কয়েকদিন আগেই দলীয় মুখপত্রে বিজেপি এবং তৃণমূলকে একই পংক্তিতে বসিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একইভাবে সমালোচনা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
শেষ দফার ভোটের আগে অবশ্য বিজেপি বিরোধিতার জন্য নিজের পূর্বসূরীর প্রশংসাই শোনা গেল বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। ভোট প্রচারে বেরিয়ে বিজেপি-র প্রতি বুদ্ধদেবের মনোভাবের প্রশংসা করে মমতা বলেন, "সব সিপিএম নেতা খারাপ নয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিজেপি বিরোধী অবস্থাব নিয়েছিলেন।" দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরের সভা থেকে একইসঙ্গে বিজেপি-র সুবিধে করে দেওয়ার জন্য সিপিএমের বর্তমান নেতৃত্বকে আক্রমণ করলেন মমতা। তৃণমূল নেত্রীর এই বার্তাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ সিপিএম।
রবিবার বারুইপুরের জনসভায় রাজ্যে বিজেপি-র বাড়বাড়ন্তের জন্য সিপিএমের বর্তমান নেতাদের একাংশকে দায়ী করেন তৃণমূল নেত্রী। এই প্রসঙ্গেই টেনে আনেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসুর কথা। মমতা বলেন, "আমি মনে করি না সিপিএমের সব লোক খারাপ। আমায় যদি খেউ জিজ্ঞেস করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কি বিজেপি-র সমর্থক? আমি বলব না। মিথ্যে কথা বলে কারো বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে তো লাভ নেই।" এর পরেই বুদ্ধদেবের আমলে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, নেতাই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, "উনি তো আমার বন্ধু নন, সবথেকে বেশি মার তো ওনাদের আমলেই খেয়েছি। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই সবই তো ওনাদের আমলে। কিন্তু উনি বিজেপি-র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। জ্যোতি বসু বেঁচে থাকলেও হয়তো তাই করতেন।"
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা জ্যোতি বসুর সঙ্গে প্রবল বিরোধিতা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তাঁদের সঙ্গে সৌজন্যের রাজনীতিই করেছেন মমতা। জ্যোতি বসু অবসর নেওয়ার পরে বিরোধী নেত্রী হিসেবে তাঁর বাড়ি গিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে একাধিকবার অসুস্থ বুদ্ধদেবকে দেখতে তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ছুটে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। আবার কখনও নিজে খবর পেয়ে কলকাতা পুরসভাকে দিয়ে দ্রুত বুদ্ধদেবের ফ্ল্যাটের জরুরি মেরামতির উদ্যোগ নিয়েছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। অতীতের যাবতীয় বিরোধিতা ভুলে এই রাজনৈতিক সৌজন্য বার বারই দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে ভোটের প্রচারে বুদ্ধদেবের বিজেপি বিরোধিতার প্রসঙ্গ তুলে আসলে তিনি বর্তমান সিপিএম নেতৃত্বকেই চাপে ফেলতে চেয়েছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের। কারণ বুদ্ধদেব এবং জ্যোতি বসুর প্রশংসা করেই মমতা সিপিএমের বর্তমান নেতাদের আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ সিপিএমের এখনকার নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপি-র আঁতাঁত রয়েছে। সিপিএমের এই নেতাদের "বিজেপি-র পকেটের কমরেড" বলেও কটাক্ষ করেন মমতা। এ রাজ্যে বাম ভোট ব্যাঙ্কের ক্ষয় থেকে যে বিজেপি লাভবান হচ্ছে তা মমতা ভালই জানেন। বিজেপি-কে রুখতে সিপিএম নেতারাও যাতে আরও কোমর বেঁধে নামেন, এমন বার্তায় সম্ভবত সেই কাজটাই করতে চাইলেন মমতা।
যদিও মমতার এই বার্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না সিপিএম। বুদ্ধের প্রশংসা করা প্রসঙ্গে মমতাকে পাল্টা জবাব দিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা একা একা রাজনীতি করেননি. দলকে সঙ্গে নিয়ে চলতেন. এরাজ্যে তাঁরা বিজেপিকে ঢুকতে দেননি, সেই বিজেপি-কে উনি পশ্চিমবঙ্গের চৌকাঠ পেরিয়ে ভিতরে নিয়ে এসেছেন।"