২০২১-২২ অর্থবর্ষের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন মাস বাকি থাকতেই পূরণ করে ফেলল রাজ্যের আবদারি দফতর (West Bengal Excise Department)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পক্ষে বাংলায় সুরা বিক্রি বন্ধ অসম্ভব।
গত নভেম্বর মাসে মুম্বই সফরে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেখানে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়, তাঁকে মেধা পাটেকর (Medha Patekar) প্রশ্ন করেছিলেন বাংলায় মদ বন্ধ নিষিদ্ধ করা (Alcohol Ban in West Bengal) নিয়ে। কিন্তু, মমতা সরকারের পক্ষে কি আদৌ রাজ্যে মদ বিক্রি বন্ধ সম্ভব? কারণ, অন্যান্য যে দফতর যেমনই কাজ করুক, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যপূরণের দিক থেকে কিন্তু ফাটিয়ে দিচ্ছে রাজ্যের আবদারি বিভাগ (West Bengal Excise Department)। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তাদের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। তিন মাস বাকি থাকতে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই সেই লক্ষ্যপূরণ হয়ে গিয়েছে।
অবশ্য, গত কয়েক বছর ধরে, এটাই আবগারি দফতরের নিয়মিত প্রবণতা। একটা সময়ে ছিল, যখন বছরে ৫০০ কোটি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য়মাত্রাও ছুঁতে পারত না আবগারি দফতর। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষেও বছরের শুরুতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পূরণ করতে পারেনি তারা। তবে, পরিস্থিতি আমূল বদলে যায় ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে। সেবার প্রথমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭৮১.৩৮ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে ৪,৭৮৮ কোটি করা হয়েছিল। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে আয় হয় প্রায় দ্বিগুণ, ৯৩৪০.০৫ কোটি টাকা। তারপর থেকেই প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আবগারি দফতরের রাজস্ব আদায়। এবারও, বলাই বাহুল্য, মূল লক্ষ্য়ের থেকে অনেকটাই বেশি আয় হবে। তবে, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের রেকর্ড, এবারও ভাঙবে না বলেই ধারণা দফতরের আধিকারিকদের।
পরিসংখ্যান দেখলে মনে হতে পারে, গত ৫ বছর ধরে বোধহয় মমত বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার, বাংলায় মদ্যপানে বিশেষ উৎসাহ দিয়েছে। তবে, রাজ্য আবগারি দফতরের কর্তাদের দাবি, আসল বিষয়টা হল, গত কয়েক বছরে রাজ্যে অবৈধ মদ বিক্রি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো গিয়েছে। যার প্রভাবে বেড়েছে বৈধ মদ বিক্রি। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই রাজ্যে দেশি-বিদেশি মদের মূল ডিস্ট্রিবিউটার হিসেবে কাজ করা শুরু করেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন বা বেভকো (West Bengal State Beverage Corporation)। তাদের দাবি, এতে করে, এক দিকে যেমন অবৈধ মদ থেকে বিষক্রিয়ার মতো ঝুঁকি কমেছে, তেমনই সরকারের ঘরে টাকাও আসছে।
তবে, আবগারি কর্তারা যাই দাবি করুন না কেন, সরকারের পক্ষ থেকে একেবারেই যে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে না তা নয়। করোনা মহামারির সময়ে অনলাইনে মদ বিক্রি শুরু হয়েছে। আবগারি দফতরের পরিসংখ্যন অনুযায়ী অনলাইনে নথিভুক্ত মদ ক্রেতার সংখ্যা এখন প্রায় দেড় লাখ। সেই সঙ্গে, সম্প্রতি অন্তত ৪৯টি সস্তার দেশি মদের ব্র্যান্ডকে মদ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই রাজ্যে। ৩০০ মিলিলিটার মদের বোতলের সর্বনিম্ম দাম ২৩ টাকা। আবগারি দফতরের দাবি, এতে করে রাজ্যে মদ্যপায়ীর সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি। চোলাইয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ মদের বাজার ধরেছে, সস্তার বৈধ দেশি মদ। আর তাতেই ফুলে উঠছে রাজ্যের কোষাগার।
মদ থেকে সরকারি আয় আরও বাড়াতে চাইছে আবগারি দফতর। তাই মদের বিক্রি বাড়াতে রাজ্যে একটি মজবুত মদ বিতরণ ব্যবস্থা বা ডিস্ট্রিবিউশন চেইন গড়ে তোলার কথা ভাবছে তারা। বেভকো-র গুদাম থেকে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে মদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডিস্ট্রিবিউটার চেয়ে ইতিমধ্যেই আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছে। তবে, ভারতের কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মদ বিতরণে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং গত তিন বছরে কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, এমন ডিস্ট্রিবিউটাররাই আবেদন করতে পারবেন। কাজেই, মেধা যতই প্রশ্ন করুন, মদ বাংলায় মদ বিক্রি বন্ধ করা সম্ভবত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।