সালটা ১৯৩০, ২৭ অগাস্ট ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কোমিটির ১০ জন নেতা। এই গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মধ্যে নাম ছিল ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়।
সালটা ১৯৩০, ২৭ অগাস্ট ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কোমিটির ১০ জন নেতা। এই গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মধ্যে নাম ছিল ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারে ছ'মাসের জেল হয় বন্দীদের। এরপরই দিল্লি থেকে কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল বন্দী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়কে। বিচারে বিনাশ্রমেই কারাদণ্ড হয়েছিল তাঁর। কিন্তু কাজ না করে ছ'মাস কাটানো সম্ভব হয়নি বিধানচন্দ্র রায়ের পক্ষে। কিছুদিনের মধ্যেই এক অদ্ভুৎ আর্জি নিয়ে হাজির হলেন জেলারের কাছে। জেলার মেজর পাটনির কাছে তাঁর আবেদন ছিল, তাঁর পক্ষে উপযুক্ত যে কোনও কাজ করতে প্রস্তুত তিনি।
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় ছিলে জেলার পাটনির পূর্ব পরিচিত। পাটনি বিধান রায়কে বলেছিলেন, জেলে কয়দিদের জন্য একটা হাস্পাতাল আছে। হাসপাতালে ১২০টি বেডও আছে। এই হাসপাতালের দায়িত্ব বিধান রায়কে নিজের হাতে নেওয়ার অনুরোধ করেন মেজর পাটনি। কথা মতো রাজিও হয়ে যান বিধান রায়। সেই থেকেই শুরু হয় ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ডাক্তারি জীবনের এক নতুন অধ্যায়। জেলবন্দী অবস্থাতেও ডাক্তারি থেকে একদিনের জন্যও অব্যহতি নেননি তিনি। নিষ্ঠাভরে জেলের মধ্যেই চালিয়েছেন ডাক্তারি। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। সকাল ১০টার মধ্যে নিয়মিত হাসপাতালে পৌঁছন থেকে নিজে প্রত্যেক রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা পর্যন্ত সমস্ত কাজই নিষ্ঠার সঙ্গে করে যেতেন তিনি। শুধু তাই নয়, সারা দুপুর জুড়ে চলত জেলের আর এক কয়েদির কানাইলাল গাঙ্গুলীর কাছে জার্মানি ভাষা শিক্ষা। ডাক্তার রায়ের এই কাজ মুগ্ধ করেছিল ব্রিটিশ সরকারকেও। জেল কর্তৃপক্ষের সুপারিশে ছয় সপ্তাহ মুকুব হয় ডাঃ রায়ের কারাদন্ডের মেয়াদ।
পাটনার বাঙ্কিপুরে এক বাঙালি কায়স্থর ঘরে জন্ম নিল এক শিশু। পরবর্তীকালে তিনিব পরিচিত হলেন ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় নামে। অবিভক্ত বাংলার খুলনার সাতক্ষীরার লোক ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়ের বাবা প্রকাশচন্দ্র রায়। বিধানচন্দ্রের ঠাকুর্দা এলাকায় একজন বিত্তশালী বাঙালি বলেই পরিচিত ছিলেন। বিধানচন্দ্র রায়ের বাবা ছিলেন এক্সাইজ দফতরের একজন ইনস্পেক্টর। মা অঘোরকামিনীদেবী ছিলেন একজন গৃহবধূ এবং ধর্মপ্রাণা। সেই সঙ্গে তিনি সামাজসেবার কাজেও ব্রতী ছিলেন।