এই মুহূর্তে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের পিজেবি অডিটোরিয়ামে, 'ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’-এর ডাকে চলছে গণ-কনভেনশন। শনিবার, ২৬ অক্টোবর দুপুরবেলায় কনভেনশনের ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তারর।
এই কনভেনশনের শুরুতেই স্লোগান ওঠে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।'
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে অন্যতম কিঞ্জল বলেন, “আজকে আমাদের এই কনভেনশনে যারা এসেছেন, তাদের সকলকে আমি 'ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’-এর তরফ থেকে প্রণাম আনাই। আজ অনেকদিন হয়ে গেল, আমাদের আন্দোলনের। এই আরজি করে ঘটে যাওয়া সেই নৃশংস নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পেয়েছি বিগত কয়েকদিনে। আর আজকে এই জনসমাগম। একটা কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই, আমাদের প্রতিটা কর্মসূচিতেই বাধা এসেছে। কিন্তু আমরা লড়াই থেকে পিছু হটে আসিনি। আরজি করে এর আগে কোনও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না। যারা বলছেন, আরজি করে নতুন করে থ্রেট কালচারের জন্ম নিচ্ছে, তাদের বলতে চাই যে, সেটা হলে এত সাধারণ মানুষ এখানে একত্রিত হতে পারত না।"
তিনি আরও যোগ করেন, “মানুষের সময় এসেছে পক্ষ নেওয়ার। আপনাদেরই ঠিক করতে হবে যে, আপনি প্রতিবাদ এবং ন্যায়ের পথে থাকবেন? নাকি থ্রেট কালচারের পথে থাকবেন?"
জুনিয়র ডাক্তাররা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
তাঁর কথায়, “আমি একজন আন্দোলনের কর্মী হিসেবে দেখেছি, আজ কলকাতার জনগণ মিছিল খুঁজে নিচ্ছে। মোড়ে মোড়ে স্লোগান উঠছে। প্রতিটা মানুষ তাঁর নিজের নিজের এলাকায় বিচার চাইছে। কারণ, সে নিজেও ন্যায় বিচার পাচ্ছে না কোথাও কোথাও। যে মানুষটা আমাদের আন্দোলন মঞ্চে এসে পাখা দিয়ে হাওয়া করেছে, সেই আমাদের আন্দোলনে শামিল। এটাই তাঁর প্রতিবাদের ভাষা। আমাদের আন্দোলন একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পেরেছে।"
অনিকেত জানান, “আরজি করের বুকে ঘৃণ্য রাজনীতি চলত। সেই অচলায়তন আমরা কাটিয়ে দিতে পেরেছি। ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে যেইরকম সম্পর্ক রাখা উচিৎ, সেটাই আমরা চেষ্টা করছি। আমরা, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ আরজি করে একটী সুস্থ এবং গণতান্ত্রিক ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আর নবান্নের প্রথম মিটিং-এর যদি লাইভ স্ট্রিমিং হত, তাহলে আপনারা আরও অনেক কিছুই জানতে পারতেন। আমরা চাইছি কমিটির মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার। সিবিআই-এর প্রাইমারি চার্জশিট আর পুলিশের মতোই কার্বন-কপি। পুলিশ এবং কর্তৃপক্ষের এই উদাসীনতা আমাদের রাজপথে আসতে বাধ্য করেছে। আপনারা যেভাবে পাশে থেকেছেন, তা আমাদের অনেকটাই জোর বাড়িয়ে দিয়েছে। একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাঁচাতে কেন এত তৎপর সরকার? আমরা এখনও মনে করি যে, এই ঘটনা একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। তাহলে চার্জশিটে সেইরকম কিছু কেন দেখা যাচ্ছে না?”
