শুক্রবার ঘটনার প্রতিবাদে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল নামে নদিয়া জেলার বগুলায়। শুক্রবার সকাল ১১ টায় বগুলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং পাড়া-প্রতিবেশী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ।
মফস্বল থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে এসেছিলেন স্বপ্নদ্বীপ। কলেজ জীবনের দ্বিতীয় দিনেই সব স্বপ্ন ভেঙে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল ১৮ বছরের পড়ুয়া। ঘটনায় শোড়গোল পড়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। গতকাল থেকেই ছাত্র বিক্ষোভে উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এবার ঘরের ছেলের মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তপ্ত নদিয়ার বগুলাও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলের তিনতলা থেকে 'পড়ে গিয়ে' স্বপ্নদ্বীপের রহস্যমৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামল বগুলার বাসিন্দারা। শুক্রবার ঘটনার প্রতিবাদে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল নামে নদিয়া জেলার বগুলায়। শুক্রবার সকাল ১১ টায় বগুলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং পাড়া-প্রতিবেশী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ।
অন্যদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্র স্বপ্নদীবের বাবা রমাপ্রসাদ কুণ্ডুর সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বপ্নদীপের বাবার অভিযোগ তাঁর ছেলে ব়্যাগিংএর শিকার। পুলিশ সূত্রের খবর তিনি ব়্যাগিংএর কথাও বলেছেন অভিযোগে। কারণ স্বপ্নদীপ তাঁর মাকে ফোন করে বলেছিলেন, তাঁর খুব ভয় করেছে। তবে কি নিয়ে তাঁর ভয় করছে তা অবশ্য জানাননি। সেই কারণে কুণ্ডু পরিবারের মধ্যে ব়্যাগিংএর সম্ভবনা দাঁনা বাঁধছে। সূত্রের খবর মুখ্যমন্ত্রী স্বপ্নদীপের বাবাকে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর স্বপ্নদীপের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে স্বপ্নদীপের। তাঁর মাথার বাঁ দিকের হাড়ে চিড় ধরেছে। মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাঁ দিকের পাঁজরের হাড়ও ভেঙেছে। শরীরের ভিরতের আঘাত ছিল গুরুতরয ভেঙে দিয়েছিল কোমরও। সূত্রের খবর স্বপ্নদীপের শরীরে মদ্যপানের কোনও নমুনা পাওয়া যায়নি। সাধারণ খাবার খেয়েছে বলেও জানা গেছে।
নদিয়ার বগুলার বাসিন্দা স্বপ্নদীপ। মাত্র দুই দিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। বুধবার রাতে মেন হোস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে যায়। দ্রুত উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাই তাঁকে কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয় স্বপ্নদীপের। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তিনি রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ হোস্টেলের নিচে ছিলেন। ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ শুনতে পান। ছুটে যান ঘটনাস্থলে। তখনই দেখতে পান স্বপ্নদীপ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দ্রুত সেখানে প্রচুর ছাত্র উপস্থিত হয়। তারা সকলে মিলে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় ছাত্রকে উদ্ধার করে। নিয়ে যায় হাসপাতালে। দ্রুত চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাঁকে।
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ফেসবুক পোস্টে কড়া সমালোচনা করলেন তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কুণাল চট্টোপাধ্যায়। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন,'একটি প্রথম বর্ষের ছাত্র র্যাগিংয় এর শিকার হয়ে একটু আগে মারা গেছে। আমার মনে পড়ে, র্যাগিংয় সত্যিই র্যাগিংয় কিনা, সেটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দিয়ে ঠিক করতে হবে, এই কথা বলে প্যামফ্লেট প্রকাশ করে ঐ সব কাজের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে চাওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর পর নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা অনেকেই করবে। যখন র্যাগিংয়, যৌন হয়রানি, জাত তুলে অপমান, এসব নিছক ইউনিয়ন দখলের রাজনীতিতে পরিণত হয়, "আমার পক্ষ" অভিযুক্ত হলে তাকে বাঁচানো প্রধান কাজ হয়, তখন এসব নিয়ে গালভরা নৈতিক কথা বলে আর লাভ নেই।'