পুলিশের খাতায় হুব্বা শ্যামলের নামকরণ হয়েছিল প্যাথোলজিক্যাল কিলার হিসাবে। যাদের খুন করাটা মজ্জাগত- কারণে-অকারণে নৃশংতার সঙ্গে খুন করে চলে,-অপরাধ বিজ্ঞানে তাদের প্যাথোলজিক্যাল কিলারের তকমা দেওয়া হয়। হুব্বাও তেমন ছিল। নেশার ঘোরে কেমন যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকত শ্যামল। আর সেখান থেকেই তার নামকরণ হয়ে যায় হুব্বা শ্যামল।
তাজা রক্তের ছিঁটে ছিটকে শরীরে এসে পড়লে তৃপ্ত হতো তার নৃশংসতা। রক্তমাখা স্নান যেন তাকে করে তুলতো নেশাতুর। তার এই নেশা এতটাই সাংঘাতিক ছিল যে নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ থাকতো না। ক্ষুধার্ত বাঘ যেমন তার শিকার খুঁজে বেড়ায় পাগলের মতো, ঠিক তেমনি সে রাতের অন্ধকারে রক্তস্নানের মজা নিতে নামতো খুনের হোলিখেলায়। গলার কাছ থেকে কাঁধ বেয়ে আড়াাড়িভাবে কোমর পর্যন্ত ছুরির কোপে ছিন্নভিন্ন করে দিতে ভালোবাসত সে। এমন খুনের নামও দিয়েছিল সে, 'পৈতে কাট'। হায়দরাবাদের রায়তু বাজারে মাছ কাটার কতগুলো কাট জনপ্রিয়, যেমন বাঙালি কাট, অন্ধ্রা কাট। পৈতে কাট-এর কাহিনি যেন মাছের এমন সব কাটের কাছাকাছি ছিল। তার তাজা রক্তের ঘ্রাণের নেশা এতটাই তীব্র ছিল যে শত্রুপক্ষের কাউকে না পেলে নিজের দলেরই ছেলেদের 'জবাই' করে দিতে সে। কলকাতার শহরতলির অপরাধ ও খুনের এই বেতাজ বাদশার নাম ছিল হুব্বা শ্যামল। এহেন ঘৃণ্য খুনির রক্তমাখা দেহটা যখন পুলিশ পেয়েছিল তখন তাতেও ছিল সেই পৈতে কাট। মানে হুব্বা শ্যামল যেমনভাবে শিকারদের খুন করত, তার হত্যাকারীরাও একইভাবে তাকে খুন করেছিল।
পুলিশের খাতায় হুব্বা শ্যামলের নামকরণ হয়েছিল প্যাথোলজিক্যাল কিলার হিসাবে। যাদের খুন করাটা মজ্জাগত- কারণে-অকারণে নৃশংতার সঙ্গে খুন করে চলে,-অপরাধ বিজ্ঞানে তাদের প্যাথোলজিক্যাল কিলারের তকমা দেওয়া হয়। হুব্বাও তেমন ছিল। নেশার ঘোরে কেমন যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকত শ্যামল। আর সেখান থেকেই তার নামকরণ হয়ে যায় হুব্বা শ্যামল।
ছোট থেকেই রিষড়া রেলগেটের কাছে গিয়ে সমানে মালগাড়ির যাতায়াত দেখতো শ্যামল। পড়াশোনার বালাই নেই। সারাদিন টো-টো কোম্পানি। বাবা ছিলেন হুগলির শ্রীদূর্গা কটন মিলের শ্রমিক। কোন্ননগরের ধর্মডাঙায় শ্যামলদের পুরো পরিবার থাকতো। পাঁচ ভাই-এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট শ্যামল। কোনওমতে ঠেলেঠুলে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়েছিল। তারপর পড়াশোনাকে বাইবাই। বয়স ১০ পার করতেই নেশায় হাতেখড়ি হয় শ্যামলের। তার এমন নেশায় সঙ্গী হয়েছিল দাদা বাচ্চু। মাত্র চোদ্দ বছর বয়স থেকে সবধরনের নেশায় হাত পাকিয়েছিল শ্যামল। কিন্তু নেশার খরচ জোগাতে তো হবে। তাই স্থানীয় অ্যালকালি কারখানায় রাতের অন্ধকার মালপত্র চুরি শুরু করে শ্যামল। কিন্তু, সেই চোরাই মাল বেচে যে অর্থ আসত তাতে চলত না। জুয়া খেলা ছিল শ্যামলের অন্যতম নেশা। কিন্তু পকেটে অর্থ না থাকলে জুয়ার বোর্ডে বসতে অসুবিধা। প্রায়ই মাঝপথে অর্থের অভাবে খেলা ছেড়ে উঠে পড়তে হত।
শ্যামলের প্রথম খুন এক ছিনতাই-এ। কোন্ননগরের এক কারখানার এক কর্মী সাইকেলে করে শ্রমিকদের মাইনের অর্থ ব্যাঙ্ক থেকে তুলে ফিরছিলেন। শ্যামল সেই ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় এবং তার আগে ওই কর্মীর পেটে সোজা ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। এরপর আস্তে আস্তে অপরাধের মাত্রা ও বিস্তার ঘটাতে শুরু করে শ্যামল। একটা খুন তাকে খুব সাহসী করে তুলেছিল। জায়গায় জায়গায় দল বানিয়ে ডাকাতি করতে শুরু করে শ্যামল। মূলত কোন্ননগর এলাকা ও তার আশপাশেই এই দৌরাত্ম চালাতে থাকে সে। যারমধ্যে ওয়াগন ব্রেক ছিল অন্যতম। পুলিশের তাড়া খেয়ে ৮৬-৮৭ সালে এলাকা ছাড়া হতে হয় শ্যামলকে। মহেশতলায় অঞ্চলে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার হয়ে কাজ করতে শুরু করে সে।
আরও পড়ুন- হ্যাকারদের হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন ফোন, মেনে চলুন কয়েকটি সহজ টিপস
এই রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে শ্যামল মহেশতলা থেকে তারে অপরাধের সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটাতে থাকে। কখনও হাওড়ায় ছাঁট মালের কালোবাজারিতে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ট্রেনে ডাকাতি, সুপারি কিলিং-এৎ মতো কাজ। জীবীতকালে হুব্বা শ্যামলের বিরুদ্ধে ২০টি সরাসরি খুনের মামলা দায়ের হয়েছিল। এগুলোর তো হিসেব পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু যে সব খুনের হদিশ মেলেনি, সেই সংখ্যাটা ধরলে হুব্বা শ্যামলের বিরুদ্ধে কত খুনের কেস দিতে হত তা আজও পুলিশ মহলের কাছে একটা প্রশ্ন।
এভাবেই সুপারি কিলিং-এর এক কেসে মোঘলসরাই-এ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল শ্যামল। মাসখানেকের কারাবাস কাটিয়ে বাইরে আসতেই গ্যাং তৈরির বিষয়ে জোর দেয় শ্যামল। হাওড়ার কুখ্যাত সাট্টা কারবারি রাম অবতারের সাট্টা প্যাড লেখা রমেশ মাহাতোকে নিজের গ্যাং-এর সেকেন্ড ম্যান বানায় শ্য়ামল। এর সঙ্গে শ্যামলের গ্যাং-এ আসে বেনারসি বাপি, যার পুরো নাম বাপি খাস্তগির। লম্বা চেহারার বাপি-র জন্ম ও বেড়ে ওঠা ছিল বেনারস। এছাড়াও শ্যামলের গ্যাং-এর আর এক মারাত্মক অপরাধী ছিল- যার নাম নেপু গিরি। খুন করতে সিদ্ধহস্ত সে। নির্বিকারে নির্মম নৃশংসতার সঙ্গে খুন করত নেপু। এর বাইরেও শ্যামলের গ্যাং-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল মন্টু, সত্য, পুতন, চিকুয়া, জিতেন্দর।
আরও পড়ুন- সত্যি কি শান্তি পেয়েছিলেন শ্রীদেবী, গোপনে বনি কাপুরের কোন চাপ সহ্য করতে পারতেন না হাওয়া হাওয়াই স্টার
মহেশতলা থেকে ফের কোন্ননগরে নিজের পাড়াতে ফেরার চালাচ্ছিল শ্যামল। যদিও, শ্যামলের অঙ্গুলিহেলনে তার গ্যাং কোন্ননগর থেকে রিষড়া ও শ্রীরামপুর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছিল। এমনকী এই অঞ্চলে যত ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছিল তার পুরো নেতৃত্বে ছিল শ্যামল-এর গ্যাং। ১৯৯৫ থেকে ৯৬ সালের মধ্যে পাকাপাকিভাবে কোন্ননগর এলাকায় ফিরে এসেছিল শ্যামল। এলাকার যত সদ্য বন্ধ হওয়া কারখানা ছিল