তিনি বলছেন, “মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের লড়াই লড়ে নেবে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। আমরা নাগরিক সমাজকেও এই লড়াইতে আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা যেখানে যেখানে কাজ করছেন, সেখানেও যদি আপনাদের স্বাধিকার ভঙ্গ হয়, রুখে দাঁড়ান। এই লড়াই আমাদের-আপনাদের সবার। সুস্থ এবং স্বাভাবিক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের এই লড়াই।"
দেবাশিস বলেন, “আমরা একসাথে এই লড়াই লড়ব। আমরা বিশ্বাসই করতে পারিনি যে, এইরকম ঘটনা ঘটতে পারে। একটা ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন। বহু সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। গত ১৪ অগাস্ট, রাতের হামলার কিনারা আজও হয়নি। ঠিক যেইরকম গত ৯ অগাস্টের ঘটনার কিনারাও হয়নি। আসলে ১৪ অগাস্ট, রাতে হামলা করা হয়েছিল আন্দোলনকে থামানোর জন্য। মারাত্মকভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছিল। আমরা লড়াই থেকে একটুও দূরে সরে আসেনি। এই গণ-কনভেনশন চলাকালীন একটা ভুঁইফোড় সংগঠন তৈরি হয়েছে, যারা নিজেরাই থ্রেট কালচারের সঙ্গে যুক্ত। যারা একেকজন নটোরিয়াস ক্রিমিনাল, শাসকদলের ছত্রছায়ায় থেকে থ্রেট সিন্ডিকেট চালায়। তারা আজকে নাকি একটা নতুন সংগঠন বানিয়ে প্রেস মিট করছে।"
তাঁর কথায়, “ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে আন্দোলন। সেখান থেকে সেই থ্রেট কালচারের মাথাদের সরাতে হবে। আরেকটা ‘অভয়া’-র মতো ঘটনা যাতে না ঘটে। আকে সন্দীপ ঘোষদের সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে আবার আজকে প্রেস বাইট দিচ্ছে, এই দিন দেখতে হবে ভাবিনি। অত্যন্ত লজ্জার একটা দিন। আমরা মনে করি, এই লড়াইকে আরও তীব্রভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো। অনেকেই বলছেন, আন্দোলন কি শেষ হয়ে গেল? না, হয়নি। রাজপথেও আমরা লড়ব। সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে আমরা খুশি নই। আগামীদিনে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটা প্রান্তে এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা আইনি পথেও লড়ব, রাজপথেও লড়ব। প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যেভাবে আমাদের পাশে থেকেছেন, সেইভাবেই একসঙ্গে আমাদের দাবিগুলি ছিনিয়ে আনতে হবে।"
তিনি বলেন, “যেদিন কয়েকজন মিলে ডাক দিয়েছিল রাত দখলের। মানুষ সাড়া দিয়েছিল। এটা শুধু ‘অভয়া-র’ বিচার নয়, বিচার সমগ্র নারী জাতির। প্রাপ্ত মর্যাদার লড়াই। কেউ কেউ বলছেন, রাত জেগে নাকি তারা মদ খেয়েছেন। আমি তাদের প্রশ্ন করতে চাই, আপনি কি জেগে ছিলেন নাকি? নাহলে দেখলেন কীভাবে? এগুলো হচ্ছে ভয়ের বহিঃপ্রকাশ।আমি মনে করি, এই আন্দোলন সফল। আগামীদিনে বৃহত্তর রুপ নেবে। মানুষের চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।"
যে সমস্ত জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন করেছিলেন, তারাও এদিন বক্তব্য রাখেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের কথায়, “অভয়া'-র বিচারের ছাবিতে আমরা এখনও রাস্তাতেই আছি।"
তারা বলেন, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’-এর কোনও মুখ নেই, আছে হৃদয়।"
তাঁর কথায়, “একটি সিস্টেম, যেটি আদৌ জনগণকে আদৌ পরিষেবা দিতে চায় কিনা। নাকি জনগণের থেকে শুধু শোষণই করতে চায়? দুয়ারে সরকারের নামে যে ভাঁড়ামো চলে, তা আজ পরিষ্কার।"
সেইসঙ্গে, একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিও মঙ্গলবার এই গণ-কনভেনশনে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা করেন।