ডাক্তার নিয়ে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের অনেক অভাব অভিযোগ থাকে সরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে ডাক্তারদের মারধরের ঘটনা কম হয়নি। সে নিয়ে দীর্ঘ সময় আন্দোলন হয়েছে এ রাজ্যে।
তবে অধিকাংশ ডাক্তারই যে রোগীর জীবন বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন, তা আবার প্রমাণ করলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক নীলাদ্রি কয়াল। কিডনির সমস্যায় গুরুতর অসুস্থ এক রোগীকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন তিনি। চিকিৎসকের এমন মহানুবতায় আপ্লুত দরিদ্র ওই রোগীর পরিবারও।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সোমা বর্মণ নামে এক রোগী কিডনির সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বর্ধমানের রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা। কিডনির সমস্যার পাশাপাশি তিনি তীব্র রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন। ওই রোগীকে প্রাণে বাঁচাতে তৎক্ষণাৎ তাঁকে ও পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্লাড ব্যাংক-এ সেই রক্ত না থাকায় বিপদে পড়ে ওই রোগীর পরিবার। সোমাদেবী যে ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন, সেখানে কর্তব্যরত ছিলেন ওই চিকিৎসক নীলাদ্রি কয়াল। সমস্যার কথা জেনে নিজেই রক্ত দিতে এগিয়ে আসেন তিনি। তাঁর দান করা রক্ত পেয়ে কিছুটা সুস্থ হন ওই রোগী।
রক্ত দেওয়ার পর নীলাদ্রি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে রক্তদান নিয়ে ভয়, ভীতি রয়েইছে। সেই কারণে ব্লাড ব্যাংকগুলিতেও রক্ত সংকট থাকে। আমাদের হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকেও রক্ত না পেয়ে অনেক রোগীই মারা যান। ফলে রক্ত দেওয়ার সুযোগ থাকলে আমরা দিতেই পারি। চিকিৎসক হলেও আমরা তো সাধারণ মানুষই। ওই রোগীর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। বার বার আবেদন করেও ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই জানতে পেরে নিজে গিয়েই রক্ত দিয়ে এলাম।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের জেনারেল মেডিসিন বিভাগে কর্মরত রয়েছেন নীলাদ্রি। সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর আবেদন, পরিবার এবং পরিচিতদের নিয়ে সবাই এগিয়ে এসে রক্তদান করলে অনেকেরই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। নীলাদ্রির সহকর্মীরাও তাঁর এই উদ্যোগে খুশি। পার্থসারথী মজুমদার নামে আরও এক চিকিৎসক জানান, চিকিৎসকরা রোগীদের প্রাণ বাঁচানোরই চেষ্টা করেন। নীলাদ্রি যে কাজ করেছেন, সেটা খুবই মহৎ কাজ। ওই রোগীর সঙ্গে একজন বয়স্ক মানুষ ছিলেন। তিনিও খুব একটা দৌড়াদোড়ি করতে পারছিলেন না। রক্তদান নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেককে নিজের আত্মীয় মনে করে সবারই রক্তদান করা উচিত। তিন মাস অন্তর নিয়ম মেনে রক্তদান করলে শরীরের বরং ভালই হয়।'
সরকারি হাসপাতালে এসে অনেক সময় ঠিকমতো চিকিৎসা পরিষেবাই পাওয়া যায় না। সেখানে অসুস্থ মেয়েকে যে চিকিৎসক নিজেই রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচাবেন তা ভাবতে পারেননি রোগীর বাবা বাদল বিশ্বাস। তরুণ ওই চিকিৎসকের কাছে কৃতজ্ঞ তিনি।