রাতের অন্ধকারে তা ফাকা করে দেওয়ার ছক কষে কাজ করতে শুরু করে শ্যামল। তবে, এইসব কারখানা থেকে শ্যামলের লোকেরা কেউ মাল চুরি করতো না। অন্য কাউকে দিয়ে মাল চুরি করানো হত এবং পরে তা শ্যামলের কাছে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হত। এতে শ্যামলের গ্যাং-এর ছেলে-ছোকরাদের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এইভাবে ফাকা হয়ে যায় রিষড়ার বিন্দাল ফ্যাক্টরি।
এলাকায় ফিরে এসে টিকে থাকাটা সহজ ছিল না শ্যামলের পক্ষে। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল বাঘা। আগে ভোলানাথ দাশ ওরফে বাঘা শ্যামলের গ্যাং-এই ছিল। কিন্তু বখরা নিয়ে ঝামেলা এতটাই চরম আকার নেয় যে বাঘা বেরিয়ে গিয়ে নতুন গ্যাং তৈরি করে। কোন্ননগরের পাশে কানাইপুর ছিল বাঘা-র দখলে। এই বাঘা ও শ্যামলের গ্যাং একটা সময় গ্যাং-ওয়ারে জড়িয়ে পড়ে। রোজ রাতে দুই দলই একে অপরের দলের কাউকে না কাউকে নৃশংসভাবে খুন করত। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত শ্যামল ও বাঘা-র লড়াইয়ে তটস্থ ছিল পুলিশ প্রশাসন। একবার রাতের অন্ধকারে শ্যামল তার দলবল নিয়ে বাঘার বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আগুন জ্বালিয়ে দেয় বাড়িতে। বাঘা কোনওমতে পালিয়ে গেলেও শ্যামলের দলের হাতে ধরা পড়ে বাঘার চার সঙ্গী। এরপর এদের খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে পুকুর পারে ফেলে দিয়েছিল শ্যামলের দল।
কোন্ননগরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী হয়ে হুব্বা শ্যামলের ত্রাস কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। রোজই কোনও না কোনও অপরাধের জন্য সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকত শ্যামল। পুলিশ হাজার চেষ্টা করেও শ্যামলের নাগাল বের পেত না। কোনও না কোনওভাবে চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে যেত শ্যামল। পুলিশ প্রশাসনেও নিজের সোর্স তৈরি করেছিল শ্যামল। তার খোঁজে পুলিশ বের হলেই খবর পৌঁছে যেত। এমনকী, এলাকায় কৌশলে এমন একটা রবিনহুড ইমেজ তৈরি করেছিল শ্যামল যে সাধারণ এলাকাবাসীও সোর্স হিসাবে কাজ করত। পুলিশের গাড়ি দেখলেই বা এলাকায় সিভিল ড্রেসে ঘোরা কোনও পুলিশকে দেখলেই খবর পৌঁছে যেত শ্যামলের কাছে। শ্যামলকে ধরার একাধিক অভিযান করেছিল পুলিশ। কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থ হত।
২০০ সালের পর থেকে শ্যামল আস্তে আস্তে অপরাধীর তকমা ঘুচিয়ে ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা আঁটে। এমনকী এই ব্যবসায়ী পরিচয়ে এক ক্লিন ইমেজে সে যাতে রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করতে পারে তার প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছিল। এর প্রথম ধাপে, সে প্রোমোটারির ব্যবসায় নামে। ভয় দেখিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে অত্যন্ত কম দামে জমি কেড়ে নিত শ্যামল ও তার দল। এরপর সেখানে ইমারত খাঁড়া করে বিক্রি করে দিত তারা। এভাবে কোন্ননগর থেকে রিষড়া অঞ্চলে একটা সময় ৯০ শতাংশ রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার দখল নিজের কাছে নিয়ে আসে শ্যামল। কুখ্যাত এই অপরাধীর আয় যত বাড়তে থাকে ততই সিস্টেমের দুর্নীতিপরায়ণ অফিসারদের পকেট ভরতে থাকে। ফলে শ্যামলের নাগাল পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যায়।
