করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে মালদহ জেলায়। গত ৪৮ ঘণ্টায় মালদহে কোভিড ১৯-এ পজিটিভ হয়েছেন ১০ জন। শনিবার সকালেই তিন জন নতুন করে আক্রান্তের খবর এসেছিল। এরপর সন্ধ্যায় আরও তিন জনের করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর মেলে। এছাড়াও শুক্রবার আরও ৪ জন আক্রান্তের খবর সামনে এসেছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে এই ১০ জন আক্রান্তই হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা। এর আগে মালদহে ৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এদের মধ্যে একজন আরোগ্য লাভ করে বাড়িতে ফিরে গিয়েছে। এছাড়াও আরও দুই জন আক্রান্তেরও চিকিৎসা চলছে। এহেন পরিস্থিতিতে নতুন করে ৮ মে থেকে ৯ মে-এর মধ্যে ১০ জন আক্রান্তের খবর স্বাভাবিকভাবেই জেলাবাসীর মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
জানা গিয়েছে নতুন করে আক্রান্ত তিনজন আজমেঢ় ফেরত। যে দলটি ডানকুনি পর্যন্ত স্পেশাল ট্রেনে করে এসে তারপর বাসে মালদহে এসেছিল তাদের সঙ্গে ছিল এরা। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকে অন্তত ২০০ জন প্রবেশ করেছে বলে খবর। এরা সকলেই আজমেঢ়ে তীর্থ করতে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। লকডাউন শুরু হলে এরা আজমেঢ়ে আটকে পড়েছিল। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকে যে ১০ জন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে- তাদের মধ্যে দুই জন রানিপুড়া, ৬ জন মহেন্দ্রপুর, একজন মানকিবাড়ি এবং বাকি একজন খোকরা গ্রামের।
আক্রান্ত অধিকাংশেরই বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। হরিশ্চন্দ্রপুরে স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের দাবি, এরা মোটেও আজমেঢ় ফেরত নয়, এরা ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবেই কাজ করছিল। বহু বছর ধরেই এরা এলাকাছাড়া। লকডাউনের জেরে কর্মসংস্থান নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়াতে এরা এখন সপরিবারে ফিরে আসছেন ভিটেমাটিতে। যার জেরে সংক্রমণের সংখ্যা লাগাতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় এই বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় এসেও করোনা আক্রান্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেরিয়েছে। যার জন্য অসংখ্য মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গোটা ঘটনার জন্য হরিশ্চন্দ্রপুরবাসী পুলিশ ও প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছে। কারণ, কোয়ারান্টাইন সেন্টারে না পাঠিয়ে কেন আজমেঢ় ফেরতদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
মালদহের লাগোয়া জেলা উত্তর দিনাজপুরেও ৩ জন করোনা পজিটিভ। এই তিনজনও আজমেঢ় ফেরত মালদহের দলটির সঙ্গে ছিল। ফলে দুই জেলায় এই মুহূর্তে মোট ১৩ জন আক্রান্ত। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের আক্রান্ত ১০ জনের চিকিৎসা চলছে নারায়ণপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। এই নার্সিংহোমটিকে সরকার ভাড়া নিয়ে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তুলেছে। মালদহে আর আগে রতুয়া থেকে এক জন এবং মানিকচক থেকে ২ জন করোনাপজিটিভ হয়েছিলেন। এরাও পরিযায়ী শ্রমিক। এখন পর্যন্ত মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে যে কয় জন করোনা পজিটিভ-এর খোঁজ মিলেছে, তারা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। সম্প্রতি তারা ভিন রাজ্য থেকে রাজ্যে ফিরেছেন। করোনাভাইরাসের এই আতঙ্কে কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের রাাজ্যে ফেরানো হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকে এক্ষেত্রে টানছেন ওড়িশার প্রসঙ্গ। কারণ, ওড়িশা থেকে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করাদের সুরক্ষার জন্য অন্যরাজ্যগুলি-কে অনুরোধ করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। এর জন্য যত অর্থ খরচ হবে তাও দিতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী।