উত্তম দত্ত, হুগলি: সিসিটিভি, কম্পিউটার রুম, আধুনিক স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার। ঝকঝকে টাইলস দিয়ে মোড়া বাথরুম, যার মধ্যে আছে কমোড, আছে স্নানের জন্য শাওয়ার। ছাদের উপর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি। একদিকে চলছে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ ,অন্যদিকে সৌন্দর্যের জন্য ফুলের গাছ । না এটা কোনো রিসর্ট বা হোটেল নয়। এটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহির্সজ্জা। যার পরতে পরতে চমক।
পারুল প্রাথমিক বিদ্যালয়। আরামবাগ মহকুমার অন্তর্গত পুরশুড়া বিধানসভার পারুল গ্রামের গর্ব করার মতো একটি বিদ্যালয়। তবে এই স্কুলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো ছবির মধ্য দিয়ে পঠন-পাঠন। সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার পর থেকেই চারদিকে শুধু ছবি আর ছবি। সেই ছবি দেখেই কতকিছু শিখছে স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা। বারান্দার রেলিংয়ে রয়েছে জ্যামিতিক চিত্র থেকে শুরু করে সংখ্যাতত্ত্ব। সামনেই রয়েছে বিশাল এক বর্ণপরিচয়। পাশেই রয়েছেন তার স্রষ্টা বিদ্যাসাগর। সবই ছবিতে। বারান্দা থেকে ঘর, সর্বত্র দেওয়াল জুড়ে নানা ছবি। সেখানে রয়েছে বিজ্ঞানের নানা কলাকৌশল, নীতি গল্পের বিষয়।
প্রধান শিক্ষক বিপ্লব সামন্ত বলেন, 'আমরা ছবির মধ্যে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে চাই । যেমন বাজ পড়লে কোথায় কীভাবে থাকলে নিরাপদ থাকা যায়, গাছ বাঁচিয়ে রাখা কেন জরুরি, ইত্যাদি নানা বিষয়ে ছবির মধ্যে দিয়েই বোঝানো হয় । তাছাড়া পড়ার থেকেও ছবিতে ঘটনাগুলো চোখের সামনে শিশুমনে তা অনেক বেশি দাগ কাটে। আমরা চাই ছাত্র ছাত্রীরা মানু্ষের মতো মানুষ হোক।' বিপ্লববাবু জানিয়েছেন, সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার থেকে পাওয়া আর্থিক অনুদান দিয়েই স্কুলকে এভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
বর্তমানে বেশীর ভাগ মানুষই তাঁদের সন্তানকে প্রাথমিক স্তর থেকেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চান। যার ফলে এখন বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে উপচে পড়ছে ভিড়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে দিনের পর দিন ছাত্র সংখ্যা কমছে । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে পারুল বিদ্যালয়। রং তুলিতে আঁকা এই সব পেয়েছির দেশে গেলে দেখা যায় ক্লাস ভর্তি পড়ুয়া। শুধু তাই নয়, মেধার দিক থেকেও তারা এতটুকু পিছিয়ে নেই।
স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় দুশোর কাছাকাছি। পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের জন্য এবার স্কুলের ফাঁকা জায়গায় মাশরুম চাষ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। গোটা স্কুলের মতো এবার পড়ুয়াদের মিড ডে মিলেও অভিনবত্ব আসতে চলেছে।