ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় রাজ্য সরকারকে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পেশ করা রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ হাইকোর্টে পাঁচ সদস্যদের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে বেঞ্চের তরফে পুলিশকে ভোট পরবর্তী সব অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের বয়ানও রেকর্ড করতে হবে। এছাড়া ভোট পরবর্তী হিংসায় জখমদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। পাশাপাশি যাঁদের রেশন কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের রেশনের ব্যবস্থাও করতে হবে রাজ্যকে।
শুনানির সময় রাজ্যের মুখ্যসচিব এইচকে দ্বিবেদীকে ভোট-পরবর্তী হিংসা ও সন্ত্রাসের সব নথি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কোনও নথি যেন হারিয়ে না যায়, চাইলেই পাওয়া যায় এমন সহজলভ্য করে রাখতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা সামনে আসছিল। একাধিক জায়গায় দলীয় কর্মীদের মারধর ও হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। বেলেঘাটায় অভিজিৎ সরকার নামে এক বিজেপিকে কর্মীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এরপর ২ মে আরও এক বিজেপি কর্মীকে হত্যার অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। বিজেপির দাবি ভোট পরবর্তী হিংসায় রাজ্যে এখনও পর্যন্ত তাঁদের ১৬ জন দলীয় কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন- ধর্মতলা-শিয়ালদা থেকে মিলবে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, জেনে নিন রুটগুলি
এরপর ১৮ জুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণ মিশ্রকে একটি কমিটি গঠন করে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ২১ জুন রাজীব জৈনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন অরুণ মিশ্র। পাশাপাশি ওই কমিটিকে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে। এছাড়া রাজ্যকেও সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর অন্যথা হলে রাজ্যকে আদালত অবমাননার দায় নিতে হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আদালত। এরপরই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ২৪ জনের প্রতিনিধি গত কয়েকদিনে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করে আক্রান্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করেন। ৩০ জুন হাইকোর্টে ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেয় ওই কমিটি।
সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আজ শুনানির সময় বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। কলকাতার কমান্ড হাসপাতালে সেই ময়না তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলাশাসক, যাদবপুরের পুলিশকর্তা, জেলা পুলিশ সুপারদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে না, সে বিষয়ে জবাবদিহি চেয়ে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে হাইকোর্টের তরফে। ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তের জন্য যাদবপুরে গেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যের হেনস্থা করা হয়েছিল। এই ঘটনায় ডিএম ও পুলিশ সুপারকে নোটিশ পাঠিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন- শুরু বিধানসভার অধিবেশন, রাজ্যপালকে স্বাগত মুখ্যমন্ত্রীর, এলেন মদন-শুভেন্দুরাও
এছাড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তের মেয়াদ ১৩ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ওই দিনই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের দাবি উঠেছে। সেই মর্মে আবেদনও জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকেও একটি নোটিশ পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছে কেন্দ্র আর রাজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে সুপ্রিম কোর্ট এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসকে কোনও নোটিশ পাঠায়নি।