আয়লার মতোই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ধীরে ধীরে বঙ্গোপসাগর ধরে এই ঘূর্ণাবর্ত এগিয়ে আসছে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এই রাজ্যে ৩-৪ মে তারিখে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যাবে। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বৃশষ্টি হতে পারে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও।
চরম গুরুতর ঘূর্ণিঝড় বা এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম - বুহস্পতিবার বিকেলে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর থেকে বিবৃতিতে ঘুর্ণিঝড় 'ফণী'র বর্তমান অবস্থাকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখনও সে অবশঅয স্থলভাগে পৌঁছায়নি। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরেই সে রয়েছে। কলকাতা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে মাত্র ৭৩০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে। আর দিঘা থেকে দূরত্ব দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৬১৫ কিলোমিটার। আর সেখান থেকে ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তর-পূর্বে এগিয়ে আসছে ফণী।
আবহাওয়াবিদদের মতে ৩ মে বিকেলেই সাইক্লোন ফণী ওড়িশার চাঁদবালি ও গোপালপুরের মাঝখান দিয়ে পুরী শহরের গা ঘেসে এগিয়ে আসবে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। তবে পুরীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই ঝড়ের গতি প্রতি ঘন্টায় ১৭০-১৮০ কিলোমিটার থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ওড়িশার উপরূলে প্রতি ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য আসতে আসতে অনেকটাই শক্তি হারাবে 'ফণী' সেই সময় চরম গুরুতর থেকে গুরুতর ঘূর্ণিঝড়ে (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) পরিণত হবে এই ঘূর্ণাবর্ত। বাতাসের গতি কমে দাঁড়াবে প্রতি ঘন্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার আর ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে ঘন্টায় ১১৫ কিলোমিটার বেগে। ৩ তারিখ মাঝরাতে অথবা ৪ তারিখ ভোরে ফণী-র আবির্ভাব ঘটবে বাংলায়, এমনটাই পূর্বাভাস আলিপুরের হাওয়া অফিসের।
পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পর ক্রমে তার শক্তি আরও কমবে। অবশেষে ৪ তারিখ রাতে এই ঘূর্ণিঝড় তার নামকরণকারী দেশ, বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।
ওড়িশা থেকে শক্তি কমাতে কমাতে পশ্চিমবঙ্গে অনেকটাই দুর্বল হয়ে এলেও ফণীর প্রভাবে কিন্তু প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আলিপুপরের আবহাওয়া দপ্তর আশঙ্কা করছে ৩ তারিখ সন্ধ্যা থেকে ৪ তারিখ সন্ধ্যা - এর মধ্যেই ফণীর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে এই রাজ্যে। প্রবল ঝড় সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাবাস রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে।
আলিপুরের মতে ৩ তারিখ বিকেল থেকে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। উপকূলবর্তী জেলাগুলির সঙ্গে পশ্চিমের জেলাগুলিও বাদ যাবে না। কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতও হবে। তার পরের দিন অর্থাত ৪ তারিখ এই জেলাগুলিতে বর্ষণের মাত্রা বাড়বে। অধিকাংশ জায়গাতেই ভারী বৃষ্টিপাত কোথাও কোথাও অতি ভারী এমনকী কয়েকটি জায়গায় চরম ভারী বৃষ্টিপাতও হতে পারে।
শুধু তাই নয়, ৪ মে ফণীর প্রভাব পড়বে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও। সব জেলাতেই হালকা থেকে মাজারি বৃষ্টি এবং দু-এক জায়গায় ভারী বডষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
তবে বৃষ্টি তো উপসর্গ বলা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে ঝোড়ো হাওয়া। আলিপুর আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে ২ তারিখ অর্থাত বৃহস্পতিবার রাত থেকে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার বিকাল থেকে ঝড়ের বেগ বেড়ে প্রতি ঘন্টায় ৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছতে পারে। আর সেখান থেকে ঝড় বেগ সর্বোচ্চ প্রতি ঘন্টায় ১১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।
উপকূলবর্তী নয় দক্ষিণবঙ্গের এমন জেলা ২ তারিখ জ়ের হাত থেকে রেহাই পেলেও ৩ তারিখ থেকে কিন্তু ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ঝড় বইবে কলকাতা, হাওড়া হুগলী সহ অন্যান্য জেলাগুলিতে। আর পের দিন অর্থাত ৪ মে তারিখে এই জেলাগুলিতে ঝড়ের বেগ বেড়ে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় পৌঁছবে।
কলকাতার ক্ষেত্রে গাছ পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া কোথাও কোথাও জল জমে সমস্যা তৈরি হতে পারে। রেলের ক্ষেত্রে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যেতে পারে।
৩ ও ৪ মে - যে দুইদিন ঝড়ের প্রাবল্য চরমে থাকবে, সেই দুইদিন বাড়ির বাইরে থাকা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মৎসজীবীরা ইতিমধ্য়েই সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছেন। পর্যটকদেরও সমুদ্রের কাছাকাছি যেতে দেওয়া হচ্ছে না। রয়েছে প্রশাসনের নজরদারি। এছাড়া, বিভিন্ন জেলায় জলপথে যাতায়াত নিষিদ্ধ কয়েকদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃতির রোষের মোকাবিলা করার জন্য আগাম সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। কিন্তু প্রকৃতির সামনে মানুষ কতটা অসহায় তা বোঝা গিয়েছিল ২০০৯ সালে আয়লার সময়ে। এদিন আবহাওয়া দফতর স্পষ্ট করে দিয়েছে, অিনেকটা সেই রকম এক শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়েরই মোকাবিলা করতে যাচ্ছে বাংলা আগামী কয়েকদিনে। একটাই প্রার্থনা আয়লার ভয়াবহ স্মৃতি যেন আর ফিরে না আসে।