ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। মঙ্গলবার অবধি সে ছিল 'প্রবল', বুধবার তাকে 'অতি প্রবল' সাইক্লোন বলছেন আবহাওয়াবিদরা। আর আগামী ২৪ ঘন্টায় তার প্রাবল্য আরও বাড়বে বলেই পূর্বাভাস মিলেছে।
বুধবার, দিল্লির মৌসম ভবন থেকে প্রকাশিত এক বুলেটিনে বলা হয়েছে সাইক্লোন 'ফণী' এখন রয়েছে ওড়িশার পুরী শহর থেকে মাত্র ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। সন্ধার মধ্যেই এই ঘূর্ণাবর্ত ওড়িশা উপকূলের গোপালপুর ও চাঁদবালি-তে পৌঁছে যাবে। ৩ মে নাগাদ তা পুরীতে সর্বশক্তিতে আছড়ে পড়বে। ঝড়ের বেগ পৌঁছতে পারে ঘন্টায় ২০৫কিলোমিটার পর্যন্ত। আর এর প্রভাব টের পাবে শুধু ওড়িশা নয়, পার্শ্ববর্তী অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ বেশ কয়েকটি জেলাও। বিশেষ করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে দুই মেদিনীপুর ও দুই চব্বিশ পরগনায়।
ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা
মৌসম ভবন জানিয়েছে ২ মে তারিখ থেকেই হাল্কা বৃষ্টিপাত শুরু হলেও তার পরের দিন গোটা পশ্চিমবঙ্গেই হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে কোথাও ভারী কোথাও অতি ভারী বর্ষণ হবে। তবে ৪ মে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের কোথাও কোথাও চরম ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
ঝড়ের সতর্কতা
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২ মে তরিখেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে। ৩ মে সন্ধ্যার মধ্য়ে ঝড়ের বেগ পৌঁছতে পারে প্রতি ঘন্টায় ৮৫ কিলোমিটারে। আর ৪ মে সকালের মধ্য়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি ঘন্টায় ১১৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস
২ থেকে ৪ মে তারিখের মধ্য়ে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে তীব্র সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস দেখা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া বিভাগ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বুধবার থেকেই দিঘা, বকখালি, মন্দারমণির সৈকতে পর্যটকদের মাইকে করে সতর্ক করার কাজ শুরু হয়েছে।
মৎসজীবিদের জন্য সতর্কতা
২ থেকে ৪ তারিখের মধ্য়ে পশ্চিমবঙ্গের মৎসজীবিদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই নবান্ন থেকেও নির্দেশ এসেছে। বুধবার বিকেলের মধ্য়েই প্রত্যেককে মাঝ-সমুদ্র থেকে ফিরে আসার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির আগাম সতর্কতা
অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতা - পশ্চিমবঙ্গের এই ৭ জেলার জন্যও আগাম ক্ষয়ক্ষতির সতর্কতা জারি করেছে দিল্লির মৌসম ভবন থেকে। বলা হয়েছে কাঁচা বাড়ি ও পুরনো পাকা বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে, ঘরের চাল বা অন্য কিছু উড়ন্ত বস্তুর থেকে ক্ষতি হতে পারে। বেশ কিছু সংখ্যক বিদ্যুত বা টেলিফোনের খুঁটি, গাছ উপড়ে যেতে পারে। গাছ ড়ে বা ্ন্য কোনও ভাবে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শস্যেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বন্দরে থাকা জাহাজ বা বড় নৌকারও ক্ষতি হতে পারে।
কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে
মৎসজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া একেবারেই বন্ধ রাখতে হবে।
উপকুলবর্তী এলাকা থেকে অন্যত্র সরে যাওয়াই ভালো, নাহলে ঝড়ের সময় কোনও পাকা বাড়ির ভেতরে থাকতে হবে।
ঝড় চলাকালীন সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখারও পরামর্শ দিয়েছে মৌসম ভবন।
মোটর বোট বা ছোটো নৌকা চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।