শীত আসছে। পর্যটকরা এখন দার্জিলিংমুখী। তবে, পর্যটকদের একটা বড় অংশ এখন শুধু দার্জিলিং-এ যান এমনটা নয়, এই শৈলশহর-কে ঘিরেও বেশকিছু ট্যুরিস্টি স্পট রয়েছে সেখানেও তাঁরা যান। এমনই এক জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটের নাম লাতপঞ্চর। মনোরম প্রাকৃতিক শোভায় সমৃদ্ধ এই এলাকা। এবার সেখানেই বাঘ দেখার দাবি সামনে এল। ঊর্মিলা থাপার নামে এক মহিলা এই দাবি করেছেন। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার সময়ও সেই একই দাবি করেছেন ঊর্মিলা। যদিও, তিনি জন্তুটির মুখ দেখতে পাননি। কিন্তু, বিশাল চেহারার সঙ্গে সেই জন্তুর সারা গায়ে ছিল ডোরাকাটা দাগ এবং বিশাল কান। ঊর্মিলা তাঁর বয়ানে এমনই দাবি করেছেন।
২৪ অক্টোবর বাড়ির কাছে একটি মেলায় যাচ্ছিলেন ঊর্মিলা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্কুলের বেশকিছু ছেলেমেয়ে এবং অন্যান্য শিক্ষক। লাতপঞ্চরের বাগগোলার কাছে তিনি একটি বিশালাকার জন্তুকে রাস্তা পেরিয়ে পাশের জঙ্গলে ঢুকে যেতে দেখেন বলে দাবি করেছেন ঊর্মিলা। প্রথমে বিশালাকার জন্তুটিকে দেখে তিনি নাকি কিছুক্ষণ সম্বিৎ হারিয়ে ফেলেছিলেন। আতঙ্কে রাস্তার মধ্যেই পা আটকে গিয়েছিল ঊর্মিলার। তাঁর দাবি কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাফ দিয়ে পাশের জঙ্গলে মিলিয়ে যায় বিশালাকার জন্তুটি। তবে, মিলিয়ে যাওয়ার আগে তিনি নাকি স্পষ্ট দেখেছেন জন্তুটি বিশাল আকারের এবং তার গায়ে হলুদ রঙে-র উপরে ডোরাকাটা দাগ ছিল। ঊর্মিলার দাবি অবশ্য মানতে কেউ-ই রাজি নয়। অনেকেই বলেছেন তিনি চিতাবাঘ দেখেছেন। দার্জিলিং-এর এই এলাকাতেও প্রচুর সংখ্যক চিতাবাঘ রয়েছে এবং প্রায়শই তাদের দেখা যায়। যদিও, ঊর্মিলার দাবি তিনি চিতাবাঘ ভালোমতোই চেনেন। কিন্তু তাঁর দেখা জন্তুটির সঙ্গে চিতাবাঘের আকার বা রঙের কোনও মিল নেই। তিনি নিশ্চিত যে বাঘই দেখেছেন।
এই ঝোঁপেই তিনি বাঘটিকে মিলিয়ে যেতে দেখেছেন বলে দাবি ঊর্মিলা থাপা-র
জানা গিয়েছে, ঊর্মিলা আতঙ্কে পড়িমড়ি করে পিছন ফিরে দৌড় লাগান। আর এই সময় তিনি রাস্তার উপরে মুখ থুবড়েও পরে যান। তাঁর মনে হয়েছিল ওই বিশাল জন্তুটি তাঁর দিকেই ছুটে আসছে। ঊর্মিলার সঙ্গে থাকা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যান্য শিক্ষকরাও আতঙ্কে দৌড় লাগান। তাঁর দাবি ঘিরে চাঞ্চল্যও ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
এশিয়ানেট নিউজের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার সময়ও ঊর্মিলা তাঁর দাবিতে অনড় ছিলেন। তিনি পরিস্কার করে জানান, জন্তুটি-র মুখ তিনি দেখতে পাননি। তবে বিশাল কান তাঁর চোখে পড়েছে এবং বিশাল শরীরের উপরে হলুদ-কালো ডোরাকাট দাগও দেখতে পেয়েছেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস জন্তুটি বাঘ-ই ছিল। ঊর্মিলার দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে যাওয়ায় ৩০ তারিখে বন দপ্তরের একটি দল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং তাঁর কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করে।
বনদপ্তর সূত্রে খবর, ঊর্মিলা-র দাবিতে তাঁরা এখনই ভরসা করতে পারছেন না। কারণ, এই এলাকায় আগে বাঘ দেখা গেলেও গত কয়েক দশকে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। এলাকায় অসংখ্য চিতাবাঘ রয়েছে। তবে তাদের আকার কোনওভাবেই বাঘের মতো নয়। বনদপ্তরের এক আধিকারিকের মতে, ঊর্মিলা একটি পরিপূর্ণ বয়সে চিতাবাঘ-কে দেখে থাকতে পারেন। কিছুদিন আগে চিতাবাঘের আক্রমণে এখানে একটি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। এরপর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক রয়েছে। তবে, গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বনদফতরের ওই আধিকারিক। তিনি জানিয়েছেন, যেখানে বিশাল জন্তুটি-কে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেখানে পায়ের ছাপ খোঁজার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও আশপাশের জঙ্গলে কড়া নজর রেখেছেন তাঁদের কর্মীরা। এই মুহূর্তে ঊর্মিলার দাবি তাঁদের পক্ষে মানা সম্ভব হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন বনদপ্তরের ওই আধিকারিক।
এখানেই রাস্তার উপরে চোট পেয়েছিলেন তিনি, দেখাচ্ছেন ঊর্মিলা থাপা
ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ এবং সেজ স্ট্রিপস অ্যান্ড গ্রিন আর্থ নামে সেভ দ্য টাইগার-এর স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন চালানো স্বাগ্নিক সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ভুটান থেকে লাভা-লোলগাঁও এবং নেওড়াভ্যালি দিয়ে সিকিম পর্যন্ত বাঘেদের একটি পুরনো করিডর ছিল। কিন্তু বসতি স্থাপন এবং জঙ্গল নিধনে সেই করিডর-এর বাঘেদের আনাগোনা কমে যায়। নেওড়াভ্যালিতে বাঘেদের অস্তিত্ব টের পাওয়া গিয়েছে। ফলে, ঊর্মিলার দাবি উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। কারণ, লাতপঞ্চর এই বাঘেদের এই পুরনো করিডরে অধীনেই আসে।
নেওড়াভ্যালিতেও বাঘের দেখা পাওয়া নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল। এক গাড়ি চালক পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার সময় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখেছিলেন বলে প্রথমে দাবি করেন। পরে পর্যটকদের একটি দলও একই দাবি করে। এরপরই বনদফতর এই রাস্তায় ট্র্যাপ ক্যামেরা বসায়। আর এতেই নেওড়াভ্যালি-তে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।