ছোটবেলা থেকেই চোখের সামনে প্রাচীন শিব মন্দিরকে দেখে বড় হয়েছেন তিনি। সেই মন্দিরই আজ বয়সের ভারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে চলেছে। তা থেকেই জরাজীর্ণ প্রাচীন মন্দিরকে বাঁচিয়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তাঁর দুচোখে। স্বপ্ন ছিল একটা ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার। এবার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে উদ্যোগী হল বাঁকুড়ার কৃতি কন্যা পিঙ্কি পাল। নিজের বৃত্তির টাকা থেকেই প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষার কাজে নেমেছে সে। একটা ইতিহাস কে বাঁচাতে তাঁর এই উদ্যোগে খুশি সকলেই।
বাঁকুড়ার জয়পুর প্রাচীন নানান ঐতিহ্যের পীঠস্থান। মল্লরাজদের আদি ভূমি জয়পুর মানে শুধুই ইতিহাস। জয়পুরের চারদিকেই ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন মন্দির। আর প্রতিটি মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। তবে শুধু মল্লরাজদের মন্দির জয়পুরের লাগোয়া শামুকগেড়িয়া এলাকায় তেমনি একটি প্রাচীন ল্যটেরাইট পাথরের শিবের মন্দির। যা আনুমানিক ৩০০ বছরের প্রাচীন বলেই অনুমান। তবে কে এই শিবের মন্দির তৈরি করেছিলেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের অভাবে মন্দিরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছিল। ধসে পড়েছিল মন্দিরের পাথর। এবার সেই মন্দিরের আসল রূপ ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হল বাঁকুড়া জেলারই এক কৃতী সন্তান। বাড়ির সামনে জরাজীর্ণ মন্দিরকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল পিঙ্কি পাল নামে ওই ছাত্রীর। যাদবপুর থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাশ করে মুম্বাই আইআইটি থেকে পিএইচডি করতে করতেই এই প্রাচীন মন্দিরের সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন পিঙ্কি। সম্বল বলতে বৃত্তি থেকে পাওয়া টাকা।
বাঁকুড়ার গোকুলনগরের বাসিন্দা ইতিহাসবিদ কালীশঙ্কর রায় বলেন, মেয়েটির উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি বলেন, "আগে মন্দির যেভাবে ছিল, সেভাবেই নতুন করে তৈরি হচ্ছে মন্দির। মন্দিরের ধসে যাওয়া পাথরকে কাজে লাগিয়ে মন্দিরটি আগের রূপ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কালীবাবুর দাবি, জয়পুরের অনেক ইতিহাস রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। ওই ছাত্রীর সৌজন্যে অন্তত একটা প্রাচীন মন্দির তো রক্ষা পাচ্ছে।"
বাঁকুড়ার জয়পুরের শামুকগেড়িয়ার বাসিন্দা পিঙ্কি পাল। বাবা মানুলাল পাল দিনমজুরের কাজ করেন। মা রুমা পাল বাড়িতে পাতা সেলাই করে অর্থ উপার্জন করেন। চরম অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দুই সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখা শুরু পাল দম্পতির। মেয়ে পিএইচডি পাঠরতা ও ছেলে বঙ্গবাসী কলেজে অঙ্ক নিয়ে পড়ছে। অভাবের সংসারে খুবই কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন পাল দম্পতির। এত কষ্টের মধ্যেও বাড়ির সামনের জরাজীর্ণ প্রাচীন মন্দিরকে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাঁদের মেয়ে পিঙ্কি। মায়ের কথায় পিঙ্কি কথা দিয়েছিলেন উপার্জন শুরু করলে তিনি মন্দির সংস্কারে হাত দেবেন। তাই এখনও পেশাগত জীবনে প্রবেশ না করলেও নিজের বৃত্তির টাকা থেকেই এই মন্দির সংস্কার করার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। তাঁরই উদ্যোগে প্রাচীন ধ্বসে যাওয়া মন্দির আবার নতুন রূপে তৈরি হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই খুশি পাল দম্পতি।
মন্দিরের গায়ে থেকে একটা একটা করে পাথর বসিয়ে মন্দিরের পুরনো চেহারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পিঙ্কির এই উদ্যোগে তাঁর বাড়ির লোকজন তো বটেই, এলাকার বাসিন্দারাও খুশি। তবে পিঙ্কি নিজে মুম্বাইতে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর বাবা এবং মা অবশ্য জানাচ্ছেন, ভবিষ্যতে মন্দিরটিকে সাজিয়ে তোলার আরও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।