সরকারের টাকা জলে - গঙ্গার গ্রাসে একের পর এক গ্রাম, আতঙ্কে ভিটে-ছাড়া বাসিন্দারা


শয়ে শয়ে বিঘা চাষের জমি চলে গিয়েছে গঙ্গা-গর্ভে

তলিয়ে গিয়েছে চার-পাঁচটি গ্রামের কয়েকশো বাড়ি

গঙ্গা ভাঙ্গন রোধে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭৫ লক্ষ টাকা

তারপরও কেন গঙ্গার পাড় ভেঙে যাচ্ছে

amartya lahiri | Published : Jun 19, 2021 12:57 PM IST

একটানা বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে দফায় দফায় বৃষ্টি। পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে আবার জলও ছাড়া হচ্ছে। আর এই দুইয়ের প্রভাবে আচমকা মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর মহকুমার বেশ কয়েকটি গ্রামজুড়ে শুরু হয়েছে গঙ্গাপাড়ের ভাঙ্গন। অথচ ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাড়ের ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তাহলে কেন ভাঙছে পাড়, তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বাড়ি, কৃষি-জমি? ভিটেহারা গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বছর বছর বালির বস্তা ফেলে দায় সারছে স্থানীয় ঠিকাদার সংস্থা।

পশ্চিমবঙ্গে সবে বর্ষা ঢুকেছে। নদীর জল এখনও সেভাবে বাড়েনি। এর মধ্যেই জঙ্গিপুর মহকুমার অন্তর্গত গঙ্গার পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। নিমতিতা, ধুলিয়ান, ধানঘরা, শিবপুর, কমলপুর, দুর্গাপুরের মতো বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের আতঙ্কে রাতের ঘুম চলে যাওয়ার জোগার। কোনও কোনও দোতলা বাড়ি নদীর পাড়ে ঝুলে রয়েছে। আবার কয়েকটি পাকা বাড়ি সদ্য তলিয়েও গিয়েছে। ৪০ বিঘা এলাকা জুড়ে ফলের বাগান ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে গঙ্গার গর্ভে।

বিপজ্জনকভাবে গঙ্গার পাড়ে ঝুলছে বহু বাড়ি, তলিয়ে যাওয়া সময়েরর অপেক্ষা

এই অবস্থায় সক্রিয় হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সেচ দফতর। পদক্ষেপ বলতে, শনিবার থেকে তাদের নিয়োগ করা ঠিকাদার সংস্থা বালির বস্তা ফেলে পাড় বাঁধানোর চেষ্টা শুরু করেছে। এলাকার বাসিন্দারা যা দেখে বলছেন, এই ভাবে বছর বছর সরকারের টাকা জলে যাচ্ছে। কেন এমন বলছেন তাঁরা?

মাহমুদ আলী, মনোয়ারা বিবি-র মতো স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরও সেচ দফতরের ঠিকাদার সংস্থা এই বালির বাঁধই দিয়েছিল। বালির বস্তা দড়ি দিয়ে বেঁধে নদদী ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করেছিল। কী হল সেই বস্তাগুলির? বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেইসব বালির বস্তা গঙ্গা দিলে নিয়েছে। এবারও ঠিক তেমনটাই হবে বলেই আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এই বছর ইতিমধ্যেই বহু বালির বস্তা ভেসে গিয়েছে। আর একটু জল বাড়লে, বাকিগুলিও তলিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।

বছর বছর দেওয়া হচ্ছে বালির বস্তা, সরকারেরর টাকা ধুয়ে যাচ্ছে গঙ্গার জলে

ধানঘরার বাসিন্দা চাঁদ সুলতান শেখ জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে, প্রতি বর্ষায় গঙ্গার শয়ে শয়ে বিঘা চাষের জমি গঙ্গার গর্ভে চলে গিয়েছে। উপকূলবর্তী চার-পাঁচটি গ্রামের কয়েকশো বাড়িও তলিয়ে গিয়েছে। এই বছর সেভাবে বৃষ্টি না হতেই নদীতে জল বাড়ছে। ধানঘরার দিকে দ্রুতগতিতে পাড় ভেঙে এগিয়ে আসছে গঙ্গা। তাই গত বছরের থেকেও এবার আরও ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা ফিরদৌসি বেগম জানিয়েছেন, নদী অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। ঘরবাড়ি তলিয়ে গেলে রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

এই বিষয়ে প্রশাসনের তরফ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা সাফ জানিয়েছেন, বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। জলের ঢেউয়ে একের পর এক বস্তা নদীতে চলে যাচ্ছে। একমাত্র কংক্রিটের বাঁধ তৈরি না হলে, আর কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রাম-জমি সবই তলিয়ে যাবে নদীর বুকে। এলাকার সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা বলেছেন, তাঁরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য জানানো হয়েছে। তবে, তার উপর ভরসা রাখতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। আতঙ্কিত বাসিন্দারা, হয় কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে, নইলে ফ্লাড সেন্টারে আশ্রয় নিচ্ছেন। 

Share this article
click me!