আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড় আমফান সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটারে পৌঁছতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড় সোমবার সকালে দিঘা থেকে ৯৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। পারাদ্বীপ থেকে এর অবস্থান ৭০০ কিলোমিটারের নিচে। এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে এই ঘূর্ণিঝড়ের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের কাছে নেমে এসেছে। রবিবার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আমফান ৯ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছিল। সোমবার সকাল থেকে পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি গতিবেগ ১৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে আজ থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া, জারি হল হলুদ সতর্কতা
রবিবার সাইক্লোনের যে সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হয়েছিল তাতে পরিস্কার করে দেখানো হয়েছে কীভাবে গতি বাড়াচ্ছে আমফান। সাইক্লোন ওয়ার্নিং-এর চার্টে দেখানো হয়েছে- ১৭ মে আমফানের ঝড়ের নিজস্ব কেন্দ্রে অর্থাৎ এর রাগড-আই যাকে কেন্দ্রবিন্দু বলে সেখানে এর বেগ ছিল ১৩৫ কিলোমিটার থেকে ১৫০ কিলোমিটার। আমফান যত নিজে শক্তিসঞ্চয় করবে ততই সে নিজস্ব কেন্দ্রবিন্দু-তে গতিবেগ বাড়াবে। যার জন্য ১৮ মে তিন দফায় গতিবেগ বাড়তে চলেছে আমফানের। এতে প্রথম ধাপে ১৫০ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার গতিবেগে পৌঁছবে আমফান। এরপরের ধাপে এই গতিবেগ পৌঁছবে ১৭০ কিলোমিটারে। ১৮ মে তৃতীয় ধাপে ঘূর্ণিঝড় আমফান পৌঁছবে ১৮৫ কিলোমিটার গতিবেগে। ১৯ মে ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি শক্তিসঞ্চয় করে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়ে যাবে এবং তখন এর গতিবেগ এক ধাক্কায় ২০০ কিলোমিটারে পৌঁছে যাবে। সেই সময় এর অগ্রসর হওয়ার গতিও বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন-আমফান মোকাবিলায় সব ভাবে প্রস্তুত বাংলা, কাজে লাগছে বুলবুলের অভিজ্ঞতাও
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখানো হয়েছে যে ১৯ তারিখের পর থেকে ক্রমশই স্থলভূমির সঙ্গে দূরত্ব কমবে আমফানের। ফলে এর নিজস্ব কেন্দ্রে থাকা রাগড আই- শক্তিসঞ্চয়ের প্রলোভনে নিজের ভর বাড়াতে থাকবে, আর সেই সুযোগের স্থলভূমি থেকে ভেসে আসা ধূলিকণা এবং বায়বীয় যৌগ উপাদানে দূর্বল হতে শুরু করবে আমফান। তবে, এমনটা ভাবার কারণ নেই যে আমফান এক্কেবারে নির্বিষ হয়ে আঁছড়ে পড়বে। এতে আমফানের নিজস্ব কেন্দ্রে গতিবেগ ২০০ থেকে নেমে ১৯০-এ নেমে আসবে। অনেকটা অতি লোভে তাতি নষ্টের মতোই অবস্থা হবে আমফানের। কারণ শক্তিসঞ্চয়ের চক্করে সে ভারযুক্ত যৌগকে নিজের মধ্যে টানার চেষ্টা করবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আমফান ২০ মে যখন স্থলভূমির মধ্যে আঁছড়ে পড়বে তখন তার গতিবেগ থাকবে ১৯০ কিলোমিটার এবং আঁছড়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ১৭০ কিলোমিটার গতিবেগে নেমে আসবে। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে যখন আমফান আঁছড়ে পড়বে তখন এই গতি আরও খানিকটা কমে যাবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এই সময় ঘূর্ণিঝড় আমফানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে। তবে, এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে উপকূল এবং সংলগ্ন এলাকায় যে ঝোড়ো হাওয়া বইবে তার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার ছোঁয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
আরও পড়ুন- ঢেউ-এর সঙ্গে ভেসে আসছে রাশি রাশি ফেনা, চাঞ্চল্য ছড়াল দিঘায়
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে আরও একটি বিষয় পরিস্কার যে ঘূর্ণিঝড় আমফানের মূল কেন্দ্র আঁছড়ে পড়বে দিঘা এবং হাতিয়া দ্বীপে। এই অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে। সুতরাং, এ যাত্রায় হয়তো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পারাদ্বীপের। কারণ, ঘূর্ণিঝড় আমফান পারাদ্বীপে আঁছড়ে পড়ছে না, বরং তার সর্বোচ্চ গতি নিয়ে এই স্থলভাগ ছুঁয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে ছুঁটে আসবে এবং তারপর বাংলাদেশের দিকে চলে যাবে। কিন্তু, পারাদ্বীপ-কে ছোঁয়ার সময় আমফান স্থলভূমির সঙ্গে সংঘর্ষে আরও খানিকটা শক্তি ক্ষয় করবে।
আবহবিদদের মতে, যে গতিতেই আমফান আঁছড়ে পড়ুক, তাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকছেই। বিশেষ করে দিঘা, সাগরদ্বীপ, হিঙ্গোলগঞ্জ, সন্দেশখালি, সজনেখালি, মৌসুমী দ্বীপ ফের ঝড়ের কবলে পড়তে চলেছে। কয়েক মাসই আগেই পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের এই জায়গাগুলি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলি-তে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। বহু চাষের জমিতে নোনা জলও ঢুকে গিয়েছিল। এবং বহু ভিটেমাটিতে সাগরের জল ঢুকে পড়ে তা ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং, আমফান শক্তি ক্ষয় করলেও তার হিংস্রতা ও ধ্বংসলীলা চালানোর ক্ষমতায় খুব একটা বদল না আসারই সম্ভাবনা।