হিসেব করে চাল দিচ্ছেন মমতা-মোদী, তরুণ ভোটারদের উপরেই ভরসা রেখে দাবি বুদ্ধদেবের

  • দলীয় মুখপত্রে সাক্ষাৎকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর
  • তরুণ ভোটারদের মন পাওয়ার জন্য বামেদের পরামর্শ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের
  • ধর্মীয মেরুকরণেই নজর মমতা-মোদীর, মত বুদ্ধদেবের
  • বামেদের ঘুরে দাঁড়ানো নিয়েও আশাবাদী তিনি

debojyoti AN | Published : May 6, 2019 5:10 AM IST / Updated: May 06 2019, 11:07 AM IST

এবারের লোকসভা নির্বাচনেও বাংলায় অন্তত বামেদের নিয়ে সেভাবে আশার আলো দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে আমজনতা। বাম নেতারাও বুক ঠুকে বলতে পারছেন না, খাতা খুলবেই। বরং গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য থেকে পাওয়া দু'টি আসন ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ সিপিএম-সহ বাম দলগুলির কাছে। এই পরিস্থিতিতে শেষ তিন দফা ভোটের আগে মুখ খুললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দলীয় মুখপত্র গণশক্তিতে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমান নির্বাচনে তৃণমূল এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন তিনি।. দলের নেতা-কর্মীদের তাঁর পরামর্শ, তৃণমূলের গরম তেলের কড়াই থেকে বিজেপি’র জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেওয়া যে বুদ্ধিমানের কাজ নয় তা মানুষকে বোঝাতে হবে। নিজের দল বা বামেদের শক্তিকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়েই বিশ্লেষণ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, আগের তুলনায় পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই বামেদের নিরিখে এসেছে. গোটা দেশে বামেরা এবার ভাল ফল করবে বলেই আশাবাদী তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চৌকিদার স্লোগানকেও কটাক্ষ করেছেন ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে গৃহবন্দি বুদ্ধদেব।

রাজ্যে প্রচারের ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পালা করে প্রচারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। জমে উঠেছে দু' জনের কথার লড়াই। এ প্রসঙ্গে বুদ্ধদেবের অবশ্য ব্যাখ্যা, নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেব করে চাল দিচ্ছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "ওঁরা দুজনেই হিসাব করে চাল দিচ্ছেন। লক্ষ্য সাম্প্রদায়িকতার আশু উসকানি, জনগণের স্বার্থের বিনিময়ে যা থেকে হাতেনাতে কিছু ফল পাওয়া যায়। বিজেপি-তৃণমূলের এই কাণ্ডকারখানার ফলে এরাজ্যে যেভাবে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটেছে, তা অতীতের সব ইতিহাসকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এরাজ্যে বিজেপি’কে জায়গা করে দেওয়া, তাদের সঙ্গে আপসে লড়াই করে সাম্প্রদায়িকতার এক বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল। আমাদের দরকার, এই রাজনীতিকে মূল থেকে উৎপাটিত করা এবং হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য বজায় রাখা, যা এরাজ্য পারে। "

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় উঠে এসেছে চৌকিদার প্রসঙ্গও। বুদ্ধদেবের কথায়, "আসলে ধান্দাবাজ পুঁজিপতিদের কাছে মোদী বার্তা শুনিয়েছেন— আমি তোমাদেরই চৌকিদার। জনগণের সামনে দায়িত্ব হল এই মডেলকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া। সারা দেশেই বামপন্থা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীন অর্থনৈতিক বিকাশই বিকল্প  পথ। এটাই বিকল্প মডেল। এই বিকল্প মডেলই তুলে ধরতে হবে। "

এই অবস্থায় বামেদের ঘুরে দাঁড়ানো নিয়েও আশা প্রকাশ করেছেন বুদ্ধদেব। ২০০৪ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বুদ্ধদেব বলেছেন, "সেবার সাম্প্রদায়িক শক্তি যেমন কোণঠাসা হয়েছিল, তেমনি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়াও সম্ভব হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, সংসদে বামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছিল, দেশে বামপন্থীদের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছিল। সেই বাস্তবতা এখনও দেশের সামনে রয়েছে। এটা সম্ভব। এজন্য শক্তিসমাবেশকে আরও নিখুঁত করতে হবে। " শক্তিসমাবেশ শব্দ ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে বুদ্ধদেব প্রয়োজনে ফের কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এ রাজ্যে বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তরুণ প্রজন্মের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য বামপন্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি. বুদ্ধদেবের কথায়, "গ্রাম-শহরে এক ‌অরাজক অবস্থা, বিশেষ করে তরুণ সমাজের সামনে। তৃণমূল তাদের বিপথে চালিত করছে। একদিকে শিল্প নেই, কৃষি নেই। কিন্তু আছে প্রলোভন, প্ররোচনা। সমাজবিরোধীদের শিবির ফুলে ফেঁপে উঠেছে, কতদিন এভাবে, তা তারা নিজেরাও জানে না! বামপন্থীদের দায়িত্ব এই যুবসমাজকে সঠিকপথে নিয়ে আসা।"

তৃণমূল সরকারের সঙ্গে বামফ্রন্ট আমলের তুলনামূলক বিচারের জন্য রাজ্যের মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রেও তরুণ সমাজের কাছে গভীর ভাবে চিন্তা করার আবেদন জানিয়েছেন বুদ্ধদেব। তাঁর আশা, তাহলেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন ভোটাররা, রাজ্যে তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করাও সম্ভব হবে। সাক্ষাৎকারের শেষ ভাগে তিনি বলেছেন, "বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালের তুলনায় তৃণমূলের সময়ে এরাজ্যে  জীবনযাত্রা ও জীবনসংস্কৃতির যে অধঃপতন ঘটেছে, তা সবাই অনুধাবন করছেন। এই পথেই এরাজ্যে বিজেপি-র অনুপ্রবেশ। তাই তৃণমূল নামক বিপদকে এরাজ্যে পরাস্ত করতেই হবে। আটকাতে হবে বিজেপি’কে। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে হবে। গোটা দেশে ধান্দাবাজদের চৌকিদারকে হটাতেই হবে। এটাই মানুষের সামনে দায়িত্ব।"

গৃহবন্দি হলেও তাঁর বার্তা এখনও সমানভাবে উদ্বুদ্ধ করে দলের নেতা-কর্মীদের। স্বাস্থ্যের কারণে বাড়ি থেকে বেরনো একরকম বন্ধ থাকলেও শেষ ব্রিগেড সমাবেশ উপস্থিত হয়ে গাড়ির মধ্যেই বসেছিলেন তিনি। তাতেই চাঙ্গা হয়েছিলেন কর্মী-সমর্থকরা। বুদ্ধদেবের এই বার্তা শেষ তিন দফার ভোটে সিপিএম তথা বামেদের কতটা অক্সিজেন জোগায়, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

Share this article
click me!