে ধরা যাবে কোন লড়াই-এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা। এছাড়া, নন্দিগ্রামের কৃষক আন্দোলনকে ভিত্তি করে কৃষি আইন নিয়েও আক্রমণ করা যাবে বিজেপি-কে।

প্রথম চাল দিয়েছিল বিজেপি। পরের দানেই তা ফিরিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। শেষপর্যন্ত কারা করে কিস্তিমাত, সেটাই এখন দেখার।

Share this article
click me!

Latest Videos

চমকে উঠবেন! কৃষ্ণনগর পক্সো আদালতের বড় সাজা ঘোষণা | Nadia Latest News
West Bengal-এ জঙ্গিযোগ নিয়ে Mamata Banerjee-কে চরম তুলোধোনা Agnimitra Paul-এর! দেখুন কী বললেন
জঙ্গি গ্রেফতারে কড়া বার্তা মিঠুনের | Mithun Chakraborty #shorts #mithunchakraborty #shortsvideo
শীতের রাতে যমুনার আতঙ্ক! একের পর এক জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঘিনী | Bandwan Tiger News
'তৃণমূলের দুয়ারে সরকার এখন দুয়ারে জঙ্গি', তীব্র আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারীর | Suvendu Adhikari