কিন্তু, সবকিছুর-ই একটা লিমিট থাকে। ২০০৫ সালে প্রোমোটার এবং তার পরিবারকে খুনের চক্রান্ত করতে গিয়ে সিআইডির জালে ধরা পড়ে যায় শ্যামল। প্রোমোটারের পরিবারকে যে শ্যামল নিকেষ করতে চাইছে সেই মেসেজ সিআইডি ডিকোড করে ফেলে। এরপরই শুরু হয় তৎপরতা। শ্যামলকে যে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না তা ঠিক করে ফেল রাজ্য পুলিশের এক্কেবারে উপরের মহল ও প্রশাসন। শ্যামলের একাধিক মোবাইল নাম্বার ছিল। কোনও একটা ফোন থেকে একবারের বেশি করতে চাইতো না। এমনই একটি ফোনকে ট্যাপ করে সিআইডি জানতে পেরেছিল শ্যামল বাগুইআঁটিতে কোনও মহিলার সঙ্গে সময় কাটাতে আসবে। কোন সম্ভাব্য রুটে শ্যানল বাগুইআঁটি আসতে পারে তা তার আগের সব মোবাইলের লোকেশন দেখে একটা ছক বের করে সিআইডি। সেই মোতাবেক হুগলি থেকে বাগুইআঁটি পর্যন্ত পুলিশের নজরদারি বসানো হয়। শীর্ষস্থানীয় অফিসাররা সিভিল ড্রেসে রাস্তায় দাড়িয়ে টহল দিতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে মোবাইলের লোকেশনও ট্র্যাকিং শুরু হয়। কিন্তু, বিকেল পর্যন্ত একাধিক নাম্বার থেকে পুলিশের চোখে বিভ্রান্তি তৈরি করে শ্যামল। এক একটা নম্বরের লোকেশন এক একটা স্থানে। আরও একটা ব্যর্থ অভিযানের জন্য পুলিশ মানসিক প্রস্তুতি নিয়েও ফেলেছিল। কিন্তু আচমকাই শ্যামলের একটি নম্বরে ট্যাপ করে কিছু কথোপকথন ধরে ফেলে সিআইডি। দেখা যায় সেই নম্বরের লোকেশন ভিআইপি রোডের হলদিরামের দিকে। কলকাতা বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটের সামনে খোজ ডিআইজি সিআইডি এবং তার দলবল টহল দিচ্ছিলেন। ডিআইজি সিআইডি-র নেতৃত্বে দলটি নম্বরের দেখানো লোকেশন ধরে এগিয়ে চলে। কিন্তু সিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে থমকে যায় সেই লোকেশন। সিআইডি-র দল কোনওভাবেই ট্রেস করতে পারছিল না যে হুব্বা শ্যামল কোথায় গিয়ে ঢুকল। আচমকাই হুব্বা শ্যামলের নম্বরে একটি ফোন। কিন্তু দুটো শব্দ খরচ করেই ফোনে সঙ্গে সঙ্গে কেটে দিল শ্যামল। সবখানেই অপরাধীরা ভাবে তারা কোনও সূত্র ছেড়ে যাচ্ছে না। কিন্তু কোনও না কোনওভাবে সে সূত্র ছাড়ে। পড়ে অপরাধী ধরাও পড়ে সেই সূত্রের ভিত্তিতে। এখানেও শ্যামলের এত দ্রুত ফোন কেটে দেওয়া নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করে দেন ডিআইজি সিআইডি এবং তাঁর দল। এক তরুণ অফিসার হিমাদ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি মনে ধরল ডিআইজি সিআইডি-র। হিমাদ্রীর দাবি ছিল সিটি সেন্টারের কোনও সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখছে শ্যামল। তাই তড়িঘড়ি ফোন কেটে দিয়েছে। গা-ঢাকা দেওয়ার ওটা আদর্শ জায়গা। সিআইডি-এবার সিটি সেন্টারের সিনেমাগলের কাউন্টার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করে