শাজাহান আলি, পশ্চিম মেদিনীপুর: একসময়ের শক্ত ঘাঁটি কেশপুরই সিপিএম নেতাদের কাছে বদ্ধভূমি হয়ে উঠেছিল। পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছিল যে ২০১১ সালের পর থেকে কেশপুরের অধিকাংশ সিপিএম নেতাই ঘরছাড়া হয়েছিলেন। বেশিরভাগই মেদিনীপুর শহরে গিয়ে থাকছিলেন। এমন কী, গত আট বছরে কেশপুর এলাকায় মৃত দলের ছয় নেতার স্মরণসভার আয়োজনও করতে পারেননি সিপিএম নেতারা। শেষ পর্যন্ত প্রয়াত ছয় সিপিএম নেতার স্মরণসভা কেশপুরেই আয়োজন করল সিপিএম, সৌজন্যে বিজেপি-র দাপট।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা অনুযায়ী ফলেও কেশপুর থেকে বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী দেব। তার পরেও কেশপুরে প্রায় প্রতিদিনই দাপট বাড়ছে বিজেপি। এলাকায় কার্যত কোণঠাসা তৃণমূল নেতা, কর্মীরা। সিপিএম নেতাদের মতোই তাঁদের অনেকেও এখন এলাকা ছাড়া। আর বিজেপি-র এই বাড়বাড়ন্তেই কেশপুরে অন্তত অবাধে নিজেদের দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারছে সিপিএম। বিজেপি-কে ঠেকাতে তারাই এখন শাসক দলেরও বড় ভরসা।
আরও পড়ুন- কেশপুরে দাপট বাড়ছে বিজেপি-র, খেসারত দিয়ে কি সরতে হল পুলিশ অফিসারকে
দীর্ঘদিন পরে রবিবার কেশপুরে সিপিএমের জোনাল অফিস জামশেদ ভবন খুলে সেখানে জমায়েত করেন সিপিএমের কয়েকশো কর্মী৷ এলাকার কোনও নেতা বা দলীয় কর্মীর মৃত্যু হলে স্থানীয় পার্টি অফিসে তাঁর স্মরণসভা করাটাই দস্তুর সিপিএমের। গত ৮ বছর ধরে বকেয়া থাকা দলের প্রয়াত ছয় নেতার স্মরণসভাও রবিবার একসঙ্গে আয়োজন করা হয়েছিল জামশেদ ভবনে। কেশপুর জুড়ে এ দিন বিকেল থেকে লাল পতাকা লাগানো শুরু করলেন দলের নেতারা৷ ঘোষণা করা হল, এবার থেকে আগের মতোই সর্বক্ষণের জন্য খোলা থাকবে জামশেদ ভবন৷ দলের নেতারাই স্বীকার করে নিচ্ছেন, বিজেপি-র উত্থানে কেশপুরে শাসক দলের 'সন্ত্রাসে' লাগাম পড়েছে। ফলে তাঁরাও সাহস ফিরে পেয়েছেন। রবিবারের অনু্ষ্ঠানেও জেলা সিপিএমের নেতার হাজির হয়েছিলেন কেশপুরে।
দলের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি তরুণ রায় বলেন, 'আমাদের অনেক কর্মীরা প্রলোভনে পা দিয়ে বিজেপিতে গিয়েছেন৷ কিন্তু আমাদের আদর্শে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের নিয়েই আমরা কাজ করব৷ দীর্ঘ ৮ বছর কেশপুরে দাঁড়ানোর সহস পাননি কর্মীরা৷ এবার তা সম্ভব হয়েছে৷ এবার থেকে কেশপুরে দাপিয়ে কাজ করবে দল৷ '
আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, 'সব দলই থাকুক, কারও কাজে আমরা বাধা দেব না৷ তবে দেরিতে হলেও সিপিএমের সম্বিত হয়তো ফিরেছে, এটাই মঙ্গল।'