এদের নেই লক ডাউন , নেই করোনার আতঙ্ক! সব কিছু ভুলে প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রামের গাছের ডালে ডালে হাজির হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির দল। আর তাদের কলতানে গ্রাম হয়ে উঠেছে মুখরিত। বছরের পর বছর ধরে এই পাখির দল হাজির হয় বাঁকুড়ার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে। গাছে বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে আর বাচ্চাদের বড় করে আবার ফিরে যায় আপন দেশের ঠিকানায়। গ্রামের মানুষ বছরভর অপেক্ষায় থাকেন 'অতিথি'দের।
বাঁকুড়ার ২নং ব্লকের বড়চাকা গ্রাম। গাছ গাছালি ঘেরা অপরূপ শোভায় মোড়া নিস্তব্দ আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম এই বড়চাকা। গ্রামের শান্ত প্রকৃতির টানেই বছরের পর বছর ছুটে আসে পরিযায়ী পাখির দল। গ্রাম ঢুকলেই কানে আসবে পাখির কলতান। গাছে গাছে ঝাঁক ঝাঁক পাখি ভরিয়ে তুলবে মনকে। করোনা আতঙ্কে এমনিতেই মানুষের মন ভালো নেই তবে গ্রামের মানুষের মন ভরিয়ে তুলেছে পরিযায়ী পাখির দল। গ্রামে প্রবেশ করলেই নজরে আসবে আকাশে পাখিদের ডানা মিলে উড়ে বেড়ানো ছবি। গাছে গাছে আস্তানা গেড়ে আছে শামুখখোল পাখির দল। গ্রামবাসীরা এদের ঘোঙ্গেল নামেই ডাকে। লকডাউন পরিস্থিতিতে ওরাই গ্রামের অতিথি। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে ওরা হাজির হয় এই গ্রামে। এ বছর তা ব্যাতিক্রম হয়নি ভরা লকডাউনে! গ্রামের গাছে গাছে বাসা বেঁধে প্রতিবেশি হয়ে থাকে বেশ কয়েক মাস। ওদের কেউ বিরক্ত করে না এবং কাউকে বিরক্ত করেতেও দেয় না গ্রামের মানুষজন। এখানেই ডিম দেয় এবং বাচ্চা বড় করে আবার আশ্বিন মাসে ওরা এই গ্রাম ছেড়ে ফিরে যায় নিজের ঠিকানায়। প্রায় ৫ মাসের অতিথি এই পরিযায়ী পাখির দল। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে এই গ্রামেই এসে হাজির হয় পাখির দল। গ্রামবাসীদের কথায় বহু বছর ধরেই তাঁদের গ্রামে আসছে পরিযায়ী পাখিরা। গ্রামের গাছের ডালে ওদের বসবাস। স্থানীয় পুকুর, জমি থেকে মাছ ও শামুক ওদের বেশ পছন্দের।
করোনা পরিস্থিতিতে গ্রাম বহিরাগতেরা আনাগোনা নেই, বন্ধ আত্মীয় কুটুম্বের আসা যাওয়াও।তাঁরা না এলেও পাখির দল গ্রামে এসেছে গ্রামের মানুষের অতিথি হয়ে। প্রতি বছর আসে এবছর হাজির তাঁরা। বাড়ির পাশেই গাছের ডালে ডালে এরা বাসা বেঁধে আছে পরিবারের সদস্য হয়েই। দিনভর পাখির কলতান আর তাঁদের দেখেই দিন পেরিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মানুষের সময়। যখন আসে তখন ভালো লাগে আবার চলে গেলে গাছ ফাঁকা হয়ে যায় মন খারাপ লাগে গ্রামের মানুষের।