নিল। কোন শো এই মুহূর্তে চলছে। কটা থেকে শুরু হয়েছে এবং কটা পর্যন্ত চলবে। সমস্ত কিছু বিশ্লেষণ করে সিআইডি মোটামুটি নিশ্চিত হল হুব্বা শ্যামল হিন্দি সিনেমা যেখানে চলছে সেখানে লুকিয়ে রয়েছে। কারণ অন্য সিনেমা হলের মধ্যে শ্যামলের ঢোকাটা চরিত্রবিরোধী হবে। যে হিন্দি সিনেমা চলছিল তা শ্যামলের চরিত্রের সঙ্গে খাপ খায়। সেক্স ও ভায়েলেন্সে ভর্তি। ঠিক হল সিনেমার শো ভাঙলে এক্সিট পয়েন্টে দুটো পয়েন্টে সিআইডি দল পজিশন নেবে।
শো ভাঙতেই একের পর এক মানুষ বাইরে বের হতে শুরু করে। কিন্তু শ্যামলের দেখা নেই। আচমকাই একটি লোককে দেখে সন্দেহ হয় তরুণ অফিসার হিমাদ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি শ্যামলের নাম ধরে ডাক দিতেই সেই ব্যক্তি পিছন ফেরে। ব্যাস মুহূতের মধ্যে হুব্বা শ্যামলের হাত নিজের কব্জি জোরে চেপে ধরেন ডিআইজি সিআইডি। হুব্বা শ্যামলের সঙ্গে আরও একজন লম্বাটে ছেলে ছিল। বেনারসি বাপি। হিমাদ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় ততক্ষণে বেনারসি বাপি-র দিকে রিভলবার তাক করে দিয়েছেন। হুব্বা শ্যামল হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে ডিআইজি সিআইডিও রিভলবার তাক করে মাথা লক্ষ্য করে। ততক্ষণে সিআইডি-র বাকি টিম সিটি সেন্টারের ভিতরে ঢুকে এসেছে। লোকের মধ্যে আতঙ্ক। সিটি সেন্টার থেকে বিধাননগর পুলিশকে ফোন করা হয়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই ডিআইজি সিআইডি-র নেতৃত্বে হুব্বা শ্যামল এবং তার সঙ্গী বেনারসি বাপিকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। এদিকে লোকজন তখন চিৎকার করছে কিডন্যাপ কিডন্যাপ বলে। ইতিমধ্যে ডিআইজি সিআইডি নিজে উত্তর ২৪ পরগণার পুলিশ সুপারকে ফোন করে হুব্বা শ্যামলের গ্রেফতারির খবর দেন এবং সিটি সেন্টারের সামনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বলেন। পুলিশ এসে সিটি সেন্টারে আতঙ্কগ্রস্তদের বোঝায় যে সিআইডি এক গোপন খবরের ভিত্তিতে এক দাগী আসামীকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। কোনও কিডন্যাপিং হয়নি।
হুব্বা শ্যামলকে বেশিদিন জেলে আটকে রাখা যায়নি। কারণ অধিকাংশ ঘটনার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছিল না। আর যে কয়েকটি কেসে সাক্ষী ছিল তারা সকলেই আদালতে উল্টো সাক্ষ্য দেয়। ফলে এক বছরের মধ্যেই ছাড়া পায় শ্যামল। এলাকায় ফিরও আসে। কিন্তু, হুব্বার নেতৃত্বে এবার মানতে অস্বীকার করে রমেশ মাহাতো। শ্যামলের রাইট হ্যান্ড। এক রাতে এই রমেশের নেতৃত্বেই শ্যামলকে খুন করে নেপু এবং তার দলবল। যারা একটা সময় হুব্বা শ্যামলের হাত ধরে গ্যাং-এ এসেছিল। অপরাধ দুনিয়ার ভাগ্যটাই এমনি। ২ দিন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না শ্যামলের। তার দুই স্ত্রী শ্যামলের নিখোঁজের জন্য পুলিশের অভিযোগ করেছিল। বৈদ্যবাটির এক খাল থেকে উদ্ধার হয় শ্যামলের দেহ। এক্কেবারে 'পৈতে কাট'- কাঁধ থেকে আড়াআড়ি কোমর পর্যন্ত ধারাল অস্ত্রে ফালা ফালা করা ছিল দেহ। শ্যামলের প্রিয় খুনের পদ্ধতি তার উপরেই প্রয়োগ করেছিল রমেশ, নেপু-রা।