ভার্চুয়াল সভাই গড়ে দিতে পারে প্রচারের রূপরেখা, অমিত শাহ-এর উপরই লগ্নি বঙ্গ বিজেপির

রাত পার হলেই অমিত শাহের ভার্চুয়াল সমাবেশ

তাকে কেন্দ্র করে রাজ্য বিজেপি-তে দারুণ উৎসাহ

এর আগে লোকসভা ভোটে কাজ করেছিল অমিত ম্যাজিক

রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে এই সমাবেশ

 

amartya lahiri | Published : Jun 8, 2020 3:35 PM IST

রাত পার হলেই রাজ্য়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের ভার্চুয়াল সমাবেশ। আর তাকে কেন্দ্র করে রাজ্য বিজেপি-তে দেখা যাচ্ছে দারুণ উৎসাহ। বস্তুত, রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছে করোনাভাইরাস মহামারি ও লকডজাউনের জড়তা কাটিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির ক্যাডারদের মনোবল চাঙ্গা করতে এবং আগামী বছরের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের পথ তৈরি করে দিতে পারে অমিত শাহ-এর এই সভা।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অমিত শাহ এই সমাবেশে বক্তৃতা দেবেন। সেখানে কেন্দ্রের মোদী সরকারের সাফল্যের পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তা তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজ্যের প্রায় ৫০ লক্ষ লোকের কাছে এই সমাবেশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে।

বিজেপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং ঘূর্ণিঝড় আমফানের জোড়া বিপর্যয়ের পরে, কেন্দ্রের সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ত্রাণের কাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার জনসাধারণের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। যার জেরে মানুষের মধ্যে এক নদিরবিহীন ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সমাবেশ বাংলার মানুষকে বুঝিয়ে দেবে কীভাবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে আত্মনির্ভর করে তুলতে পারে। টিএমসি-র তৈরি সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে বিজেপির হয়ে প্রচার করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু রাজ্যে দলের প্রচারকে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন অমিত শাহ-ই। ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৮ টি আসনে জয় দেখিয়ে দিয়েছিল অমিতের কৌশল কতটা কার্যকরী হতে পারে। তারপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বাংলার মানুষের সিদ্ধান্ত তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বড় ভূমিকা নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অমিত শাহ নিজেও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বাড়তি উৎসাহী। ওড়িশা ও বাংলা - পূর্ব ভারতের এই দুই রাজ্যে বিজেপির বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি। বাংলায় বিজেপি এখন নিজেকে প্রধান বিরোধী দল হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অবস্থায় মহামারি মোকাবিলা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা, ত্রাণের কাজ নিয়ে প্রশ্ন - এইরকম নানা সমস্যায় জর্জরিত তৃণমূল সরকারকে ধাক্কা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ব্যক্তি অমিত শাহ-ই এমনটাই মনে করছে বঙ্গ বিজেপি।

এমনকি তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ধীর ধীরে নরেন্দ্র মোদীকে ছেড়ে অমিত শাহকেই আক্রমণের প্রধান নিশানা করেছেন। গত কয়েক মাসে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেই তা স্পষ্ট। মার্চের শুরুতে রাজ্যে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের সমর্থনে অমিত শাহ সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সেই অনুমতি দিতে চায়নি রাজ্য প্রশাসন। এমনকী লকডাউনের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে বারবার অমিত শাহ-এর সঙ্গেই দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো থেকে শুরু করে করোনা রোগীর প্রকৃত সংখ্যা, শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন তথা পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা বিভিন্ন সময়েই কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছেন মমতা ও অমিত শাহ। মোদী সরকার বিশেষ করে অমিত শাহ এইসব বিষয়ে রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রাখছে বলে অভিযোগ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

কাজেই, রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অমিত শাহ-এর এই ভার্চুয়াল সমাবেশ দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। বস্তুত, সোমবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সমাবেশকে নিয়ে বিজেপিকে অর্থের খোঁচা দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, এই ধরণের সভা করতে যা খরচ হয়, তা তৃণমূল কংগ্রেসের নেই। অপরদিকে, বিজেপিরর রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সোশ্য়াল মিডিয়ার মাধ্যমে ভার্চুয়াল সভা করতে যে এক পয়সাও খরচ হয় না, তা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর জানা নেই। কাজেই, অমিত শাহ-এর এই ভার্চুয়াল সমাবেশই রাজ্যে বিধানসভার দামামা বাজিয়ে দিতে পারে।
 

 

Share this article
click me!