জোরে জোর বাজছে ডিজে বক্সে গান। শ্মশান ঘাটে চললেন শংকরচরণ মাল, বয়স ৯২। বুধবার রাতে তাঁর শ্মশানযাত্রা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেনারেটর লাগিয়ে ডিজে বক্স বাজিয়ে তাঁকে শোভাযাত্রা করে শ্মশানে নিয়ে চললেন নাতি- পুতিরা। মৃত্যুকে ঘিরে এমন আনন্দ মিছিলের সাক্ষী থাকল সিউড়ির আনন্দপুর ডাঙ্গাপাড়া।
প্রথম ট্রাকে জেনারেটর, সঙ্গে চারটে বড় বড় সাউন্ড বক্স। তাতে গান বাজছে, 'আমি হেলে দুলে যাব শ্মশান ঘাটে'। মাঝের ট্রাকে ২৪ জন নাতি, তাঁদের ছেলেপুলে। তৃতীয় ট্রাকে শংকরচরণ মাল। তাঁর বর্ণময় জীবনের মতোই মৃত্যুর শোভাযাত্রা করতে চেয়েছিলেন তাঁর মেয়েরা। জীবন শুরু করেছিলেন চাষবাস দিয়ে। পরে স্কুল পরিদর্শকের দফতরে সরকারি চাকরি। তখনই সিউড়ি চলে আসা। পুত্রসন্তান না থাকার আফশোস ভুলিয়েছে তাঁর দশ মেয়ে। তাঁদের পাত্রস্থ করেছেন। রেখেছেন নিজের ঘরের কাছাকাছি। আনন্দপুর ডাঙ্গাপাড়াতেই সবাইকে নিজের নিজের বাড়ি করে দিয়েছেন বলে মেয়েদের দাবি।
মেয়ে তনু মাল বলেন, বাবা বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। দু' দিন আগে সিউড়ি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। সোমবার থেকে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। জামাই তপন বাগদি বলেন, চাষ
দিয়ে জীবন শুরু। কিন্তু চাকরি থেকে অবসরের পর বসে থাকেননি। এলাকায় বেশ কিছু পান গুমটি বসিয়েছেন। জমিজমা বিক্রির মধ্যস্থতা করতেন। সারাজীবনই কাজের মধ্যে থাকতে চাইতেন তিনি। তাই তাঁর শেষ যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলে নাতি, পুতিরা। সেই কারণেই ডিজে বক্স লাগিয়ে গান। সঙ্গে হরিনামও ছিল।
মেয়ে টুলু মাল বলেন, 'বাবা ছিলেন হাসিখুশির মানুষ। নাতি নাতনিরা তাই বাবার পরলোকে গমনকে আনন্দময় করতে চেয়ে এই বক্স বাজিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। বাবা নেই এটাও যেমন দুঃখের। তেমনই ২৪ জন নাতিনাতনি, তার সঙ্গে তাঁদের সন্তানদের দেখে বাবার এই স্বর্গযাত্রাও আমাদের কাছে সুখের। তাই সিউড়ি থেকে বক্রেশ্বর শ্মশানের যাত্রার সময় ডিজে বক্সের আওয়াজ শুনে পথচলতি মানুষ বিসর্জন ভেবে ছুটে এসেছেন। নাতিনাতনিদের কথায়, এটাও এক অর্থে বিসর্জন। দাদুর শেষ বিদায়ের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে শংকচরণ মালের দেহ কাঁধে নিয়ে ডিজে বক্সের নাচের তালে নেচেছেন তাঁর নাতিপুতিরা। হরি ধ্বনির বদলে তখন সাউন্ড বক্সে জোরে জোরে বাজছ, 'এই হরিনাম যাবে যেদিন সাথে…।'